শুক্রবার শিব চতুর্দশী মেলা শুরু, অনুষ্ঠান বর্জণের ঘোষনা

আপডেট: ২৩ ফেব্রুয়ারী ২০১৭ ১১:০৪ অপরাহ্ন

7
নির্দেশ বড়ুয়া, সীতাকুণ্ড :: কলি যুগের মহা তীর্থ নামে খ্যাত চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডের চন্দ্রনাথ ধামে ঐতিহ্যবাহি তিন দিন ব্যাপি শিব চতুর্দশী মেলা শুরু হবে শুক্রবার। ২৪-২৬ ফেব্রুয়ারি এ মেলা অনুষ্ঠিত হবে।

তবে তীর্থ কমিটির একাংশ প্রশাসনের অসহযোগিতার অভিযোগ তুলে শিব চতুর্দশীর সকল অনুষ্ঠান বর্জণের ঘোষনা দিয়েছেন তীর্থ কমিটির সাধারণ সম্পাদক এড. সুকময় চক্রবর্তী।

তবে প্রশাসনের কর্মকর্তারা বলছেন স্বার্থানেশ্বী ব্যক্তিরা ফায়দা লুটতে না পারায় মেলা সম্পর্কে অপপ্রচার চালাচ্ছেন। মেলা সুষ্টভাবে সম্পন্ন করার সব প্রস্তুতি সম্পন্ন করা হয়েছে বলে দাবি করেন সীতাকুণ্ড উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নাজমুল ইসলাম ভূইয়া।

এদিকে ঐতিহ্যবাহি শিব চতুর্দশী ও দোল পূর্ণিমা মেলা একেবারে দ্বারপ্রান্তে এসে গেলেও তীর্থ কমিটিতে স্থানীয় প্রতিনিধি রাখা নিয়ে সাম্প্রতিক সময়ে যে দ্বন্ধ সৃষ্টি হয়েছিলো তা অবসান হলেও স্রাইন (তীর্থ) কমিটির কার্যালয়ে এলাকাবাসীর লাগিয়ে দেওয়া তালা ঝুলছে এখনো। ফলে আসন্ন মেলা আদৌ সুষ্ঠভাবে সম্পন্ন হবে কি না তা নিয়েও সংশয় সৃষ্টি হয়েছে। এছাড়া মেলায় দোকান বরাদ্দ দেওয়া নিয়ে মেলা কমিটির সাথে শুরু হওয়া দ্বন্ধ সোমবার শেষ হয়েছে। জেলা প্রশাসকের গঠন করে দেয়া ১১ সদস্যের কমিটি মেলার দোকান বরাদ্দ দিচ্ছেন।

এর পূর্বে এই দোকানগুলো স্রাইন কমিটি বরাদ্দ দিতেন। জেলা প্রশাসকের গঠন হরে দেয়া দোকান বরাদ্দ কমিটির আহবায়ক সহকারী কমিশনার ভূমি ও নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেট রুহুল আমীন বলেন, স্রাইন কমিটির চারজন সদস্যসহ ১১ সদস্যের কমিটির সিদ্ধান্ত মোতাবেক মেলা কমিটি দোকান বরাদ্দ দেয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে।

তবে এই সিদ্ধান্ত স্রাইন কমিটির সম্পাদক এড সুকময় চক্রবর্তী মানছেন না বলে জানিয়েছেন। প্রায় বৌদ্ধদের চৈত্র সংক্রান্তি মেলা থেকে হিসাব করতে গেলে পরবর্তীতে শিব চর্তুদশী মেলা রূপ নেয়ার পর থেকে তিনশ বছরের প্রাচীন ঐতিহ্যবাহি এ মেলাকে ঘিরে প্রতিবছর সীতাকুণ্ড চন্দ্রনাথ ধাম মহা মনিষিদের মিলন ক্ষেত্রে পরিণত হয়। জাতি ধর্ম নির্বিশেষে পৃথিবীর বহু দেশের পূণ্যার্থী ও দর্শনার্থীরা মেলার দিনগুলোতে এখানে এসে সমবেত হন। শিব চতুর্দশী মেলার ৩দিন এখানে ২৫/৩০ লাখ পূণ্যার্থী আগমনের রেকর্ডও আছে। বিশেষত দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি শান্ত থাকলে মেলায় উপচে পড়া ভিড় সৃষ্টি হয়। এবারো ব্যতিক্রম হবে না বলেই ধারণা সংশ্লিষ্টদের।

সীতাকুণ্ড মেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক সীতাকুণ্ড পৌরসভার প্যানেল মেয়র হারাধন চৌধুরী বাবু জানান, এবার শিবচতুদর্শী মেলা হবে ২৪-২৬ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত আর দোল পূর্ণিমা মেলা চলবে ১২-১৪ মার্চ। শিব চতুর্দশীর পূণ্য তিথি শুরু হবে ২৪ ফেব্রুয়ারি শুক্রবার রাত ৯টা ২৫ মিনিটে। আর ২৫ ফেব্রুয়ারি শনিবার রাত ৯টা ৩৩ মিনিটে এ পূণ্য তিথি ছেড়ে যাবে। এরপর পূর্ব পুরুষদের উদ্দেশ্যে শ্রাদ্ধ-তর্পণ শুরু হবে। চলবে রবিবার রাত ৯টা ১০ পর্যন্ত।

মেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক হারাধন চৌধুরী বাবু বলেন, মেলার এ দিনগুলোর মধ্যে শিব চতুর্দশীর তিথিতে এখানে লাখ লাখ তীর্থযাত্রীর আগমন ঘটবে। মেলা কমিটির কর্মকর্তা হিসেবে এসব যাত্রী যেন তীর্থ দর্শন শেষে নিরাপদে ফিরে যেতে পারেন সেজন্য তারা প্রস্তুতি নিচ্ছেন।

এদিকে বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে, তীর্থ কমিটির কতিপয় নেতৃবৃন্দের কারণে সীতাকুণ্ডে হিন্দু সমাজ এখন দুই ধারায় বিভক্ত। এদের একটি অংশের দাবি তীর্থ কমিটিতে স্থানীয়দের মনোনীত এক চুতুর্থাংশ প্রতিনিধি অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। এই দাবিতে তারা তীর্থ কমিটির অফিস ও বিভিন্ন কক্ষে তালা লাগিয়ে বন্ধ করে দিয়েছেন।

শুধু তাই নয়, তীর্থ কমিটির নেতাদের রাহুর সাথে তুলনা করে তীর্থ কমিটিকে রাহুর কবল থেকে রক্ষার দাবি নিয়ে সর্বত্র পোস্টারিং করেছে তারা। ¯্রাইন (তীর্থ) কমিটির সাধারণ সম্পাদক দাবিদার এডভোকেট সুখময় চক্রবর্তী বলেন. প্রশাসন অসহযোগিতা করছে।

এ ছাড়া মেলায় দোকানবরাদ্দসহ সব কিছু তারা নিয়ন্ত্রণে নিতে চাচ্ছে। ফলে বাধ্য হয়ে তারা শিব চতুর্দর্শী উপলক্ষ্যে অনুষ্ঠিত সকল প্রোগ্রাম বর্জণের ঘোষনা দিয়েছে। অপর অংশের সাধারণ সম্পাদক দাবিদার এড. চন্দন দাশ এর মোবাইলে ফোন করলে তিনি পরে কথা বলবেন বলে জানান।

উপস্থিত সীতাকুণ্ড উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নাজমুল ইসলাম ভূইয়া বলেন, জেলা জর্জ যাকে সাধারণ সম্পাদক হিসেবে প্রত্যয়ন দেবেন তাকেই সাধারণ সম্পাদক মানা হবে।

শিব চতুর্দশীর মেলার সকল অনুষ্ঠানিকতা সম্পূর্ণ রূপে সম্পাদন করতে সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে। কিছু স্বর্থবাদী ব্যক্তি স্রাইনকে ব্যবহার করে নিজেদের ফায়দা লুটার চেষ্ঠায় ছিলো। তা নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্ঠার করা হচ্ছে। এ কারণেই তারা মেলা সম্পর্কে অপপ্রচার চালাচ্ছেন বলে দাবি করেন তিনি।

সিটিজিসান.কম/রবি

Print This Post Print This Post