নিজস্ব প্রতিবেদক | ইসলামী ব্যাংক টেকনাফ শাখার নয়জন গ্রাহকের চেকবই জালিয়াতি করে বিভিন্ন সময়ে হাতিয়ে নেয়া হয়েছে ৬৫ লাখ টাকা। আর নেপথ্যে ছিলেন ওই শাখারই ৩ কর্মকর্তা। যারা টাকা আত্মসাতের মামলার খেয়ে পুলিশের হাতে ধরা পড়ে এখন খাটছেন জেল। এবার ওই ৩ কর্তার বিরুদ্ধে মামলা ঠুকেছে দুর্নীতি দমন কমিশনও (দুদক)।
বুধবার (২২ নভেম্বর) দুদক কক্সবাজার সমন্বিত জেলা কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক রিয়াজ উদ্দিন বাদী হয়ে এ মামলাটি দায়ের করেন।
মামলার আসামিরা হলেন—ইসলামী ব্যাংক টেকনাফ শাখার বরখাস্তকৃত অফিসার ঈমাম হোসেন (৩৭), জুনিয়র অফিসার আজিজ আহমেদ জাবেদ (৩০) এবং মোহাম্মদ শাহেদুল ইসলাম (৩১)।
তাদের মধ্যে ঈমাম হোসেন টেকনাফের হৃলার দমদমিয়া এলাকার টান্ডা মিয়ার পুত্র, আজিজ আহমেদ জাবেদ চট্টগ্রামের পটিয়া উপজেলার জঙ্গলখাইনের ইউনিয়ের উজিরপুর গ্রামের মীর আহমেদের পুত্র এবং মোহাম্মদ শাহেদুল ইসলাম একই উপজেলার হাবিলাসদ্বীপ ইউনিয়নের চরকানাই এলাকার শেখ আমিনুল হকের পুত্র।
অনুসন্ধানকালে দেখা গেছে, এই ৩ কর্মকর্তা মিলে চলতি বছররের আহমেদ হোসেন নামে এক গ্রাহকের অ্যাকাউন্ট থেকে ২০১৩ সালের ২৮ আগস্ট নগদ উত্তোলনের মাধ্যমে এক লাখ, চলতি বছরের ৩ জানুয়ারি নগদ উত্তোলনের মাধ্যমে ৫০ হাজার, ৩০ জানুয়ারি ফান্ড ট্রান্সফারের মাধ্যমে ৩ লাখ টাকা হাতিয়ে নেয়।
এছাড়া, চলতি বছরের ২৮ ফেব্রুয়ারি জামাল হোসেন নামে এক গ্রাহকের অ্যাকাউন্ট থেকে নগদ ৩ লাখ ৫০ হাজার, ১৭ জুলাই মোহাম্মদ হোসেন নামে এক গ্রাহকের অ্যাকাউন্ট থেকে নগদ উত্তোলনের মাধ্যমে ১ লাখ ৫০ হাজার, ২৫ সেপ্টেম্বর আনোয়ারা বেগম নামে এক গ্রাহকের অ্যাকাউন্ট থেকে ফান্ড ট্রান্সফারের মাধ্যমে ৮ লাখ, একইদিন ফান্ড ট্রান্সফারের মাধ্যমে নুর মোহাম্মদ নামে এক গ্রাহকের অ্যাকাউন্ট থেকে ৮ লাখ, মং ক্যুয়া চান নামে এক গ্রাহকের অ্যাকাউন্ট থেকে ফান্ড ট্রান্সফারের মাধ্যমে ২০ লাখ, জয়নাল আবেদীন নামে এক গ্রাহকের অ্যাকাউন্ট থেকে একই পদ্ধতিতে ৭ লাখ ৫০ হাজার, ২৭ সেপ্টেম্বর লাল মিয়া নামে এক গ্রাহকের অ্যাকাউন্ট থেকে নগদ উত্তোলনের ৩ লাখ ২২ হাজার, ২ অক্টোবর আবদুল গফুর নামে এক গ্রাহকের অ্যাকাউন্ট থেকে নগদ উত্তোলনের ৪ লাখ ৩৫ হাজার এবং ৯ অক্টোবর একই পদ্ধতিতে একই গ্রাহকের অ্যাকাউন্ট থেকে ১ লাখ ৭৮ হাজার টাকাসহ মোট ৬২ লাখ ৩৫ হাজার টাকা হাতিয়ে নেন তারা।
গত ৬ নভেম্বর ইসলামী ব্যাংক টেকনাফ শাখায় একজন গ্রাহক তার হিসাবের স্থিতিতে গরমিল পাওয়ায় শাখা ব্যবস্থাপক মুহাম্মদ আলতাফ হোসেন এর কাছে মৌখিক অভিযোগ করেন। উক্ত মৌখিক অভিযোগের ভিত্তিতে তার হিসাবের স্থিতির গরমিলের ব্যাপারে যাচাই-বাছাই করে সত্যতা পান তিনি। একইভাবে ১২ নভেম্বর অন্য এক গ্রাহক তার হিসাবের স্থিতির ব্যাপারেও একই অভিযোগ করেন। সেই অভিযোগেরও শাখা ব্যবস্থাপক যাচাই-বাছাই করে সত্যতা পান।
অভিযোগ যাচাই-বাছাইকালে শাখা ব্যবস্থাপক ওই শাখার অফিসার ঈমাম হোসেন, জুনিয়র অফিসার আজিজ আহমেদ জাবেদ এবং মোহাম্মদ শাহেদুল ইসলামের সম্পৃক্ততা পান। তারা ব্যাংক প্রদত্ত নিজ নিজ আইডি ব্যবহার করে পরস্পর চেক জালিয়াতির মাধ্যমে ইস্যু করে এবং চেকগুলো ব্যবহার করে নগদ ও স্থানান্তরের মাধ্যমে বিভিন্ন গ্রাহকের হিসাব থেকে অবৈধভাবে টাকা উত্তোলন করেন।
তাদের সাথে সম্পর্কিত বিভিন্ন গ্রাহকের হিসাবে সেই টাকাগুলো স্থানান্তর করেন। বিষয়টি ব্যবস্থাপক নিশ্চিত হওয়ার পর দ্রুত আঞ্চলিক প্রধানকে অবহিত করে নিরীক্ষার ব্যবস্থা করেন।
সর্বমোট বিভিন্ন গ্রাহকের হিসাব থেকে সর্বমোট ৫৮ লাখ ৩৫ হাজার টাকা অননুমোদিত উত্তোলন করা হয়। একই ভিত্তিতে ব্যাংকের কর্মকর্তা অভিযুক্ত ইমান হোসেনকে ব্যবস্থাপক জিজ্ঞাসাবাদ করলে তিনি ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে লিখিত বক্তব্য প্রদান করেন। একইসাথে অভিযোগকারী দুইজন গ্রাহকের হিসাবের গরমিলের ১৩ লাখ টাকা ব্যবস্থা করে তাদের অভিযোগ তাৎক্ষণিক নিষ্পত্তি করেন ব্যবস্থাপক।
ইসলামী ব্যাংক টেকনাফ শাখার বরখাস্তকৃত অফিসার ঈমাম হোসেনের লিখিত বক্তব্য অনুযায়ী, তিনি নিজেই ৩০ লাখ টাকা, আজিজ আহমেদ জাবেদ ৩০ লাখ টাকা এবং মোহাম্মদ শাহেদুল ইসলাম ৫ লাখ টাকা পারস্পরিক যোগসাজশের মাধ্যমে ভাগ-ভাটোয়ারা করে নিয়েছেন।
অর্পিত ক্ষমতার অপব্যবহারপূর্বক উক্ত শাখার ৯ জন গ্রাহকের হিসাব হতে ৬২ লাখ ৩৫ হাজার টাকা অবৈধভাবে উত্তোলনপূর্বক অপরাধজনক বিশ্বাস ভঙ্গের মাধ্যমে আত্মসাৎ করে শাস্তিযোগ্য অপরাধ করায় দণ্ডবিধির ৪০৯/৪২০/৪৬৭/৪৬৮/৪৭১/১০৯ ধারাসহ ১৯৪৭ সনের দুর্নীতি প্রতিরোধ আইনের ৫(২) ধারায় আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হয়েছে।
মামলার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন দুদক কক্সবাজার সমন্বিত জেলা কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক রিয়াজ উদ্দিন।
তিনি বলেন, ‘মামলার তদন্তকালে অন্য কারো সংশ্লিষ্টতা পাওয়া গেলে বা ভিন্ন কোন তথ্য পাওয়া গেলে তা আমলে নেয়া হবে।’
সিএস
Print This Post