নিজস্ব প্রতিবেদক | প্রীতি লতা দেবী (৩৬)। দীর্ঘ পাঁচ বছর ৫ মাস ‘আমার বাড়ি আমার খামার’ প্রকল্প ও পল্লী সঞ্চয় ব্যাংক কক্সবাজার জেলার রামু শাখার মাঠ সহকারী পদে কর্মরত ছিলেন। তার দায়িত্ব ছিলো প্রকল্পের আওতায় গড়ে ওঠা বিভিন্ন সমিতির নিয়মিত সঞ্চয় জমা, গ্রাহকদের ঋণ বিতরণ ও বকেয়া ঋণ আদায় করা। এরপর গ্রাহকদের কাছ থেকে আদায় করা সঞ্চয়, আমানত ও ঋণের কিস্তি সংশ্লিষ্ট ব্যাংকে জমা দেওয়া।
কিন্তু তাকে পেয়ে বসে টাকার লোভ। আর সেই লোভ সংযত না করতে পেরে গ্রাহকদের প্রায় ২৭ লাখ টাকা মেরে খেয়েছেন ‘আমার বাড়ি আমার খামার’ প্রকল্প ও পল্লী সঞ্চয় ব্যাংকের সাবেক এই মাঠ সহকারী। এবার অনুসন্ধান শেষে টাকা আত্মসাতের প্রমাণ পাওয়ায় তার বিরুদ্ধে মামলা করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।
চলতি বছরের ৮ নভেম্বর দুদক কক্সবাজার সমন্বিত জেলা কার্যালয়ের উপসহকারী পরিচালক পার্থ চন্দ্র পাল বাদী হয়ে এ মামলাটি দায়ের করেন।
অভিযুক্ত প্রীতি লতা দেবী কক্সবাজার জেলার রামু উপজেলার ৮ নম্বর দক্ষিণ মিঠাছড়ি ইউনিয়নের পশ্চিম বোমাংখিল গ্রামের বাবুল কান্তি নাথের কন্যা।
তিনি ২০১৪ সালের ১৫ জানুয়ারি মাঠ সহকারী হিসেবে ‘আমার বাড়ি আমার খামার’ প্রকল্প ও পল্লী সঞ্চয় ব্যাংকের মাঠ সহকারী হিসেবে নিয়োগ পান। এরপর বিভিন্ন অনিয়মের কারণে ও টাকা আত্মসাতের প্রমাণ পাওয়ায় ২০১৯ সালের ২২ জুন তাকে বরখাস্ত করা হয়।
প্রীতি লতা দেবী ১৮টি গ্রাম উন্নয়ন সমিতির মোট ২৩৩ জন গ্রাহকের কাছ থেকে সঞ্চয়ের ২ লাখ ৩১ হাজার ৪৯০ টাকা ব্যাংকে জমা না দিয়ে আত্মসাৎ করেছেন। এছাড়া ওই ১৮টি সমিতি ও ২৩৩ জন গ্রাহকসহ আরও একটি সমিতির ১০৭ জন অর্থাৎ মোট ৩৪০ জন গ্রাহকের কাছ থেকে কিস্তি বাবদ ২৪ লাখ ৬৫ হাজার ৩৮৮ টাকা আত্মসাৎ করেছেন। অনুসন্ধান করে এসব টাকা আত্মসাতের প্রমাণও পেয়েছে দুদক।
দুদকের মামলার বিবরণে জানা যায়, মাঠ সহকারী হিসেবে কর্মরত থাকাকালে তিনি পূর্ব থোয়াকাটা গ্রাম উন্নয়ন সমিতি, পূর্ব বোমাংখীল গ্রাম উন্নয়ন সমিতি, জুমছড়ি গ্রাম উন্নয়ন সমিতি, বড়বিল গ্রাম উন্নয়ন সমিতি, বেলতলী গ্রাম উন্নয়ন সমিতি, উত্তর বোমাংখীল গ্রাম উন্নয়ন সমিতি, পশ্চিম বোমাংখীল গ্রাম উন্নয়ন সমিতি, মাঝিরকাটা গ্রাম উন্নয়ন সমিতি, থিমছড়ি গ্রাম উন্নয়ন সমিতি, বৃহত্তর জুমছড়ি গ্রাম উন্নয়ন সমিতি, দক্ষিণ থিমছড়ি গ্রাম উন্নয়ন সমিতি, দক্ষিণ থোয়াঙ্গাকাটা গ্রাম উন্নয়ন সমিতি, জাউসপাড়া গ্রাম উন্নয়ন সমিতি, উত্তর বড়বিল গ্রাম উন্নয়ন সমিতি, পশ্চিম জাউসপাড়া গ্রাম উন্নয়ন সমিতি, পূর্ব শাহমোড়া গ্রাম উন্নয়ন সমিতি, দক্ষিণ বড়বিল গ্রাম উন্নয়ন সমিতি এবং পূর্ব পাড়া গ্রাম উন্নয়ন সমিতির মোট ২৩৩ জন গ্রাহকের কাছ থেকে সঞ্চয়ের মোট ২ লাখ ৩১ হাজার টাকা আত্মসাৎ করেছেন।
ওই ১৮টি সমিতি এবং ২৩৩ জন গ্রাহকসহ তোয়াছাখালী গ্রাম উন্নয়ন সমিতির আরও ১০৭ জন গ্রাহকের কাছ থেকে ঋণের কিস্তি বাবদ নেওয়া ২৪ লাখ ৬৫ হাজার ৩৮৮ টাকা সংশ্লিষ্ট ব্যাংক হিসাবে জমা না দিয়ে নিজেই আত্মসাৎ করেছেন সাবেক এই মাঠ সহকারী।
এ ঘটনায় অর্পিত ক্ষমতার অপব্যবহার ও অসদুদ্দেশ্যে প্রতারণার মাধ্যমে অপরাধমূলক বিশ্বাসভঙ্গ করে টাকা আত্মসাৎ করায় আসামির বিরুদ্ধে দুর্নীতি দমন প্রতিরোধ আইনের দন্ডবিধি ৪০৯ এবং ১৯৪৭-এর ৫(২) ধারায় অভিযোগ আনা হয়।
বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন দুদক কক্সবাজার সমন্বিত জেলা কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক রিয়াজ উদ্দিন। তিনি বলেন, ‘তদন্তকালে অন্য কারো সংশ্লিষ্টতা পাওয়া গেলে তা আমলে নেওয়া হবে।’
সিএস
Print This Post