নিজস্ব প্রতিবেদক | গ্রাহকের ৬৫ লাখ টাকা চেক জালিয়াতি করে আত্মসাত করা ইসলামী ব্যাংক পিএলসি’র টেকনাফ শাখার ৩ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে মামলার পর এবার ৩ দিনের রিমান্ডে চেয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক)। বর্তমানে তিনজন আসামিই কারাগারে রয়েছেন।
বুধবার (২২ নভেম্বর) কক্সবাজার সিনিয়র স্পেশাল জজ আদালতে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ও দুদক কক্সবাজার সমন্বিত জেলা কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক মো. নাছরুল্লাহ হোসাইন এ রিমান্ড আবেদন করেন।
আবেদনের প্রেক্ষিতে আদালত আগামী ২৯ নভেম্বর রিমান্ড শুনানির দিন ধার্য করেছেন। একইসাথে তাদের ৩ জনকে দুদকের দায়েরকৃত মামলায় গ্রেপ্তার (শ্যোন অ্যারেস্ট) দেখানোর আদেশ দিয়েছেন আদালত।
এর আগে গতকাল বুধবার দুদক কক্সবাজার সমন্বিত জেলা কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক রিয়াজ উদ্দিন বাদি হয়ে ইসলামী ব্যাংক টেকনাফ শাখার বরখাস্তকৃত অফিসার ঈমাম হোসেন (৩৭), জুনিয়র অফিসার আজিজ আহমেদ জাবেদ (৩০) ও মোহাম্মদ শাহেদুল ইসলামের (৩১) বিরুদ্ধে নিজ কার্যালয়ে মামলা করেন।
বিষয়টি নিশ্চিত করে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ও দুদক কক্সবাজার সমন্বিত জেলা কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক মো. নাছরুল্লাহ হোসাইন জানান, টাকা আত্মসাতের ঘটনায় আসামিদের সম্পৃক্ততা নির্ধারণ ও আরও কোন অবৈধ লেনদেন আছে কিনা—এ বিষয়ে জানাসহ এ বিষয়ে অন্য কারো সংশ্লিষ্টতা আছে কিনা তা উদ্ঘাটনের লক্ষে আসামিদেরকে রিমান্ডে এনে জিজ্ঞাসাবাদ প্রয়োজন।
গত ৬ নভেম্বর ইসলামী ব্যাংক টেকনাফ শাখায় একজন গ্রাহক তার হিসাবের স্থিতিতে গরমিল পাওয়ায় শাখা ব্যবস্থাপক মুহাম্মদ আলতাফ হোসেন এর কাছে মৌখিক অভিযোগ করেন। উক্ত মৌখিক অভিযোগের ভিত্তিতে তার হিসাবের স্থিতির গরমিলের ব্যাপারে যাচাই-বাছাই করে সত্যতা পান তিনি। একইভাবে ১২ নভেম্বর অন্য এক গ্রাহক তার হিসাবের স্থিতির ব্যাপারেও একই অভিযোগ করেন। সেই অভিযোগেরও শাখা ব্যবস্থাপক যাচাই-বাছাই করে সত্যতা পান।
অভিযোগ যাচাই-বাছাইকালে শাখা ব্যবস্থাপক ওই শাখার অফিসার ঈমাম হোসেন, জুনিয়র অফিসার আজিজ আহমেদ জাবেদ এবং মোহাম্মদ শাহেদুল ইসলামের সম্পৃক্ততা পান। তারা ব্যাংক প্রদত্ত নিজ নিজ আইডি ব্যবহার করে পরস্পর চেক জালিয়াতির মাধ্যমে ইস্যু করে এবং চেকগুলো ব্যবহার করে নগদ ও স্থানান্তরের মাধ্যমে বিভিন্ন গ্রাহকের হিসাব থেকে অবৈধভাবে টাকা উত্তোলন করেন।
তাদের সাথে সম্পর্কিত বিভিন্ন গ্রাহকের হিসাবে সেই টাকাগুলো স্থানান্তর করেন। বিষয়টি ব্যবস্থাপক নিশ্চিত হওয়ার পর দ্রুত আঞ্চলিক প্রধানকে অবহিত করে নিরীক্ষার ব্যবস্থা করেন। সর্বমোট বিভিন্ন গ্রাহকের হিসাব থেকে সর্বমোট ৫৮ লাখ ৩৫ হাজার টাকা অননুমোদিত উত্তোলন করা হয়। একই ভিত্তিতে ব্যাংকের কর্মকর্তা অভিযুক্ত ইমান হোসেনকে ব্যবস্থাপক জিজ্ঞাসাবাদ করলে তিনি ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে লিখিত বক্তব্য প্রদান করেন। একইসাথে অভিযোগকারী দুইজন গ্রাহকের হিসাবের গরমিলের ১৩ লাখ টাকা ব্যবস্থা করে তাদের অভিযোগ তাৎক্ষণিক নিষ্পত্তি করেন ব্যবস্থাপক।
ইসলামী ব্যাংক টেকনাফ শাখার বরখাস্তকৃত অফিসার ঈমাম হোসেনের লিখিত বক্তব্য অনুযায়ী, তিনি নিজেই ৩০ লাখ টাকা, আজিজ আহমেদ জাবেদ ৩০ লাখ টাকা এবং মোহাম্মদ শাহেদুল ইসলাম ৫ লাখ টাকা পারস্পরিক যোগসাজশের মাধ্যমে ভাগ-ভাটোয়ারা করে নিয়েছেন।
পরবর্তীতে ইসলামী ব্যাংক টেকনাফ শাখার ব্যবস্থাপক মুহাম্মদ আলতাফ হোসেন টাকা আত্মসাতের অভিযোগে টেকনাফ থানায় একটি মামলা দায়ের করলে পুলিশ ওই অভিযুক্ত ৩ কর্মকর্তাকে গ্রেপ্তার করে।
গত বুধবার (১৫ নভেম্বর) তাদেরকে টেকনাফ সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন। বর্তমানে তারা তিনজনই কারাগারে রয়েছেন।
সিএস
Print This Post