
নিজস্ব প্রতিবেদক | কর্ণফুলী নদীর তলদেশে নবনির্মিত দক্ষিণ এশিয়ার প্রথম বঙ্গবন্ধু শেখ মুজির রহমান টানেল উদ্বোধন হয়েছে মাত্র দুইদিন আগে। টানেলের পতেঙ্গা প্রান্ত থেকে আনোয়ারা প্রান্তে ইতোমধ্যে যান চলাচল শুরু হয়েছে। আর টানেলের মধ্যে গাড়ি চলাচলে সর্বোচ্চ গতি ঘণ্টায় ৬০ কিলোমিটার নির্ধারণ করে দেওয়া।
কিন্তু দামি স্পোর্টস কার নিয়ে বেপরোয়াভাবে স্ট্যান্ট এবং ‘গতির খেলা’ দেখিয়ে বঙ্গবন্ধু টানেল পাড়ি দিচ্ছে কিছু উঠতি বয়সী তরুণ। আবার সেই ভিডিও ছড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে।
রবিবার (২৯ অক্টোবর) টানেলের মধ্যে ধারণকৃত এমন কয়েকটি ভিডিও ‘দ্য স্লো কিডস’ নামে একটি পেজে আপলোড করা হয়।
তবে, এ রকম রেস অব্যাহত থাকলে টানেলে দুর্ঘটনা ঘটবে এবং নিরাপত্তা বিঘ্নিত হবে বলে মনে করছেন নিরাপত্তা বিশ্লেষকরা।
‘দ্য স্লো কিডস’ নামে ওই ফেসবুক পেজে আপলোড করা ভিডিওটি। ভিডিওতে ১৮ ঘণ্টায় মন্তব্য পড়েছে ২০২ জনের এবং শেয়ার করছেন সাড়ে ৩ হাজারেরও বেশি মানুষ। ভিডিওটি সর্বমোট দেখেছে এক লাখ ৮২ হাজার ফেসবুক ব্যবহারকারী।
ভিডিওতে দেখা যায়, আনুমানিক ১০টি স্পোর্টস কার টানেলের মধ্যে হঠাৎ থেমে থেমে গতি বাড়িয়ে বারবার লেইন পরিবর্তন করছে। একইসাথে বিপদজনক গতিতে গাড়িগুলো চালিয়ে ভিডিও করা হচ্ছে।
যদিও ভিডিও ক্যাপশনে স্পীড লিমিট মেনে সবগুলো গাড়ি চালানো হয়েছে বলে দাবি করেছেন তারা।
ভিডিওর মন্তব্যের ঘরে মো. রায়হান উদ্দিন নামে একজন লিখেছেন, ‘কোনো দরকার আছে এসব পাকনামি করার! একটা জিনিস বানাইছে এইটার সিকিউরিটির ব্যাপার আছে। সঠিক ব্যবহারের বিষয় আছে। পদ্মাতেও এসব করা হইছিল। পরে অনেক ধরনের নিষেধাজ্ঞা দিয়ে দিসিলো কর্তৃপক্ষ। বাইকসহ বন্ধ করে দিসিল।’
মোহাম্মদ সাকিব নামে একজন ফেসবুক ব্যবহারকারী লিখেছেন, ‘ডুবায় (দুবাই) হলে এইভাবে কেউ গাড়ি চালাতেও পারবে না। নেই কোন গাড়ি চালানোর নির্দেশনা। একবার এই রোড, আরেকবার ওই রোড তাও কি কোন সিংগন্যাল (সিগন্যাল) ছাড়া।’
মহিউদ্দিন বাবুল নামে একজন হাস্যরস করে লিখেছেন, ‘গাড়ি চালানোর নিয়ম দেখে বুঝতে কেউ ভুল করবে না এটাই বাংলাদেশ।’
এদিকে, বঙ্গবন্ধু টানেলের টোল প্লাজার অদূরে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে দুর্ঘটনায় পড়েছে একটি প্রাডো গাড়ি। গাড়িটি আনোয়ারা থেকে পতেঙ্গার দিকে যাচ্ছিল। ঢাকা মেট্রো-ঘ ২১৬২০০ নম্বরের প্রাডো গাড়িটি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে রাস্তার মধ্যে আইল্যান্ডের ওপর উঠে যায়। এতে রাস্তার আইল্যান্ড ভেঙে যায়। পরে গাড়িটি জব্দ করা হয়।
এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে বঙ্গবন্ধু টানেলের প্রকল্প পরিচালক হারুন উর রশীদ বলেন, ‘বিষয়টি সম্পর্কে জেনেছি। চিহ্নিত করে তাদের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
গত ২৮ অক্টোবর বহুল প্রত্যাশিত চট্টগ্রামের কর্ণফুলী নদীর তলদেশে নির্মিত দেশের প্রথম যোগাযোগ পথ টানেলের ফলক উন্মোচন করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এর মাধ্যমে নদীর তলদেশে দক্ষিণ এশিয়ায় প্রথম সড়ক টানেলের উদ্বোধন করলেন প্রধানমন্ত্রী। টানেল নির্মিত হয়েছে বাংলাদেশ ও চীন সরকারের আর্থিক সহায়তায়।
বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষের এ প্রকল্প বাস্তবায়নে খরচ হয়েছে ১০ হাজার ৬৮৯ কোটি ৭১ লাখ টাকা। এর মধ্যে বাংলাদেশ সরকার দিয়েছে ৪ হাজার ৬১৯ কোটি ৭১ লাখ টাকা। আর চীন সরকার ৬ হাজার ৭০ কোটি টাকা।
চীন সরকার এ সহায়তা দিচ্ছে ঋণ হিসেবে। এ ঋণ সুদসহ ফেরত দিতে হবে।
টানেলের আগামী পাঁচ বছরের জন্য রক্ষণাবেক্ষণ ও টোল আদায়ের দায়িত্ব পেয়েছে প্রকল্পের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান চায়না কমিউনিকেশন কনস্ট্রাকশন কোম্পানি (সিসিসিসি) লিমিটেড।
এজন্য এ প্রতিষ্ঠানকে দিতে হবে ৯৮৩ কোটি টাকা। এরমধ্যে ৩০০ কোটি টাকা ব্যয় হচ্ছে চারটি স্ক্যানার কেনা ও স্থাপনের কাজে।
সিএস
