চট্টগ্রামের কাস্টমসের সাবেক সহকারী রাজস্ব কর্মকর্তা (এআরও) মো. আবুল কালাম আজাদ। ৩৯ বছর আগে কাস্টমসের সহকারী পদে চাকরিতে যোগদান করেন। পদোন্নতি পেয়েছেন দুটি। গত ৯ বছর আগে চাকরি থেকে অবসর গ্রহণ করেন। চাকরি থাকাকালীন সময়ে ফাইল আটকিয়ে ঘুষ গ্রহণের নানা অভিযোগ ছিল সাবেক এই কর্মকর্তার বিরুদ্ধে।
শুধু তাই নয়, ‘উপরি আয়ের’ টাকায় চট্টগ্রামের ডবলমুরিং থানার তিন স্থানে জায়গায় কিনে সেগুলো আবার অল্পদামে বিক্রিও করে দেন তিনি। তার মধ্যে দুটি জায়গা বিক্রি করেছেন তার পরিচিত এক নারীর কাছে। ২০০২ সালে চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (সিডিএ) থেকে পেয়ে পরে বিক্রিও করে দেন তিনি।
পরবর্তীতে ওই বিক্রি করা প্লটটিতে ছয় তলা বাড়ি নির্মাণ করে গত ১৪ বছর ধরে বসবাস করছেন আসছেন আবুল কালাম আজাদ। অভিযোগের প্রক্ষিতে দুদকের অনুসন্ধান কর্মকর্তা আবুল কালাম আজাদের বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগের সত্যতা পায়নি বলে প্রায় ২ বছর আগে কমিশন প্রতিবেদন পাঠানো হয়। বর্তমানে প্রতিবেদনটি চূড়ান্ত ফলাফলে অপেক্ষায় রয়েছে বলে জানা গেছে।
অভিযোগ রয়েছে, ২০২১ সালে দুদকের অনুসন্ধান থেকে বাঁচতে তথ্য গোপন করে সম্পদ বিবরণীতে মিথ্যা তথ্য প্রদান করেন আবুল কালাম আজাদ। ওই সম্পদ বিবরণীতে তিনি চট্টগ্রামের আগ্রাবাদ সিডিএ আবাসিক এলাকায় সিডিএ থেকে পাওয়া প্লট ২০০২ সালে বিক্রি দেখালেও তার খোদ বিষয়টি বুঝতে পারেননি দুদক অনুসন্ধান কর্মকর্তা।
বর্তমানে ওই প্লটে ৬ তলা বাড়ি রয়েছে আবুল কালাম আজাদের। প্লটসহ বাড়িটি বর্তমানে অন্তত ৫ কোটি টাকার সম্পত্তি। পরবর্তীতে ওই অনুসন্ধান কর্মকর্তা তার পক্ষে অনুসন্ধান প্রতিবেদন দাখিল করেন। ওই সময় অনুসন্ধান কর্মকর্তা ছিলেন দুদক সমন্বিত জেলা কার্যালয়, চট্টগ্রাম-১ এর সাবেক সহকারী পরিচালক মো. ফকরুল ইসলাম। পরবর্তীতে দুদক কর্মকর্তা ফকরুল ইসলাম কর্মস্থলে ছেড়ে চলে যাওয়ার পর নতুন দায়িত্ব পান সহকারী পরিচালক মো. এমরান হোসেন।
দুদক সূত্রে জানা গেছে, ২০২১ সালের ২০ ডিসেম্বর সাবেক দুদকের নিকটে সম্পদ বিবরণী ঘোষণা দেন কাস্টমস কর্মকর্তা মো. আবুল কালাম আজাদ। ১৯৮২-৮৪ সাল পর্যন্ত তিনি ফেনীর নিজ গ্রামের ৫ক১ শতক কৃষি জমি কিনেছেন ৩৫ হাজার টাকায়। দুদকের দেয়া সম্পদ বিবরণীতে এসব তথ্য উল্লেখ করেন।
দুদক অনুসন্ধানে পেয়েছে, আবুল কালাম আজাদ ফেনীতে ৫১ শতক জায়গা ছাড়াও আগ্রাবাদ সিডিএ আবাসিক এলাকায় সিডিএ থেকে প্রাপ্ত ৪ দশমিক ১৩ কাঠা প্লটটি ২০০২ সালের ২১ জুলাই জে.এম আবদুল্লাহ গং এর নিকটে বিক্রি করে দেন। ১৯৮৪ সালের ৩০ নভেম্বর আগ্রাবাদ এলাকায় আড়াই শতক ও ২০০৩ সালের ২ আগস্ট শূন্য দশমিক ৭৫ শতক জায়গাটি কেনার পর পরবর্তীতে সময়ে তার পরিচিতি এক নারী মিসেস সুলতানা ইয়াসমিনের বরাবরে বিক্রি করে দেন।
এদিকে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, আগ্রাবাদ সিডিএ আবাসিক এলাকায় সিডিএ থেকে পাওয়া ৪ দশমিক ১৩ কাঠা প্লটটি ২০০২ সালের ২১ জুলাই জে.এম আবদুল্লাহ গং এর নিকটে বিক্রি করা প্লটটিতে ৬ তলা বাড়ি নির্মাণ করে দীর্ঘদিন ধরে বসবাস করে আসছেন আবুল কালাম আজাদ। প্লটসহ ওই বাড়িটি বর্তমান মূল্য অন্তত ৫ কোটি টাকা।
চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন সূত্রে জানা গেছে, চট্টগ্রামের আগ্রাবাদ সিডিএ আবাসিক এলাকায় ৬০ নম্বর বাড়ি নিয়মিত সিটি কর্পোরেশনের হোল্ডিং ট্যাক্স দিয়ে আসছেন মো. আবুল কালাম আজাদ। তার বাড়ির হোল্ডিং নম্বর ৭২৮। তার ৬ তলা ভবনটির সিটি কর্পোরেশনের হোল্ডিং ট্যাক্স মূল্য ৩ লাখ টাকা হলেও প্রতিবছর ৫১ হাজার টাকা ট্যাক্স দেন আবুল কালাম আজাদ। ২০২৩-২৪ অর্থ বছরের জুন পর্যন্ত তার হোল্ডিং টেক্স পরিশোধ করা হয়েছে।
১৯৭৬ সালের কাস্টমসের অফিস সহাকারী হিসেবে যোগদান করেন মো. আবুল কালাম আজাদ। ১৯৮৯ সালে উচ্চমান সহকারি হিসেবে পদোন্নতি লাভ করেন। ২০০১ সালে সহকারি রাজস্ব কর্মকর্তা হিসেবে আরও একধাপ পদোন্নতি পেয়ে ২০১৫ সালের ২ সেপ্টেম্বর তিনি অবসর গ্রহণ করেন। ১৯৮৭ সালে তিনি বিবাহ করেন। তার দুই মেয়ে এক ছেলে। তারা সকলেই চাকরিজীবি।
আগ্রাবাদ সিডিএ আবাসিক এলাকায় ৬০ নম্বর বাড়িটির বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে সাবেক কাস্টমস কর্মকর্তা মো. আবুল কালাম আজাদ বাড়িটি তার বলে প্রতিবেদককে নিশ্চিত করেছেন।
২০০২ সালে যে বাড়িটি এক ব্যক্তির নিকটে বিক্রি করে দিয়েছেন, সেটিতে কিভাবে ৬ তলা বাড়ি করলেন এবং ওই বাড়ির কর্পোরেশনের হোল্ডিং ট্যাক্সও পরিশোধ করছেন আপনি— এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি প্রতিবেদককে কোনো উত্তর না দিয়ে সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেন।
পরবর্তীতে তার মুঠোফোনে আরও কয়েক দফা কল করা হলেও তিনি সংযোগ তোলেননি। এরপর তার নম্বরে ক্ষুদেবার্তা পাঠিয়েও সাড়া মেলেনি।
প্রসঙ্গত, ২০১৩ সালের ২ জানুয়ারি অবৈধ সম্পদ অর্জনের দায়ে তার স্ত্রীর মিসেস মাছুমা আক্তারের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক), চট্টগ্রাম। বর্তমানে তার স্ত্রীর বিরুদ্ধে দুদকের দায়ের করা মামলাটি হাইকোর্টে বিচারাধীন রয়েছেন বলে জানিয়েছেন চট্টগ্রামের দুদকের পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) কাজী ছানোয়ার আহমেদ লাভলু।
এই বিষয়ে দুদক সমন্বিত জেলা কার্যালয়, চট্টগ্রাম-১ এর উপপরিচালক মো. নাজমুচ্ছায়াদাত বলেন, ‘বিষয়টি খোঁজ খবর নিতে এক কর্মকর্তাকে দায়িত্ব দিয়েছি। তথ্য গোপনের সত্যতা পেলে তার বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয়া হবে।’
সিটিজিসান/সিএস
Print This Post