নিজস্ব প্রতিবেদক | আপডেট : ২৫ জুন, ২০২৩ রবিবার : ১:২০ পিএম
বাঁশখালী নিউজের প্রকাশক ও সম্পাদক মো. মনছুর আলমকে হত্যার উদ্দেশ্যে সন্ত্রাসীরা হামলা চালায়। হত্যাচেষ্টায় ব্যর্থ হয়ে প্রকৃত ঘটনা ধামাচাপা দিতে মিথ্যা মাদক মামলা দিয়ে তাকে কারাগারে পাঠায় পুলিশ। গত ১৬ এপ্রিল রাত ১১টা ২০ মিনিটের দিকে বাঁশখালীর সাধনপুর ইউনিয়নের দক্ষিণ সাধনপুর এলাকার বদর পীর মাজার গেইটের সামনে স্থানীয় পোড়াবাড়ি পুলিশ ক্যাম্প চেকপোস্ট স্থলে এ হামলার ঘটনা ঘটে। পরে আইনি লড়াই চালিয়ে ১ মাস ২৬ দিনের মাথায় গত ১৩ জুন জামিনে মুক্তি পান মনছুর।
এদিকে জামিনে মুক্তি পেয়ে আনোয়ারা সার্কেল এএসপি ও বাঁশখালী থানার ওসি সহ মোট ৬ জনের বিরুদ্ধে আইজিপি এবং স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বরাবর লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন মনছুর আলম। অভিযুক্ত পুলিশ কর্মকর্তারা হলেন— বাঁশখালী থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো. কামাল উদ্দিন, রামদাস মুন্সিহাট পুলিশ ফাঁড়ির উপপরিদর্শক (এসআই) মো. শহীদ, সহকারী উপপরিদর্শক (এএসআই) মিথুন চক্রবর্তী, ফাঁড়ির ইনচার্জ পুলিশ পরিদর্শক সোলেইমান, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (আনোয়ারা- বাঁশখালী- চন্দনাইশ সার্কেল) কামরুল ইসলাম সুমন ও বাঁশখালী থানার উপপরিদর্শক (এসআই) মো. বাবুল মিয়া।
আইজিপি ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বরাবর অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, চট্টগ্রাম রেঞ্জের বাঁশখালী থানাধীন রামদাস মুন্সির হাট ফাঁড়ি’র এসআই মো: শহীদের হয়রানি ও অনিয়মের বিরুদ্ধে পুলিশ সুপার ও এএসপি (সার্কেল) বরাবরে ভুক্তভোগীরা বেশ কিছু লিখিত ও মৌখিক অভিযোগ করেন। এ ব্যাপারে ভুক্তভোগীকে আইনি প্রতিকার পাওয়ার বিষয়ে সহযোগিতা করায় প্রতিপক্ষ ও এসআই শহীদ সাংবাদিক মনছুরের উপরে ক্ষিপ্ত হয়ে উঠে। এরপর থেকে বিভিন্ন সময় ঐ ঘটনার প্রতিপক্ষের লোকজন সাংবাদিক মনছুরকে হামলার পরিকল্পনা এবং এসআই শহীদ প্রায় সময় চলাচলের পথে তল্লাশীর নামে হয়রানি সহ হেয়প্রতিপন্ন করতেন। বিষয়টি মনছুর নিজে এবং সিনিয়র সাংবাদিকদের মাধ্যমে একাধিকবার বাঁশখালী থানার ওসি মো: কামাল উদ্দিনকে জানালেও কোন কর্নপাত করেননি। উলটো এএসপি (সার্কেল) ও ওসি এসব অভিযোগের নেপথ্যে সাংবাদিক মনছুরকে দায়ী করে, তার পেছনে এসআই শহীদকে লেলিয়ে দেন।
এ পর্যন্ত এসআই শহীদের বিরুদ্ধে করা লিখিত ও মৌখিক প্রায় সকল অভিযোগের তদন্ত কর্মকর্তা এএসপি (সার্কেল) হলেও অজ্ঞাত কারণে এসবের প্রতিকার পায়নি কোনও অভিযোগকারী। এরই ধারাবাহিকতায় গত ২৭ মার্চ রাত ১১টায় উপজেলা স্টেশন থেকে বাইক যোগে বাড়ি ফেরার পথে কালিপুর সদর আমিন হাট এলাকায় এসআই শহীদ সিভিলে ২জন কনস্টেবল নিয়ে সাংবাদিক মনছুরের গাড়ি গতিরোধ করে প্রহসনের তল্লাশি চালায়। পরে বাইকটি ঘটনাস্থলে ফেলে রেখে, মদ্যপান করে রাস্তায় লোকজন নিয়ে উশৃংখল করার অভিযোগ তোলে হাতকড়া পড়িয়ে সাংবাদিক মনছুরকে থানায় নিয়ে যায় এবং বাঁশখালী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স থেকে ভুয়া মাদক সেবনের সার্টিফিকেট সংগ্রহ করে। পরে রাত ২ টায় থানা থেকে সাংবাদিক মনছুরকে ছেড়ে দিলে ঘটনাস্থল থেকে বাইক উদ্ধার করেন তিনি। এঘটনায় সংবাদ প্রকাশসহ এসআই শহীদের সহযোগিতায় সোর্স রহিমের বিরুদ্ধে গণধর্ষণ ও মুক্তিপন আদায়ের বিষয়ে সংবাদ প্রকাশ হলে ঐ ফাঁড়ির ইনচার্জ সোলেইমান, এসআই শহীদ ও বাঁশখালী থানার ওসি মো. কামাল উদ্দিন চরমভাবে ক্ষিপ্ত হয়ে উঠেন সাংবাদিক মনছুরের উপর।
সেই থেকে সাংবাদিক মনছুরকে হত্যার উদ্দেশ্যে চালচালতে থাকেন অভিযুক্ত পুলিশ ও সোর্সরা। এরই প্রেক্ষিতে ১৬ এপ্রিল রাত ১১টার পর গুণাগরি খাসমহল বাজার থেকে গুরা মিয়া বাঙ্গালীর ছেলে আজিজের সাথে সাংবাদিক মনছুর তার বাইক যোগে বাড়ি যাওয়ার পথে পোড়াবাড়ি চেকপোস্ট স্থলে কালীপুরের আমির হোসেন প্র: বাইশ্যার ছেলে চিহ্নিত সন্ত্রাসী ও পুলিশের সোর্স রহিম, রেজাউল করিম প্রকাশ লেদুর ছেলে সোর্স রহিম, দুধুর্ষ ডাকাত আনোয়ার ও কিশোর গ্যাং সাকিল সহ অজ্ঞাত ১৪/১৫ জন সন্ত্রাসী তার মোটর সাইকেল গতিরোধ করে ফেলে দিয়ে পোড়াবাড়ি ক্যাম্পমুখী পাঁকা রাস্তা দিয়ে প্রায় ১০০ মিটার ভেতরে সাংবাদিক মনছুরকে তোলে নিয়ে যায়। পরে সাংবাদিক মনছুরকে বেঁধে তার পকেটে থাকা মোবাইল, ম্যানিব্যাগ ও ব্লুথুট হেডসেট ছিনতাই করে পকেটে ইয়াবা ঢুকিয়ে ও শরীরে মদ ডেলে দিয়ে গণপিটুনি শুরু করে। ঐ সময় মোটর সাইকেল রাস্তায় পড়ে থাকায় উভয়মুখী গাড়ির জ্যাম লেগে পথচারী ও যাত্রী জড়ো হতে থাকে। সাংবাদিক মনছুরের শৌর চিৎকারে জড়ো হওয়ায় জনতা বাঁচাতে এগিয়ে আসতে চাইলে শুরুতে স্থানীয় এক সাবেক মেম্বার আবু হেনা তার ১০/১২ জন অজ্ঞাত সহযোগীদের নিয়ে জনগণকে বাঁধা দেয়। একপর্যায়ে আবু হেনার বাঁধা উপেক্ষা করে জনগণ এগিয়ে আসলে হামলাকারীরা কিছু কিছু পালিয়ে যায় আর কিছু জনগণের সাথে মিশে যায়। জনগণ সাংবাদিক মনছুরকে আহত অবস্থায় উদ্ধার করে হাসপাতাল নিয়ে যেতে চাইলে সাবেক ঐ মেম্বার আবুহেনা পুলিশের দোহাই দিয়ে বাঁধা দেন। এক পর্যায়ে ফাঁড়ির টহল ডিউতিরত এএসআই মিথুন ১১টা ৩০ মিনিটের দিকে ঘটনাস্থলে আসেন ও পরে বাঁশখালী থানার টহল ডিউটিরত এসআই মো. বাবুল মিয়া ১১টা ৪৫ মিনিটের দিকে এসে চিকিৎসার নামে হাসপাতালে নিয়ে গেলেও কোন চিকিৎসা কিংবা পরীক্ষা না করিয়ে মাদক সেবনের ভুয়া সার্টিফিকেট সংগ্রহ করে মিথ্যা মাদক মামলা দিয়ে কারাগারে পাঠান।
সাংবাদিক মো. মনছুর আলম বলেন, বাঁশখালী থানা পুলিশের বিরুদ্ধে এসব অভিযোগের পরিসমাপ্তির জন্য আমাকে হত্যা করা ছাড়া আর কোন উপায় এসআই শহীদ, পুলিশ পরিদর্শক সোলেইমান, ওসি কামাল ও এএসপি কামরুল ইসলামের ছিল না। এজন্য ২য় ঘটনার তারিখ ও সময়ে মিথ্যা মাদক সেবন ও উশৃংখল করার মিথ্যা অভিযোগে গণপিটুনিতে মৃত্যু নিশ্চিত করায় ছিল তাদের একমাত্র উদ্দেশ্য। ঘটনাস্থলে পথচারীর মানবিক দৃষ্টান্তে তাদের হত্যা চেষ্টা চরমভাবে ব্যর্থ হওয়ায় আমাকে মিথ্যা মামলা দিয়ে কারাগারে পাঠিয়ে প্রকৃত ঘটনার ধামাচাপা দিয়ে রাখেন। ঘটনাস্থলে বিভিন্ন এলাকার শতাধিক পথচারী ও যাত্রী উপস্থিত থাকলেও তাদেরকে ছাড়া হামলার ঘটনার সহযোগীদেরকে সাজানো মামলার সাক্ষী করেন। তাই দিশেহারা হয়ে ওসি কামাল সাংবাদিকদের কোনও ব্রিফিং দেননি। থানায় ও ঘটনাস্থলে পুলিশের নাটকীয় ভাবে তোলা ২টি ছবি তাৎক্ষণিকভাবে হোয়াটসঅ্যাপ কিংবা বিভিন্ন ম্যাসেঞ্জারে দ্রুত চারিদিকে ছড়িয়ে পড়লে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সাংবাদিক সহ সচেতন মহল জোর প্রতিবাদ জানান।
এদিকে ঘটনার ১৮ ঘন্টা পর কোন চিকিৎসা ও খাবার ব্যতীত থানার এসআই মো. বাবুল মিয়া বাদী হয়ে তিনি নিজেই বিকাল ৫টার দিকে ৫০ পিস ইয়াবা ও ২ লিটার মদের মামলা {২০১৮ সালের মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনের ৩৬(১) এর ১০(ক)/২৪(ক) ধারা} দিয়ে বাঁশখালীর বিজ্ঞ ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে সোপর্দ করলেও টানা ৫ দিন পাঠানো হয়নি মামলার কোন এফ,আই,আর/এজাহার কিংবা জব্দ তালিকা। ঐ ৫ দিনে ওসির মৌখিক নিষেধাজ্ঞার কারণে থানা থেকেও সংগ্রহ করা সম্ভব হয়নি মামলার কোন নকল কপি। অথচ আসামী চালান প্রতিবেদনে এসআই শহীদ আমাকে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদ শেষে বিজ্ঞ আদালতে সোপর্দের কথা উল্লেখ করলেও তাকে মনছুর ঐ ১৮ ঘন্টার মধ্যে ১৮ সেকেন্ডের জন্যও থানায় দেখেননি। টানা ৫দিন মামলার তথ্য গোপন রেখে ৫ দিনের রিমান্ড চেয়ে রামদাস হাট মুন্সি (ফাঁড়ি) তদন্তকেন্দ্রের এসআই শহীদ আদালতে রিমান্ডের আবেদন দাখিলের পরপরই মামলার নকল কপি পাওয়া যায়।
ওসির মৌখিক দেয়া টানা ৫ দিনের সেই নিষেধাজ্ঞার মধ্যে বাঁশখালীর ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে দায়িত্বরত পুলিশের হস্তক্ষেপে আসামী চালান প্রতিবেদনে বর্ণনা ও মামলার সূত্র পরিবর্তন করা হয়। এতদিনের মধ্যে ৫০ পিস ইয়াবা গিয়ে ১৫০ পিসে ঠেকে আর মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনের ২৫/৩৮ ধারা ২টি অতিরিক্ত যুক্ত করে মোটরসাইকেলও মামলায় জড়িয়ে দেন। একই সাথে মাদক সেবনের ভুয়া সনদও সংযুক্ত করেন। অথচ এজাহারে মাদক সেবনের রিপোর্ট সংগ্রহ এবং বাইক উদ্ধারের বিষয়ে কোন বিবরণও নেই। রিমান্ড শুনানীতে আদালতে উপস্থানকৃত তথ্য-উপাত্ত দেখে ও শুনানির মাধ্যমে পুলিশের সাজানো নাটক বুঝতে পারায় রিমান্ড না মঞ্জুর করেন। অথচ বাঁশখালী থানায় মাদকের প্রকৃত বড় চালানের মামলায়ও রিমান্ড চাওয়ার নজির নেই। পরে ১ মাস ২৬ দিনের মাথায় আমি জামিনে মুক্তি পাই। এই নাটকীয় মামলায় মনছুরকে কারাগারে পাঠানো হয় ২টি ধারায় আর জামিনে বের হতে হয় ৪টি ধারায় এবং আহত অবস্থায় কারাগারে গিয়ে কারা হাসপাতাল থেকে চিকিৎসা নিতে হয়।
এ বিষয়ে ভুক্তভোগী সাংবাদিক মনছুর আলম বলেন, ‘ঘটনা শুরু হয় রাত ১১টা ২০ মিনিটের দিকে আর বাঁশখালী থানার এসআই মো: বাবুল মিয়া ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয় রাত ১১টা ৪৫ মিনিটে। হাসপাতালে নেওয়া হয় রাত ১২ টা ১০ মিনিটে আর হাসপাতাল থেকে থানায় নিয়ে যায় রাত ১২ টা ২০ মিনিটের দিকে। অথচ এই মিথ্যা মাদক মামলার কথিত এজাহারে উল্লেখ করা হয়, ঘটনাস্থল থেকে প্রায় ৩০ কি.মি. দূরে নাপোড়ায় রাত্রীকালীন ডিউটি করার সময় রাত ১১ টা ৪৫ মিনিটের দিকে ৯৯৯ কলের মাধ্যমে খবর পেয়ে বাদী এসআই মোঃ বাবুল মিয়া ঘটনাস্থলে আসেন রাত ৩ টার দিকে। কথিত এজাহারে ১০০/১২০ জনতা আমাকে ইয়াবা ট্যাবলেট ও মদ সহ আটকের কথা উল্লেখ করলেও মোটর সাইকেলের বিষয়ে কোন কথা উল্লেখ নেই। বাইকটি মূলত আমার দেখানো মতে রাস্তায় পড়ে থাকা অবস্থা থেকে উদ্ধার করলেও, শুধু মিথ্যা মামলার জব্দ তালিকায় উল্লেখ করেন। এমনকি হামলায় জড়িতরা ছাড়া প্রায় অধিকাংশ জনতা আমার মোটর সাইকেল দেখেওনি, তবু মামলার পরিবর্তিত জব্দ তালিকায় সংযুক্ত করে দেন, অথচ মামলার এজাহারে কিভাবে বাইক উদ্ধার করল সে বিষয়ে কোন বর্ণনাও নেই। মিথ্যা মাদক মামলার কথিত জব্দ তালিকায় বাইকের কথা উল্লেখ থাকলেও, উল্লেখ নেই মোবাইল ফোন ও ফোনে থাকা ২টি সিম এবং ১টি মেমোরি কার্ড, ব্লুথুট হেটসেট বক্স ও বক্সে থাকা ২টি হেডফোন এবং ম্যানিব্যাগ ও ব্যাগে থাকা ৪টি এটিএম ডেবিট কার্ড, ১টি ডুয়েল কারেন্সি’র আমেরিকান এক্সপ্রেস ডলার কার্ড, ১টি গাড়ির স্মার্ট লাইসেন্স কার্ড, ১টি জাতীয় পরিচয় পত্রের স্মার্ট কার্ড, ২টি সংবাদমাধ্যমের পরিচয় পত্র, কক্সবাজার সরকারি কলেজে অধ্যয়নরত কালীন সময়ের পরিচয় পত্র, জিমনেসিয়ামের পরিচয় পত্র, রক্তদাতা কার্ড ও ৫০০ টাকার নোট ৩টি সহ গুরুত্বপূর্ণ আরো কিছু কাগজপত্র জব্দের কথা। এছাড়া কথিত এজাহার মতে আর বাস্তব ঘটনা অনুযায়ী শতাধিক জনগন ঘটনাস্থলে উপস্থিত থাকলেও এই মিথ্যা মামলায় সাক্ষী হিসাবে ঘটনাস্থল এলাকার সাবেক মেম্বার আবু হেনা ও হামলাকারীদের সহযোগীদের ছাড়া বাইরের প্রত্যক্ষদর্শী কোন সাক্ষী নেই। এমনকি সাবেক মেম্বার আবু হেনাও সাক্ষী হননি। কথিত এজাহারে উল্লেখ করেন, কক্সবাজার জেলা থেকে এই ইয়াবা ও মদ বাঁশখালীতে এনে বিক্রি করে আসতেছি। অথচ ২০২১ সালের ২৮ ডিসেম্বর বাঁশখালী আসার পর থেকে আমার কক্সবাজার আর যাওয়া হয়নি। সেই থেকে এখন পর্যন্ত আমার মোবাইল লোকেশন যাচাই করলে বিষয়টি স্পষ্ট হবে, আর আমি কখনো কোন মাদক লেনদেনের বিষয় কারো সাথে আলাপ করছি কিনা, তা কল রেকর্ড যাচাই করলেও স্পষ্ট হওয়া যাবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘কথিত এজাহার মতে আটককালীন সময় উত্তেজিত জনতা আমাকে মারধর করায় বাঁশখালী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে ডাক্তার বলেন আমি মদ খাইছি। অথচ হাসপাতালে নিয়ে গেলেও আমাকে কোন চিকিৎসা কিংবা পরীক্ষা করানো হয়নি বরং আমি প্রকৃত ঘটনা বলা শুরু করলে, চিকিৎসা না করিয়ে এসআই বাবুল মিয়া ওসির সাথে ফোনে কথা বলে মাদক সেবনের মিথ্যা সার্টিফিকেট সংগ্রহ করে থানায় নিয়ে যায়।’
ঘটনায় সাংবাদিক মনছুরের সাথে মোটরসাইকেলে থাকা বাণিগ্রামের গুরা মিয়ার ছেলে আজিজ বলেন, ‘রাত অনুমান ১১টার দিকে গুনাগরি থেকে সাংবাদিক মনছুরের বাইক যোগে বাড়ী যাওয়ার পথে বদর পীর শাহ মাজারের স্পিড ব্রেকারে কয়েকজন মুখোশধারী লাঠিসোটা নিয়ে তাদেরকে গাড়ি সহ ফেলে দেয়। সাংবাদিক মনছুরকে ১০০ গজ ভেতরে তোলে নিয়ে বেঁধে তার মোবাইল ও মানিব্যাগ নিয়ে পকেটে ইয়াবা ঢুকিয়ে ও মদ ঢেলে দিয়ে আমাকে সহ মারধর শুরু করে। আগে থেকে উপস্থিত থাকা লোকজন সাংবাদিক মনছুরকে বাঁচানোর চেষ্টা করেনি। পরে লোকজন বেড়ে গিয়ে সাংবাদিক মনছুরকে রক্ষা করার জন্য এগিয়ে গেলে হামলাকারীরা পালিয়ে যায়। পরে পুলিশ এসে সাংবাদিক মনছুরকে বাঁধা অবস্থায় উদ্ধার করে নিয়ে যায়।’
মামলার কথিত এজাহারে উল্লেখিত সাক্ষী মৃত নাজু মিয়ার ছেলে আবদুর রহমান বলেন, ‘গুনাগরি থেকে বাজার করে আসার পথে দেখেন তার বাড়ির পথের রাস্তায় ৪/৫ জন লোক মারামারি করতেছে। তারমধ্যে একজন বাঁচার জন্য চিৎকার করলে তিনি মোবাইলের ফ্লাস লাইট জ্বালিয়ে এগিয়ে গেলে বাকিরা পালিয়ে যায় একজনকে পেছনে হাতবাঁধা ও কাপড়চোপড় ভিজা অবস্থায় দেখি এবং তার সাথে বাণিগ্রাম এলাকার আরেকটা ছেলে ছিল। পরে ঐ লোককে ১০০ গজ মত দূরে মেইন রোডের রাস্তার মাথায় নিয়ে গেলে ১০/১৫ জন মানুষের সামনে পুলিশ এসে তার পকেট থেকে অনুমানিক ১০০ পিসের মত একটা ইয়াবার পোটলা ও তার গেঞ্জির ভেতর থেকে ২ লিটারি মদের বোতল উদ্ধার করে নিয়ে যায়।’
কথিত এজাহারে উল্লেখিত আরেক সাক্ষী আলী হোসেনের ছেলে মো. ইসমাইল বলেন, ‘রাত ৯টার দিকে তার দোকানে অবস্থান করার সময় স্থানীয় সাবেক মেম্বার আবুহেনা তাকেসহ ৪/৫ জনকে ডেকে নিয়ে ঘটনাস্থলে যান। ১০/১৫ জন লোক সাংবাদিককে কোথাও থেকে ধরে এনে ঘটনাস্থলে মারধর করার সময় আমরা গেলে তারা পালিয়ে যায়। তখন বাণিগ্রামের একটা ছেলের পাশে ঐ সাংবাদিকের বুকের উপর ২ লিটারি মদের বোতল সহ বাঁধা অবস্থায় উদ্ধার করেন। পুলিশ আসলে সাংবাদিকের মোবাইলটি সাবেক মেম্বার আবু হেনা পুলিশের হাতে জমা দেন এবং তার পকেট থেকে একটা ইয়াবার পোটলা উদ্ধার করে নিয়ে যায়। একপ্রশ্নের জবাবে, ইয়াবা কয়টা ছিল জানি না, এসব তো প্রশাসনের বিষয়, আমরা কিভাবে বলব কয় পিস। পুলিশ আসামাত্র সবকিছু মোবাইলে ভিডিও করছিল, পুলিশের কাছে বিস্তারিত সব ভিডিও করা আছে।’
কথিত এজাহারে উল্লেখিত আরো এক সাক্ষী মোজাফফর আহম্মদের ছেলে মো. ফারুক বলেন, ‘রাত ১১টার দিকে চিৎকার শুনে ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখি কিছু ব্যক্তি একটা লোককে মারধর করতেছে। স্থানীয় সাবেক মেম্বার আবু হেনা সহ লোকজন এগিয়ে গেলে হামলাকারীরা পালিয়ে যায়। পরে এএসআই মিথুন ঘটনাস্থলে আসলে সাবেক মেম্বার আবু হেনা ঐ লোকটিকে বাঁধা অবস্থায় ২ লিটারি মদের বোতল সহ পুলিশের হাতে বুঝিয়ে দেন। এছাড়া আর কিছু জানেন না।’
এ ব্যাপারে স্থানীয় সাবেক মেম্বার আবু হেনা বলেন, ‘রাত ১০টার দিকে ইসমাইলের দোকানে বাজার করার সময় ঘর থেকে কল দিয়ে জানায়, আমাদের বাড়ির সামনে মারমারি হচ্ছে আর একজন লোক বাঁচার জন্য চিৎকার করতেছে। আমি স্থানীয় কিছু লোকজন নিয়ে ঘটনাস্থলে গেলে হামলাকারীরা পালিয়ে যায়। তখন সাংবাদিককে বাঁধা অবস্থায় গেঞ্জির ভেতরে ২ লিটারি মদের বোতল সহ নিয়ে তাকে ধরাধরি করে মেইন রোডে নেওয়া মাত্র পুলিশ আসে। এক প্রশ্নের জবাবে, ঐ সাংবাদিককে কারা হামলা করছে এবং তার সাথে কি হয়েছিল তা সবার সামনে পুলিশকে সাংবাদিক নিজে বলছেন। পরে পুলিশ তার পকেট থেকে ইয়াবার পোটলা উদ্ধার করে নিয়ে যায়।’
মামলার এজাহারে উল্লেখিত পুলিশ সাক্ষী এএসআই মিথুন চক্রবর্তী’র কাছে জানতে চাইলে তিনি মোবাইল ফোনে বক্তব্য দিতে অপারগতা দেখিয়ে ফাঁড়িতে গিয়ে সরাসরি আলাপ করার জন্য বলেন।
এদিকে মামলার বাদী এসআই মো. বাবুল মিয়া বলেন, ‘ঘটনাস্থলে থানা থেকে তিনি সহ রামদাস ফাঁড়ি পুলিশও গিয়েছিলেন। বিস্তারিত জানতে থানায় এসে ওসি সাহেবের সাথে কথা বলুন।’
মাদক মামলার ঘটনায় মাদক সেবনের সার্টিফিকেটের বিষয়ে জানতে চাইলে বাঁশখালী উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. মো. শফিউর রহমান মজুমদার বলেন, আমাদের এখানে ডোপ টেস্ট করানো হয় না। এছাড়া ১৬ এপ্রিলের ঘটনার বিষয়ে তিনি অবগত নন বলে আবাসিক কর্মকর্তার সাথে যোগাযোগ করতে বলেন।
এ বিষয়ে বাঁশখালী স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক কর্মকর্তা ডা. দিদারুল হক সাকিব বলেন, উপজেলা পর্যায়ে ডোপ টেস্ট করানোর সুযোগ নেই যেহেতু আমরা মাদক সেবনের সার্টিফিকেট দিতে পারি না। পুলিশ কিভাবে আমাদের স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স থেকে মাদক সেবনের সার্টিফিকেট সংগ্রহ করল সেই বিষয়ে আমার জানা নেই। এছাড়া তিনিও ১৬ এপ্রিলের ঘটনার বিষয়ে অবগত নন বলে জানান।
এ ঘটনার পরদিন ১৭ এপ্রিল বাঁশখালী থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো. কামাল উদ্দিন এক সাংবাদিককে বলেছিলেন, ‘গতকালকে আমরা সেহেরীর জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছিলাম। এই সময় স্থানীয় চেয়ারম্যান, মেম্বার ও চৌকিদার সহ অনেক লোকজন আমাকে ফোন দিয়ে বলে, স্যার সেহেরী খাওয়ার সময় এক লোক মদ খেয়ে মদ বিক্রি করতেছে আমরা তাকে ধরছি। পরে থানার মোবাইল টিমের ইনচার্জ গিয়ে দেখে ২ লিটার মদ, ১৫০ পিস ইয়াবা ও ১টি মোটরসাইকেল সহ জনগণ ধরে রাখছে। এই মনছুর আরো একাধিকবার ঐ স্থানে মদ বিক্রি করার সময় স্থানীয় কালীপুর ইউনিয়নের শাহাদত চেয়ারম্যান ওরে দৌড়াইছে, ধরতে পারে নাই। তার সাথে এক মহিলা ছিল তাকে ধরছে। এই মনছুর কক্সবাজার থেকে মদ নিয়ে এসে এখানে বিক্রি করে। পুলিশ না গেলে তাকে গণপিটুনি দিয়ে পিটাইতে পিটাইতে মেরে ফেলতো। ঐ চেয়ারম্যানে তাকে পাহারা দেয়, আমি পুলিশের ২টিম পাঠিয়ে তাকে উদ্ধার করছি, নইলে তাকে জায়গায় মেরে ফেলতো, বাঁশখালী এটা সেনসিটিভ এলাকা কিন্তু।’
ওসির বক্তব্যের বিষয়ে সাংবাদিক মো. মনছুর আলমের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘ওসি কামাল যে ঘটনার সময় গণপিটুনি দিয়ে আমাকে মেরে ফেলার চেষ্টার কথা বলল তা ঠিক। তবে আমাকে কোন চিকিৎসা করানো হয়নি কেন? চেয়ারম্যান, মেম্বার, চৌকিদার সহ জনগণের ফোনে পুলিশের ২টি টিম পাঠিয়ে আমাকে মদ খাওয়া অবস্থায় সেহেরীর সময় উদ্ধার এবং মদ, ইয়াবা ও মোটর সাইকেল সহ তারা আমাকে আটক করে রাখার যে কথাটি ওসি বলল, সেটা কোথা থেকে বলল আমার জানা নেই। এখানে আমার প্রশ্ন, তাহলে কারা আমাকে আটক করে হামলা করল এবং মদ ক্রেতারা কারা? ওসি কামাল নিশ্চয় জানেন! তো ওসি কামাল এদের বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা নিল না কেন? এমনকি এ কথাটি ঘটনাস্থলে উপস্থিত সাবেক মেম্বার আবু হেনা সহ শতাধিক জনতা ও মিথ্যা মাদক মামলার কথিত এজাহারে উল্লেখিত সাক্ষীরাও জানেন না বলে দাবী করছেন। এছাড়াও কথিত এজাহারে উল্লেখ আছে ৯৯৯ কল পেয়ে ঘটনাস্থলে পুলিশ যায়। ওসি কামাল যে বলল, আমি কক্সবাজার থেকে মদ নিয়ে এসে বিক্রি করার সময় চেয়ারম্যান শাহাদত আমাকে দৌড়ায়ে ধরতে পারেনি, এক মহিলাকে তারা ধরছে। অথচ আমি জানি যে, ২৭ মার্চ সকাল ১১টার দিকে একটা বিধবা মহিলাকে ধরে এসআই শহীদের সহযোগিতায় সোর্সরা গণধর্ষণ ও মুক্তিপন নেওয়ার পর ছেড়ে দেয়। আর সেই মহিলা ওসি কামালের কাছে আইনি সহযোগিতা চাইতে গিয়ে রোষানলে পড়েন। এ বিষয়ে তাকে আইনিভাবে সহযোগিতা করতে ১৩ এপ্রিল থানায় গিয়ে সাংবাদিক মো. বেলাল উদ্দিন সহ আমাকেও পড়তে হয় পুলিশের রোষানলে।’
তিনি আরও বলেন, ‘ঐ মহিলাকে থানায় ওসি কামাল কিভাবে ভয়ভীতি দেখিয়ে আমাকে ও সাংবাদিক বেলালকে মিথ্যা মামলায় ফাঁসানোর হুমকি দেন, সব রেকর্ড তো আছে। এর ৩ দিন পরইতো গণপিটুনির নাটক সাজিয়ে রাত ১১টার পর চেকপোস্ট সরিয়ে আমাকে হত্যার চেষ্টা চালায়। আর শাহাদত চেয়ারম্যান আমাকে কেন পাহারা দেয় আর কখন দৌড়ালো তা আমি জানি না, অথচ সেটা ওসি কামাল জানেন! ঘটনা ঘটলো সাধনপুর ইউনিয়নে আর এখানে কালীপুর ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যানের ভূমিকা কি? তবে এটা সত্য যে, আমার উপর হামলাকারীরা সকলেই কালীপুর ইউনিয়নের চিহ্নিত সন্ত্রাস, ডাকাত, কিশোর গ্যাং ও পুলিশের সোর্স। আমার মনে হয় এমন অবান্তর বক্তব্য দেওয়ার সময় তিনি মাতাল অবস্থায় ছিলেন, তাকে ডোপ টেস্ট করানো দরকার মনে করছি।’
এদিকে সাংবাদিক মনছুরের ওপর চলে আসা দীর্ঘদিন ধরে পুলিশি হয়রানী ও নির্যাতন, হত্যাচেষ্টা এবং মিথ্যা মামলায় ফাঁসানোর ঘটনায় জড়িতদের সর্বোচ্চ শাস্তি সহ অবিলম্বে মিথ্যা মামলা প্রত্যাহারের জোর দাবী জানান তিনি।
এ বিষয়ে জানার জন্য বাঁশখালী উপজেলার ৫নং কালীপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান এডভোকেট আ.ন.ম শাহাদত আলমের মঠোফোনে একাধিক বার কল করেও রিসিভ না করায় বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।
এ ব্যাপারে সাধনপুর ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান খোন্দকার মো. সালাহউদ্দিন কামাল জানান, ১৬ এপ্রিল রাতে দক্ষিণ সাধনপুর এলাকার বদর পীর শাহ মাজারের সামনে ঘটা ঘটনা সম্পর্কে তিনি কিছুই জানেন না। তাই এই বিষয়ে ওসিকে ফোন দেওয়ার প্রশ্নই আসে না বলে জানান তিনি।
ঘটনার পরপর আনোয়ারা-চন্দনাইশ-বাঁশখালী সার্কেল এএসপি কামরুল ইসলাম এক সাংবাদিককে বলেছিলেন, ‘আমি বিষয়টি দেখতেছি।’ পরে তিনি থানা ও ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে ওসির সাথে একমত পোষণ করলে, তাকে পূর্বের ঘটে যাওয়া ঘটনা অবগত করে গণমাধ্যমে প্রকাশিত সকল সংবাদের কপি দেওয়া হয়। অতঃপর তিনি বলেন, ‘আরেকটি নিউজ করে দেন’। সেসময় পুলিশ সুপারের মোবাইল ফোনে একাধিকবার কল করেও বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।
Print This Post