নিজস্ব প্রতিবেদক | আপডেট : ২৭ জুলাই, ২০২২ বুধবার : ১০.২০ পিএম
এবার সাংবাদিকদের এক হাত নিলেন কক্সবাজারের চকরিয়া-পেকুয়া আসনের সাংসদ জাফর আলম। পেকুয়া উপজেলা আ.লীগের সম্মেলনে স্থানীয় সাংবাদিকদের উদ্দেশ্য করে তিনি কুরুচিপূর্ণ মন্তব্য করেছেন।
মঙ্গলবার (২৬ জুলাই) বিকেলে পেকুয়া উপজেলা আ.লীগের সম্মেলনে তিনি সাংবাদিকদের নিয়ে কুরুচিপূর্ণ মন্তব্য করেন।
এই সম্মেলনে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে সাংসদ জাফর আলম বলেন, ‘পেকুয়ায় তিনটি ঐতিহ্যবাহী পরিবার রয়েছে। এরমধ্যে শিলখালীর আসাদুজ্জামান চৌধুরীর পরিবার একটি। আমি আওয়ামী লীগ বাড়ানোর জন্য বিএনপি নেতা আসাদুজ্জামানকে আওয়ামী লীগে নিয়েছি। সেখানে কাজিউল ইনসান ভোট করলে ভোট পায় না। এই অভিশাপ থেকে মুক্তি পেতে আমি আসাদুজ্জামানকে সৃষ্টি করেছি। মগনামায় কোনো আওয়ামী লীগ নেই। সেখানে ডাকাত ইউনুছের পক্ষ নিয়ে কিছু সাংবাদিক শরাফত উল্লাহ ওয়াসিমের বিপক্ষে লেখালেখি করে। আমি যাকে সৃষ্টি করি তাঁর বিপক্ষেই সাংবাদিকেরা বিদ্রোহ করে। এরা সাংবাদিক নয়, ফেসবুক সাংঘাতিক। এখন কথা হচ্ছে দল আমরা চালাবো নাকি সাংঘাতিকেরা চালাবে?’
এদিকে সাংসদ জাফর আলমের এমন মন্তব্যে পেকুয়া উপজেলার সাংবাদিকদের মাঝে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। সাংবাদিকদের নিয়ে এমপি জাফরের কুরুচিপূর্ণ বক্তব্যের প্রতিবাদে সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে।
বুধবার (২৭ জুলাই) বিকেল ৪টায় পেকুয়া উপজেলা অনলাইন প্রেস ক্লাবে এক প্রতিবাদ সভা অনুষ্ঠিত হয়।
প্রতিবাদ সভায় সাংবাদিকরা বলেন, ‘সাংসদ জাফর আলম পেকুয়ার এক মাত্র স্টেডিয়াম দখল করে নির্মাণ সামগ্রী রেখেছেন। স্টেডিয়ামের অবকাঠামো ধ্বংস করেছেন। এ বিষয়ে বিভিন্ন পত্রিকায় প্রতিবেদন প্রকাশ করলে সাংবাদিকরা তাঁর কাছে সাংঘাতিক হয়ে যায়। পেকুয়া বাজারে অসহায় মানুষের জমি দখল করে সুরম্য মার্কেট নির্মাণ করছেন এমপি জাফর। সেটা নিয়ে প্রতিবেদন করলে সাংবাদিকেরা সাংঘাতিক হয়ে যান। বানৌজা শেখ হাসিনা সড়ক নিয়ে কোটি কোটি টাকা বাণ্যিজ্য করেছেন সাংসদ জাফর। সেসব নিয়ে সংবাদ প্রকাশ করলে সাংবাদিকেরা তাঁর কাছে সাংঘাতিক। পেকুয়ায় বিএনপি জামাত থেকে অনুপ্রবেশ ঘটিয়ে টাকার বিনিময়ে তাঁদের আওয়ামী লীগের পদ পদবী দিচ্ছেন। সেসব নিয়ে রিপোর্ট করলে সাংসদ মেজাজ হারিয়ে ফেলেন, কুরুচিপূর্ণ বক্তব্য দেন।’
প্রতিবাদ সভায় বক্তারা আরও বলেন, সাংসদ জাফর শুধু আওয়ামী লীগের সম্মেলন নয়, এর আগে দলীয় বিভিন্ন মিটিংয়ে ও উপজেলা প্রশাসন আয়োজিত বিভিন্ন সভাতেও সাংবাদিকদের নিয়ে কটুক্তি করেছেন। মূলত পেকুয়ার সাংবাদিকদের লেখনির কারণে বিভিন্ন অনিয়ম দূর্নীতি প্রকাশ পাওয়ায় সাংসদ দিন দিন বেসামাল হয়ে যাচ্ছেন। একারণে তিনি সাংবাদিকদের নিয়ে একের পর এক অশালীন, কুরুচিপূর্ণ মন্তব্য করে যাচ্ছেন। আমরা সাংসদের এরকম অসংলগ্ন মন্তব্যের তীব্র নিন্দা জানাচ্ছি।’
এসময় বক্তারা বলেন, ‘মাননীয় সাংসদ আপনার অতীত ইতিহাস আমাদের জানা আছে। অতিরিক্ত বাড়াবাড়ি কোনো সময়েই ভালো ফল বয়ে আনে না। আমাদের আশা থাকবে, আপনি আপনার কুরুচিপূর্ণ বক্তব্য প্রত্যাহার করে নিবেন।’
প্রতিবাদ সভায় বক্তব্য দেন দৈনিক প্রথম আলোর চকরিয়া-পেকুয়া প্রতিনিধি এস এম হানিফ, দৈনিক অবজারভার প্রতিনিধি নাজিম উদ্দিন, দৈনিক সাঙ্গু ও দৈনিক কক্সবাজার প্রতিনিধি মুহাম্মদ হাশেম, দৈনিক পূর্বদেশ প্রতিনিধি এম দিদারুল করিম, দৈনিক রুপসীগ্রাম প্রতিনিধি জালাল উদ্দিন, দৈনিক ইনানী প্রতিনিধি রিয়াজ উদ্দিন, দৈনিক হিমছড়ি প্রতিনিধি সাইফুল ইসলাম বাবুল, দৈনিক সুপ্রভাত বাংলাদেশ প্রতিনিধি মো. জুবাইদ, সিপ্লাস টিভি প্রতিনিধি এফ এম সুমন, দৈনিক সমকাল প্রতিনিধি বেলাল উদ্দিন, খোলা কাগজের প্রতিনিধি রেজাউল করিম রেজা, আপনকন্ঠের প্রতিনিধি রেজাউল করিম রাজু, মানবজমিন প্রতিনিধি জয়নাল আবেদীন, দৈনিক আজকের সংবাদ প্রতিনিধি আমিনুল ইসলাম বাহার, দৈনিক গণসংযোগ প্রতিনিধি আজিজুল হক, দৈনিক নাগরিক ভাবনার প্রতিনিধি শাহাদাত হোসেন, চ্যানেল এস প্রতিনিধি দেলোয়ার হোসেন, আনন্দ টিভির প্রতিনিধি আমিরুল ইসলাম রাশেদ, দৈনিক আমাদের কক্সবাজার প্রতিনিধি মফিজ সিকদার, দৈনিক আজকের বসুন্ধরা প্রতিনিধি আসাদুজ্জামান অপু, সাপ্তাহিক সময়ের নিউজের প্রতিনিধি রেজাউল করিম, দৈনিক মেহেদীর প্রতিনিধি মো. আরমান, দৈনিক কক্সবাজার বার্তার প্রতিনিধি মোহাম্মদ ইউনুছ, দৈনিক স্বাধীন সংবাদের প্রতিনিধি ফারুকী, দৈনিক রুপালী সৈকতের প্রতিনিধি মিজানুর রহমান, দৈনিক কক্সবাজার ৭১ প্রতিনিধি মো. ছাদেক, পলাশী বাংলা টিভি প্রতিনিধি তৌহিদুল ইসলাম প্রমুখ।
সভায় পেকুয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলনে চকরিয়া-পেকুয়ার সাংসদ জাফর আলম কর্তৃক সাংবাদিকদের নিয়ে কুরুচিপূর্ণ বক্তব্যের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানান পেকুয়ায় কর্মরত সাংবাদিকেরা। একই সঙ্গে এই বক্তব্য প্রত্যাহারেরও দাবি জানান তাঁরা।
সিটিজি সান/এমবিইউ
Print This Post