পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ড

কাজ না করেই নয়টি প্রকল্পের অর্থ আত্মসাৎ, অভিযোগ গেল দুদকে

আপডেট: ২৫ এপ্রিল ২০২২ ১:৩৮ অপরাহ্ন

নিজস্ব প্রতিবেদক | আপডেট : ২৫ এপ্রিল, ২০২২ সোমবার : ০১.৪০ পিএম

নিজস্ব প্রতিবেদক :
সরকারের ইশতেহার ভিশন-২০২১ সালের মধ্যে পাবর্ত্য চট্টগ্রাম অঞ্চলে মানুষের দারিদ্র্য বিমোচন ও বৈষম্য হ্রাস, কৃষি, খাদ্য ও পুষ্টি খাদ্য নিরাপত্তা অর্জনে নিশ্চয়তার লক্ষ্যে তিন পাবর্ত্য জেলায় একাধিক প্রকল্পের বাস্তবায়ন গ্রহণ করলেও সেখানে নামমাত্র কাজ করে প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হয়েছে। তার মধ্যে দুইটি প্রকল্পের কাজ দ্বিতীয় মেয়াদ বাড়িয়ে বর্তমানে চলমান রয়েছে। প্রকল্পের অর্থ লুটপাট করতে সেখানে কয়েকটি জায়গায় প্রকল্পের সাইন বোর্ড ঝুলিয়ে ও ফটোসেশন করে গুটিকয়েক স্থানে চারা রোপনের দৃশ্যমান করা হয়েছে। এতে কাজ না করে একই প্রকল্প পরিচালকের আওতায় ৯ টি প্রকল্পের মাধ্যমে প্রায় ৪৭ কোটি টাকার হরিলুট করার অভিযোগে উঠেছে প্রকল্পের পরিচালক ও সহকারী পরিচালকের বিরুদ্ধে।

সম্প্রতি প্রকল্পের অনিয়ম নিয়ে দুর্নীতি দমন কমিশনে (দুদক) জেলা সমন্বিত কার্যালয়, চট্টগ্রাম-২ এ দফতরে একটি অভিযোগ দিয়েছেন স্থানীয় সচেতন মহল।

অভিযোগ রয়েছে, এর আগেও প্রকল্পের অনিয়ম নিয়ে দুদকে অভিযোগ গেলে রহস্যজনকভাবে এসব তদন্ত ধামাচাপা পড়ে যাচ্ছে। এতে অনিয়ম করেও পার পেয়ে যাচ্ছেন দুর্নীতিবাজরা। ইতিপূর্বে দুদকে এবিষয়ে প্রকল্পের অর্থ আত্মসাতের দুদকে অভিযোগ দেয়া হয়েছে।

একই পরিচালকের আওতায় থাকা নয়টি প্রকল্পের মধ্যে বর্তমানে মিশ্র ফল চাষ প্রকল্প এবং কমলা ও উচ্চ মূল্যের মসলা চাষ প্রকল্প চলতি বছরের জুন মাসে প্রকল্পের কাজ শেষ হওয়ার কথা রয়েছে।

বাকি প্রকল্পগুলোর কাজ সম্প্রতি সময়ে প্রকল্পের কাজ শেষ করা হয়েছে। তার মধ্যে সেখানে অধিকাংশ জেলা ও উপজেলাতে নামমাত্রে কাজ দেখিয়ে পুরো প্রকল্পের অর্থ বাগবাটোয়ারা করা হয়েছে বলে জানা গেছে।

পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ডের আওতায় পুরো প্রকল্পের সীমানা নির্ধারণ করা হয়েছে তিন পাবর্ত্য জেলার ২৬ টি উপজেলায়। প্রকল্পের কাজ বাস্তবায়নে অর্থ বরাদ্দ দিয়েছে সরকার।

এ প্রকল্পগুলো পরিচালক হলেন, শফিকুল ইসলাম ও সহকারী পরিচালক মো. কামরুজ্জামান।

যেসব প্রকল্পগুলো ইতিমধ্যে শেষ করেছে সেগুলো হলো, পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চলের অনগ্রসর জনগোষ্ঠীর আয়বর্ধক কর্মসূচী হিসাবে উন্নত জাতের বাঁশ উৎপাদন কল্প। ২০১৬ সাল থেকে জুন ২০২১ সাল পর্যন্ত এ প্রকল্পের কাজ বাস্তবায়নকারী সংস্থা হল পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ড। এ প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়েছে জিওবি ২৩৭৮ দশমিক শূন্য শূন্য লাখ টাকা, সর্বমোট জিওবি ২৩৭৮দশমিক শূন্য শূন্য লাখ টাকা।

দ্বিতীয়টি প্রকল্পটি হলো, পার্বত্য চট্টগ্রাম প্রত্যন্ত এলাকায় সোলার প্যানেল স্থাপনের মাধ্যমে বিদ্যুৎ সরবরাহ প্রকল্প। প্রকল্পের বাস্তবায়নকাল সময় নির্ধারণ করা হয়েছে জুলাই ২০১৫ থেকে জুন ২০১৯ সাল পর্যন্ত। এ প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়েছে ৭৬০৬ দশমিক একত্রিশ লাখ টাকা। ১৩ হাজার ৭০৮ জন সুবিধাভোগী জনগোষ্টির মাঝে সুবিধা দিতে এ প্রকল্প বাস্তবায়নের কথা উল্লেখ করা হয়।

তৃতীয় প্রকল্প হলো, পার্বত্য চট্টগ্রাম এলাকায় টেকসই সামাজিক সেবা প্রদান প্রকল্প।

এছাড়া, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি ভিত্তিক দক্ষ জনবল সৃষ্টির মাধ্যমে আত্মকর্মসংস্থান সৃষ্টিকরণ প্রকল্প, অঞ্চলের অস্বচ্ছল ও প্রান্তিক পরিবারের নারী উন্নয়নে গাভী পালন প্রকল্প, রাঙ্গামাটির গ্রামীণ সড়ক অবকাঠামো নির্মাণ প্রকল্প এবং মিশ্র ফসল চাষের মাধ্যমে পুনর্বাসন প্রকল্প (২য় পর্যায়)।

এদিকে সরেজমিনে গিয়ে তদন্ত করলে শুধুমাত্র খাগড়াছড়ি জেলাতে গুটিকয়েক এলাকায় প্রকল্পের দৃশ্যমান হলেও তার মধ্যে রাঙ্গামাটি ও বান্দরবান জেলায় নামমাত্র প্রকল্পের কাজ দেখিয়ে ২০১৬ সাল থেকে একই প্রকল্প পরিচালক ও সহকারী পরিচালকের আওতায় থাকা এসব প্রকল্পগুলো কোনো কাজ না করে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা পরস্পর যোগসাজশ করে এসব প্রকল্পের অর্থ আত্মসাৎ করা হয়েছে।

জানতে চাইলে প্রকল্প পরিচালক শফিকুল ইসলমকে একাধিকবার ফোন করা হলেও তিনি সংযোগ তোলেননি। পরে সহকারী পরিচালক মো. কামরুজ্জামানকে তার ব্যক্তিগত মুঠোফোনে ফোন করা হলে তার মুঠোফোন বন্ধ পাওয়া যায়।

জানতে চাইলে পাবর্ত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মুজিবুল আলমকে একাধিকবার মুঠোফোনে কল করা হলে সংযোগ মেলেনি।

সিটিজিসান ডটকম/সিএস

Print This Post Print This Post