শীর্ষ ঋণ খেলাপির অভিযোগে এস এ গ্রুপের চেয়ারম্যান গ্রেপ্তার

আপডেট: ১৭ অক্টোবর ২০১৮ ১০:১৪ অপরাহ্ন

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট| সিটিজিসান.কম

চট্টগ্রাম: শীর্ষ ঋণ খেলাপির অভিযোগে চট্টগ্রাম ভিত্তিক শিল্পপ্রতিষ্ঠান এস এ গ্রুপের চেয়ারম্যান শাহাবুদ্দিন আলমকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। বুধবার বেলা ১২টার দিকে রাজধানী গুলশানের একটি হোটেল থেকে তাকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।

বিষয়টি নিশ্চিত করে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) পরিদর্শক আশরাফুল ইসলাম জানান, শাহাবুদ্দিন আলম বেসরকারি খাতের মার্কেন্টাইল ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদের সদস্য ও এস এ অয়েল রিফাইনারি ও শামান্নাজ সুপার অয়েল কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালকের দায়িত্ব পালন করছেন। তার বিরুদ্ধে প্রাইম ব্যাংকের দায়ের করা ৪৩টি অপরাধ ও ১টি অর্থঋণ আদালতের মামলা রয়েছে। তিনি ব্যাংকিং খাতের একজন শীর্ষ খেলাপি।

শাহাবুদ্দিন আলমকে আদালতের মাধ্যমে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আবেদন তৈরীর প্রস্তুতি চলছে। এরপর তাকে আদালতে হাজির করা হবে বলে জানান তিনি।

তিনি বলেন, শাহাবুদ্দিন আলম বিভিন্ন ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে আর টাকা ফেরত দেননি। বাণিজ্যিক কার্যক্রম পরিচালনার জন্য বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি বাণিজ্যিক ব্যাংক বহির্ভুত আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে বিভিন্ন সময়ে বিপুল পরিমানে ঋণ নিয়ে সুবিধা গ্রহণ করে এস এ গ্রুপ। এর মধ্যে ২০১৩ সালের রাজনৈতিক অস্থিরতা ও বৈশিক মন্দা বিবেচনায় বড় ঋণ পূনর্গঠনে দেওয়া বিশেষ সুবিধা নেয় তারা।

এ গ্রুপের মালিকানাধীন দুই প্রতিষ্ঠান এস এ আয়েল রিফাইনারী ও শামান্নাজ সুপার অয়েল লিমিটেড। মাত্র এক শতাংশ ডাউন পেমেন্টে প্রতিষ্ঠানগুলোর ৯২৮ কোটি টাকা ঋণ পূন:তফসিল করে। কিস্তি পরিশোদের কথা থাকলেও তা করেনি এস এ গ্রুপ।

২৬ অক্টোবর প্রায় ৫৭৪ কোটি টাকা ঋণের পাওনা আদায়ে এ গ্রুপের তিন প্রতিষ্ঠানের সব মেশিনারজি, জাহাজ ও দুই দশমিক ৪৪ একর জমি নিলামে তুলে ইসলামী ব্যাংক। বন্ধকী সম্পত্তির নিলামের মাধ্যমে বিক্রীর নোটিশ দিয়েছে ইসলামী ব্যাংক আগ্রাবাদ শাখা। অনাদায়ী পাওনা আছে প্রিমিয়ার লিজিং এন্ড ফাইন্যান্স লিমিটেডের ৩৬ কোটি ১৮ লাখ এবং ন্যাশনাল ব্যাংকের ৩৭০ কোটি টাকা।

তথ্যমতে, নথি জালিয়াতি করে ২২৫ কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগে গত বছরের ১৫ মার্চ মামলা দায়ের করে ন্যাশনাল ব্যাংক কর্তৃপক্ষ। ব্যাংকের আগ্রাবাদ করপোরেট শাখার সাবেক ভাইস প্রেসিডেন্ট ও ম্যানেজার নিজাম আহমেদের দায়ের করা এ মামলায় এস এ অয়েল রিফাইনারী লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক শাহাবুদ্দিন আলম ও সিনিয়র উপব্যবস্থাপনা পরিচালক (ডিজিএম) দিদারুল আলমকে আসামি করা হয়।

এরপর আদালত ডবলমুরিং থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে মামলা এজাহার হিসেবে গণ্য করে আসামিদের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারের নির্দেশ দেন। ২৭ মার্চ মামলাটি এজাহার হিসেবে থানায় রেকর্ড করা হয়। তদন্তের দায়িত্ব পান উপপরিদর্শক (এসআই) কায়সার হামিদ। কিন্তু দেড় বছরেরও বেশি সময় পার হয়ে গেলেও চট্টগ্রামের পুলিশ আসামিদের গ্রেপ্তার করেনি। বারবার তাগাদা দেয়ার পাশাপাশি এ নিয়ে তদন্তকারী কর্মকর্তাকে কারণ দর্শানোর নোটিশও দেন আদালত।

উল্লেখ্য, ১৯৮৮ সাল থেকে দেশে ব্যবসা চালিয়ে আসছে চট্টগ্রাম ভিত্তিক ব্যবসা প্রতিষ্ঠান এস এ গ্রুপ। প্রথমে ভোজ্যতেল পরিশোধন খাতে বিনিয়োগ করলেও বর্তমানে এস এ গ্রুপের রয়েছে ১৭টি ব্যবসায়িক ইউনিট। বার্ষিক ২৫০ কোটি টাকা টার্নওভারের এ শিল্প গ্রুপে কর্মরত আছেন আড়াই হাজারেরও বেশি কর্মী। ভোজ্যতেলের ব্রান্ড মুসকান সয়াবিন তেল এস এ গ্রুপেরই একটি পণ্য।

সিএস/সিএম

Print This Post Print This Post