কর্ণফুলী টানেল নির্মাণের অনিশ্চয়তা কেটেছে, অক্টোবরেই কাজ শুরু

আপডেট: ২৫ অগাস্ট ২০১৮ ৯:১৪ অপরাহ্ন

নিজস্ব প্রতিবেদক : চট্টগ্রামে কর্ণফুলী নদীর তলদেশে টানেল নির্মাণ প্রকল্পে আলোর মুখ দেখা যাচ্ছে। অক্টোবরে শুরু হচ্ছে টানেলের খনন কাজ। পাঁচ বছর পর এই প্রকল্পের কাজ শেষে টানেল চালু হলে শহরের সঙ্গে নদীপাড়ের জনপদ আনোয়ারা উপজেলার সরাসরি সংযোগ স্থাপন হবে। গড়ে উঠবে সাংহাইয়ের মডেলে ‘ওয়ান সিটি টু টাউন’।

অর্থের সংস্থান না হওয়ার প্রায় সাড়ে ৮ হাজার কোটি টাকার এই প্রকল্পটি এতদিন আলোর দেখা পায়নি। সেই সংকট কেটে গেছে। টানেল খননের জন্য চীন থেকে এসেছে টানেল বোরিং মেশিন (টিএমবি)।

প্রকল্পের ২৪ শতাংশ সার্বিক অগ্রগতি হয়েছে বলে জানিয়েছেন বাস্তবায়নকারী সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। শনিবার (২৫ আগস্ট) মন্ত্রী নগরীর পতেঙ্গায় প্রকল্প এলাকায় গিয়ে টিএমবি মেশিনসহ সার্বিক কার্যক্রম পরিদর্শন করেন।

ওবায়দুল কাদের বলেন, বোরিং মেশিন আসার মধ্য দিয়ে এই প্রকল্পের কাজে নতুন মাত্রা যুক্ত হয়েছে। অক্টোবরের শেষ সপ্তাহে টানেলের বোরিং মেশিন কাজ শুরু করবে। এখন কাজ শুরুর আগে প্রস্তুতি চলছে। বোরিং মেশিন যখন এসে গেছে, টানেলের ভবিষ্যত নিয়ে সন্দেহ থাকার কোনো কারণ নেই। ২৪ শতাংশ সার্বিক অগ্রগতি হয়েছে টানেলের।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, প্রকল্পের মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ১০৫৫ দশমিক ৮৩ মিলিয়ন মার্কিন ডলার বা ৮ হাজার ৪৪৬ দশমিক ৬৪ কোটি টাকা। এর মধ্যে বাংলাদেশ সরকার দিচ্ছে ৩৫০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার বা আড়াই হাজার কোটি টাকার মতো। চীন সরকার দিচ্ছে ৭০৫ দশমিক ৮০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। তবে মূল টানেলের পুরো নির্মাণ ব্যয় বহন করছে চীন সরকার।

২০১৭ সালের ৬ নভেম্বর থেকে চীনের রাষ্ট্রায়ত্ত এক্সিম ব্যাংকের সঙ্গে সরকারের ঋণচুক্তির আওতায় অর্থছাড় শুরু হয়। গত বছরের ৫ ডিসেম্বর ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানকে ১৪১ দশমিক ১৬ মিলিয়ন মার্কিন ডলার পরিশোধ করা হয়েছে।

এই প্রকল্পের মেয়াদকাল ধরা হয়েছে ২০১৭ সালের ৫ ডিসেম্বর থেকে পরবর্তী পাঁচ বছর।

সূত্র জানায়, কর্ণফুলী নদীর তলদেশ দিয়ে এই টানেল হবে চার লেনের। মূল টানেল হবে দুইটি টিউবসহ ৩ দশমিক ৪ কিলোমিটার। টানেলের পূর্ব ও পশ্চিম প্রান্তে ৫ দশমিক ৩৫ কিলোমিটার অ্যাপ্রোচ সড়ক হবে। সঙ্গে হবে ৭২৭ মিটার ওভারব্রিজও।

দেশের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলে যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন এবং এশিয়ান হাইওয়ে নেটওয়ার্কের সঙ্গে সংযুক্তিসহ টানেল নির্মাণের ক্ষেত্রে সাতটি প্রধান লক্ষ্য নির্ধারণ করেছে সরকার।

মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেন, টানেলের মডেলটা হচ্ছে সাংহাইয়ের মতো ওয়ান সিটি টু টাউন। নদীর ওপারেও একটা সিটি গড়ে উঠবে, এপারেও একটি পরিকল্পিত সিটি গড়ে উঠবে। চট্টগ্রামে কিন্তু নদীর এপারে (পতেঙ্গা) শহর, ওপারে (আনোয়ারা) নেই। এই প্রকল্পে কিন্তু ওপারেও কমার্শিয়াল ও ইন্ডাস্ট্রিয়াল নগরায়ন (আরবানাইজেশন) হবে।

তবে প্রকল্পের জন্য ভূমি অধিগ্রহণ নিয়ে এখনও জটিলতা কাটেনি বলে সূত্র জানিয়েছে।

সূত্রমতে, প্রকল্পের জন্য মোট প্রয়োজনীয় ভূমির পরিমাণ ৩৮৩ দশমিক ০৯৮৫ একর। এরই মধ্যে ২৩১ দশমিক ৯৯ একর ভূমি ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান চায়না কমিউনিকেশন অ্যান্ড কনস্ট্রাকশন কোম্পানিকে হস্তান্তর করা হয়েছে। আরও ১৫১ দশমিক ০৯৮৫ একর জমি এখনও অধিগ্রহণের পর্যায়ে আছে।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্বাচনী অঙ্গীকার ছিল কর্ণফুলীতে টানেল নির্মাণ। ক্ষমতায় এসেই সরকার এই মহাপ্রকল্পে হাত দেয়। নানা জটিলতা পেরিয়ে ২০১৬ সালের ১৪ অক্টোবর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং চীনা প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং যৌথভাবে কর্ণফুলী টানেল প্রকল্পের ভিত্তিফলক উদ্বোধন করেন।

ভবিষ্যতে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার থেকে মিয়ানমার হয়ে চীনের কুনমিং প্রদেশ পর্যন্ত সরাসরি আন্তঃদেশীয় মহাসড়ক যোগাযোগের লক্ষ্য নিয়েই সরকার এই টানেল মহাপ্রকল্প হাতে নিয়েছে। সংশ্লিষ্টদের আশা, এই টানেল নির্মাণের মধ্য দিয়ে দেশের অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির ব্যাপক সম্ভাবনার দ্বার খুলে যাবে।

 

Print This Post Print This Post