মিথ্যা অভিযোগ বা মামলা দায়ের করণে শাস্তি সংক্রান্তে আইনী বিশ্লেষণ

আপডেট: ৮ মে ২০২৩ ১২:০৯ পূর্বাহ্ন

আপডেট : ৮ মে, ২০২৩ সোমবার : ১০:৫৬ এএম
সাধারণ ভুক্তভোগীরা আদালতের কাঠগড়ায় দাঁড় হয়ে ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠার জন্য যেখানে প্রাণপণ লড়ায়ে মেতে উঠে ঠিক ব্যতিক্রমী কতেক মানব প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করার নিমিত্তেও মিথ্যা অভিযোগ/মামলা দায়ের করণে ও মিথ্যা সাক্ষ্য তৈরী-সাক্ষ্যদানে জুুুুুডিশিয়াল ডিশডিড ব্যবস্থাকে মামলা ভারে ভারাক্রান্ত করে রাখে। আজ মিথ্যা অভিযোগ বা মামলা দায়ের করণে কতিপয় আইনে প্রদত্ত শাস্তির বিধানাবলী সবিস্তারে আলোকপাত করছি- বৃটিশ শাসনামলে প্রণীত ফৌজদারি কার্যবিধি’ ১৮৯৮ এর ২৫০ ধারায় মিথ্যা অভিযোগের শাস্তির বিধান রয়েছে।

(ক) ম্যাজিস্ট্রেট যদি আসামিকে খালাস দেওয়ার সময় প্রমাণ পান যে মামলাটি মিথ্যা ও হয়রানিমূলক, তাহলে ম্যাজিস্ট্রেট বাদীকে কারণ দর্শানোর নোটিশসহ ক্ষতিপূরণের আদেশ দিতে পারেন।

(খ) দণ্ডবিধির ২০৯ ধারামতে, মিথ্যা অভিযোগ দায়ের করলে সর্বোচ্চ দুই বছর কারাদণ্ডসহ অর্থদণ্ডে দণ্ডিত হতে হবে। অধিকন্তু,২১১ ধারায় মিথ্যা ফৌজদারি মামলা দায়ের করার শাস্তির ক্ষেত্রে বলা হয়েছে, কোনো ব্যক্তি ক্ষতি সাধনের উদ্দেশ্যে কোনো অভিযোগ দায়ের করলে অথবা কোনো অপরাধ সংঘটিত করেছে মর্মে মিথ্যা মামলা দায়ের করলে মামলা দায়েরকারীকে দুই বছর পর্যন্ত কারাদণ্ড বা অর্থদণ্ড কিংবা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত করারও বিধান রয়েছে। (গ) নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন ২০০০-এর ১৭(২) ধারায়ও মিথ্যা মামলা দায়েরের শাস্তির কথা উল্লেখ আছে। এখানে বলা হয়েছে, যদি কোনো ব্যক্তি কারও ক্ষতি সাধনের উদ্দেশ্যে এই আইনের অন্য কোনো ধারায় মামলা করার জন্য আইনানুগ কারণ নেই জেনেও মিথ্যা অভিযোগ দায়ের করেন অথবা করান, তবে সেই অভিযোগকারী অনধিক সাত বছর সশ্রম কারাদণ্ডে দণ্ডিত হবেন এবং অতিরিক্ত অর্থদণ্ডেও দণ্ডিত হবেন। (ঘ) দুর্নীতি দমন কমিশন আইন, ২০০৪ এর ধারা ২৮ গ (১) এ বলা হয়েছে মিথ্যা জেনে বা তথ্যের সত্যতা সম্পর্কে নিশ্চিত না হয়ে কোন ব্যক্তি ভিত্তিহীন কোন তথ্য প্রদান করে এবং যে তথ্যের বিত্তিতে কোন তদন্ত বা বিচার কার্য পরিচালনার সম্ভাবনা থাকে, তাহলে তিনি মিথ্যা তথ্য প্রদান করেছেন বলে গণ্য হবে। উক্ত অপরাধের জন্য তিনি অন্যূন ২ (দুই) বছর বা অনধিক ৫ (পাঁচ) বছর সশ্রম কারাদণ্ড বা অর্থদণ্ড বা উভয়দণ্ডে দণ্ডিত হবেন। (ঙ) শিশু আইন, ২০১৩ এর ৮৩ ধারা মতে কোন ব্যক্তি এই আইনের অধীন কোন মামলার কার্যক্রমে কোন আদালতে কোন শিশুর সম্পর্কে যদি এমন কোন তথ্য প্রকাশ করেন যা মিথ্যা, বিরক্তিকর বা তুচ্ছ প্রকৃতির তাহলে আদালত প্রয়োজনীয় তদন্ত এবং শো-কজ সাপেক্ষে কারণ লিপিবদ্ধ করে যার বিপক্ষে উক্ত তথ্য প্রদান করা হয়েছে তাকে ২৫ (পঁচিশ) হাজার টাকার ঊর্ধ্বে যেকোন পরিমাণ অর্থ ক্ষতিপূরণ বাবদ প্রদান করার জন্য সংশ্লিষ্ট মিথ্যা তথ্য প্রদানকারীর প্রতি নির্দেশ প্রদান করতে এবং অনাদায়ে অনধিক ৬ (ছয়) মাস বিনাশ্রম কারাদণ্ড প্রদান করতে পারবে। (চ) পর্নোগ্রাফী নিয়ন্ত্রণ আইন, ২০১২ সালের ১৩ (১) ধারা: সর্বোচ্চ ২(দুই) বছর সশ্রম কারাদণ্ড এবং ১,০০,০০০ (এক লক্ষ) টাকা পর্যন্ত অর্থদণ্ড।

(ছ) পারিবারিক সহিংসতা (প্রতিরোধ ও সুরক্ষা) আইন, ২০১০, ধারা ৩২: অনধিক ১ (এক) বছর কারাদন্ড অথবা অনধিক ৫০ (পঞ্চাশ) হাজার টাকা অর্থদন্ড অথবা উভয় দন্ড।

(জ) যৌতুক নিরোধ আইন, ২০১৮, ধারা ৬: অনধিক ৫ (পাঁচ) বছর কারাদণ্ড বা অনধিক ৫০,০০০ (পঞ্চাশ হাজার) টাকা অর্থদণ্ড অথবা উভয় দণ্ড।

(ঝ)এসিড অপরাধ দমন আইন, ২০০২, ধারা ৮: সাত বছর সশ্রম কারাদণ্ড এবং অর্থদণ্ড।

(ঞ) আইন-শৃঙ্খলা বিঘ্নকারী অপরাধ (দ্রুত বিচার) আইন, ২০০২,ধারা ৬: অন্যুন দুই বছর এবং অনধিক পাঁচ বছর পর্যন্ত সশ্রম কারাদণ্ড এবং অর্থদণ্ড। ক্রান্তি কথায় বলতে চাই, মিথ্যা অভিযোগ বা মামলা দায়ের করণও দেশের প্রচলিত আইন অনুযায়ী যেমন শাস্তিযোগ্য অপরাধ তেমনি ধর্মীয় আইনেও এটি মারাত্মক অপরাধ। একটি মিথ্যা অভিযোগ/মামলা, মিথ্যা স্বাক্ষ্য দ্বারা একটি নিষ্পাপ ব্যক্তির জীবনের সাথে সাথে একটি পুরো পরিবারেরও কিন্তু মৃত্যু ঘটে। কাজেই আমাদের সকলের উচিত মিথ্যা অভিযোগ বা মামলা ও মিথ্যা স্বাক্ষ্য দেওয়া থেকে নিজেকে বিরত থাকা। নতুবা ঈদগাঁও উপজেলার রুনা ইসলামের মতো মিথ্যা মামলা দায়েরের ফলে চরম সাজা ভোগ করতে হবে।

লেখক:
অ্যাডভোকেট মোবারক হোসাইন সাঈদ
জজ কোট, কক্সবাজার।

Print This Post Print This Post