অপরাধী ধরেন সোর্স, মুক্তিপণ নিয়ে ছাড়েন এসআই

আপডেট: ১৪ এপ্রিল ২০২৩ ৩:০৮ অপরাহ্ন

নিজস্ব প্রতিবেদক | আপডেট : ১৪ এপ্রিল, ২০২৩ শুক্রবার : ৩:১৫ পিএম

পুলিশের ‘কথিত সোর্স’ আবদুর রহিম (২১)। যার নাম শুনলে এলাকার লোকজন আঁতকে উঠেন। তাঁর দৌরাত্মে অতিষ্ঠ সাধারণ মানুষ। বাঁশখালীর কালিপুর ইউনিয়নের সদর আমিন হাট এলাকার রেজাউল করিম প্রকাশ লেদুর ছেলে এই সোর্স আবদুর রহিম।

অভিযোগ আছে, নিরীহ লোকজনকে ফাঁসিয়ে অর্থ আদায় সহ নানা অপরাধে জড়িত সোর্স রহিম। তার বিরুদ্ধে পুলিশের সঙ্গে মিলে মাদক দিয়ে নিরীহ মানুষকে ফাঁসিয়ে দেওয়ার অভিযোগ অহরহ। সাধারণ মানুষ থেকে ব্যবসায়ীসহ সবার মাঝে আতংকের নাম এই সোর্স রহিম। প্রায়শই কেউ না কেউ তার টার্গেট হচ্ছে। সরাসরি কিংবা কৌশলে হাতিয়ে নিচ্ছে টাকা। মাদক দিয়ে ফাঁসিয়ে কিংবা পুলিশ কর্মকর্তাদের ভয় দেখিয়েও আদায় করা হয় টার্গেটকৃত ব্যক্তি থেকে টাকা।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, ভয়ংকর এই সোর্স রহিমকে আশ্রয় প্রশ্রয় দিচ্ছেন রামদাশ মুন্সীর হাট পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের উপপরিদর্শক (এসআই) মো. শহীদ। নিরীহ লোকজনকে ফাঁসিয়ে অর্থ আদায় এবং জুয়ার আসরসহ বিভিন্ন খাত থেকে চাঁদা আদায়ে জড়িত সোর্স রহিম। রহিম কোথাও আটকে গেলেই, মুহূর্তেই হাজির হন এসআই শহীদ। সম্প্রতি কয়েকটি ঘটনা পর্যালোচনা করেও উঠে আসে এমন চিত্র। এসব ঘটনায় ভুক্তভোগী কেউ থানায় আশ্রয় নিলে, উল্টো বিপাকে পড়েন বলেও প্রচার রয়েছে এলাকায়। রামদাশ মুন্সীর হাট পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের ভেতর কিংবা বাইরে অবাধ বিচরণ সোর্স রহিমের।

এদিকে, সোর্স রহিমের বিরুদ্ধে এসআই শহীদ সহ মিলে সদর আমিন আমিন হাট এলাকায় এক বিধবাকে মদ পাওয়া গেছে বলে মারধর ও নির্যাতনের অভিযোগ উঠে। সেই মহিলাকে আটকে রেখে ১৫ হাজার টাকা মুক্তিপণ আদায় করে তারপর ছেড়ে দেয়া হয়। সেদিন ওই মহিলার কাছ থেকে নগদ ১০ হাজার টাকা হাতিয়ে নেওয়া হয়। পরে সোর্স রহিমের বিকাশ নাম্বারে আরও ৫ হাজার টাকা আদায় করা হয়। ২৭ মার্চ সকাল ১১টার দিকে বাঁশখালী উপজেলার কালিপুর এলাকায় নিম কালীমন্দিরের সামনে এ ঘটনাটি ঘটে। ভুক্তভোগী কামরুন্নাহার চকরিয়া উপজেলার উত্তর হারবাং এলাকার কোরবানিয়া ঘোনার মৃত নুর হোসেনের স্ত্রী।

এ বিষয়ে ভুক্তভোগী কামরুন্নাহার বলেন, আমার আত্মীয়ের বাড়ি যাওয়ার পথে কালীপুর এলাকার একটা মন্দিরের সামনে সোর্স রহিম সহ ৩ জন ব্যক্তি আমাকে আটক করে। পরে মারধর ও নির্যাতন চালিয়ে অজ্ঞান করে ফেলেন। জ্ঞান ফিরলে আমার সাথে থাকা নগদ ১০ হাজার টাকা ও সোর্স রহিমের ব্যক্তিগত মোবাইল নাম্বারে (০১৮৪৬১৪০৮৯৭) বিকাশে ৫ হাজার টাকা মুক্তিপণ আদায় করে পুলিশের কাছে নিয়ে যায়। তার আগে সোর্স রহিম মিথ্যা মামলার ভয়ভীতি দেখিয়ে আমার মিথ্যা জবানবন্দির ভিডিও রেকর্ড করে। পুলিশের কাছে নিয়ে গেলে সোর্স রহিমের শিখিয়ে দেওয়া সব কথা পুলিশকে বললে পুলিশ আমাকে ছেড়ে দেন। আমার দেওয়া টাকা এসআই শহীদ আর রহিম ভাগাভাগি করে নিয়েছে।’

পরে ভুক্তভোগী আইনি প্রতিকার চেয়ে বাঁশখালী থানায় গেলে, লিখিত অভিযোগ গ্রহণ করে ওসি বিষয়টি তদন্তপূর্বক আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের আশ্বাস দেন বলে নিশ্চিত করেন কামরুন্নাহার।

অভিযোগ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে কথিত সোর্স রহিম বলেন, আমি পুলিশের সোর্স। তাই ঐ মহিলাকে মাদক বিক্রি করে আসার পথে আটক করি। মদ বিক্রি করে এলাকার যুবসমাজ নষ্ট করে ফেলতেছে, তাই মারধর করছি। পরে তাকে কষ্ট না দিয়ে ছেড়ে দেওয়ার জন্য বাড়িতে ফোন করে কামরুন্নাহার। এরপর আমার বিকাশে ৫ হাজার টাকা দেয়। পরে আমি তাকে শহীদ স্যারের কাছে নিয়ে গেলে তিনি ছেড়ে দেন।

এদিকে সিটিজিসানের হাতে আসা ৩৫ সেকেন্ড এর একটি ভিডিওতে সোর্স রহিম ও তার এক সঙ্গী মাদক দিয়ে ফাঁসানোর উদ্দেশ্য ইয়াবা নিয়ে যাওয়ার সময় এলাকাবাসী হাতেনাতে ধরে ফেললে, রহিমও অকপটে স্বীকার করেন বিষয়টি। আরেকটি অডিও কল রেকর্ডে ভুক্তভোগী কামরুন্নাহার আইনি প্রতিকার চেয়ে থানায় যাওয়ার বিষয়টি সোর্স রহিমকে খোদ ওসি ও ইনচার্জ সোলেমান ফোন করে তাৎক্ষণিক জানান বলে স্বীকার করেন এই কথিত সোর্স রহিম।

এছাড়াও কালীপুর সদর আমিন হাট এলাকার আরেক ভুক্তভোগী সখিনা বেগম বলেন, গত ২৭ মার্চ রাত ১১টায় সোর্স রহিম অন্তরালে থেকে রহিম আমার ছেলের টমটম গাড়ি রামদাস মুন্সিহাট তদন্ত কেন্দ্রে নিয়ে যায়। পরে গাড়িতে মদ পাওয়া গেছে বলে অপবাদ দেয়। পুলিশের কাছে গিয়ে অনেক চেষ্টায় টমটম গাড়িটি ছাড়াতে পারিনি। পরে কোন উপায়ন্তর না দেখে পুলিশের দু’জন রহিম নামের সোর্সের নিকট শরণাপন্ন হয়ে ১৫ হাজার ২০০ টাকা দিলে টমটমের ফিরে পাই। আরেক রহিম একই এলাকার আমির হোসেন প্রকাশ বাইশ্যার ছেলে।’

এ বিষয়ে জানতে চাইলে রামদাশ মুন্সীর হাট পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের উপপরিদর্শক (এসআই) মো. শহীদ বলেন, ‘সে তো আমাদের সোর্স না। মাঝেমধ্যে ইনফরমেশন দেয় আর কি। সে তো বাজারের নাইট গার্ড। মদ না পাওয়ায় মহিলাকে ছেড়ে দিয়েছি। রহিমের দৃষ্টিতে ঐ মহিলা অপরাধী। কিন্তু আমার দৃষ্টিতে সে অপরাধী নয়। কারণ, তাঁর সাথে আমি মাদক পাইনি। টাকা নেওয়ার কথা আমার জানা নেই।’

এ প্রসঙ্গে জানার জন্য বাঁশখালী থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো. কামাল উদ্দিনকে কল দেওয়া হলে রিসিভ করার পর প্রশ্ন করা হলে তিনি কথা না বলে সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেন। পরে একাধিকবার কল দেওয়া হলে তিনি রিসিভ করেননি।

Print This Post Print This Post