যৌতুকের মামলা তুলে নেয়ার দাবিতে ব্লেড দিয়ে যুবকের আত্মহত্যা চেষ্টা

নিজস্ব প্রতিবেদক | আপডেট : ২৯ ডিসেম্বর, ২০২২ বৃহস্পতিবার : ১১.২৫ এএম

চট্টগ্রামের বাঁশখালীতে যৌতুকের মামলা থেকে আপোষের শর্তে জামিন পেয়ে বাদীর পরিবারের বিরুদ্ধে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে মানহানিকর স্ট্যাটাস দেয়ার অভিযোগ ওঠেছে অভিযুক্তের বিরুদ্ধে।

তারই প্রেক্ষিতে গত মঙ্গলবার (২৭ ডিসেম্বর) বিকেলে উপজেলা সদরস্থ বাঁশখালী প্রেসক্লাবে আসামীর বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানিয়ে সংবাদ সম্মেলন করেছে বাদীর পরিবার।

সংবাদ সম্মেলনে বাদীনির বাড়িতে গিয়ে আত্মহত্যা করে সবাইকে ফাঁসানোর হুমকি দিয়ে আসামী শহিদ মুখে বিষ ও শরীরে ব্লেড মেরে ঔদ্বত্যপুর্ণ আচরণ ও অপ্রীতিকর তৎপরতা শুরু করে। পরে বাদিনীর পরিবার ৯৯৯- এ ফোন করে। তবে পুলিশ আসার পুর্বেই আসামী ঘটনাস্থল ত্যাগ করে বলে সংবাদ সম্মেলনে অভিযোগ করা হয়।

এনিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ফেসবুকে মামলার বাদী তাসলিমা ও তার পরিবারের সদস্যদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন ধরনের মানহানিকর স্ট্যাটাস দেয় শহিদুল। এর প্রতিকার চেয়ে বাঁশখালী থানায় একটি সাধারণ ডায়েরী (নং-১২০৪/২২) দায়ের করে তাসলিমার পরিবার। সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে শহিদুল ইসলামের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানান তাসলিমার পরিবার। সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন তাসলিমার পিতা মাওলানা নুরুল কাদের ও বড় ভাই বাঁশখালী হাসপাতালের সহকারী সার্জন ডা. রাশেদুল ইসলাম সহ পরিবারের অন্যান্য সদস্যরা।

জানা যায়, ২০২১ সালে পারিবারিকভাবে ইসলামি শরিয়ত মোতাবেক উপজেলার সরল ইউনিয়নের মিনজিরীতলা এলাকার নুর হোসেনের ছেলের সাথে পৌরসভার উত্তর জলদি খন্দকার পাড়া এলাকার নুরুল কাদেরের মেয়ে তাসলিমা জান্নাতের বিয়ে হয়। বর্তমানে তাদের সংসারে একটি ছেলে সন্তান রয়েছে। বিয়ের পর থেকে বিভিন্ন সময় যৌতুক দাবি করে আসছেন শহিদুল। তার দাবি অনুযায়ী বিভিন্ন সময় টাকাও দিয়েছেন শ্বশুর নুরুল কাদের।

গত ২৫ নভেম্বর শহীদুল ইসলাম ২ লক্ষ টাকা যৌতুকের দাবি নিয়ে তার স্ত্রীকে শ্বশুর বাড়িতে পাঠিয়ে দেন। টাকা না আনলে বাড়িতে না আসার জন্য বলেন। বিষয়টি পারিবারিকভাবে সুরাহা করার চেষ্টা করে ব্যর্থ হওয়ায় ২১ নভেম্বর তাসলিমা বাঁশখালী সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে মামলা করেন। পরদিন ২২ নভেম্বর শহীদুল আপোষ সূত্রে আদালত থেকে জামিন নেন।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে শহীদুলের শ্বশুর নুরুল কাদের বলেন, ‘আমার মেয়ে জামাই টিউশন করে। সে টিউশন করে ইনকাম করে সংসার চালাতে পারতো না। তাই আমি বাসা ভাড়া ও বাজার-সদাই করে দেই। গত ২৪ ডিসেম্বর সকাল সাড়ে ৭টায় সে আমাদের বাড়ির উঠানে চলে আসে এবং আমাদেরকে হুমকি দেয়। তখন আমাদের ঘরের দরজা বন্ধ ছিল। তাকে ঘরে ঢুকতে না দিলে সে নিজের শরীর ব্লেড দিয়ে এঁকে ক্ষতবিক্ষত করে ফেলে। এ অবস্থায় আমার ছেলে রাশেদ ৯৯৯-এ কল দিয়ে বিষয়টি পুলিশকে অবহিত করেন। পুলিশ আসার আগেই শহীদুলের পিতা নুর হোসেন তাকে বাঁশখালী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যান। পরে হাসপাতালে পুলিশ আসার খবর পেয়ে সে সেখানে চিকিৎসা না নিয়ে দ্রুত পালিয়ে যায়।’

তিনি আরও বলেন, ‘সে নিজে আত্মহত্যার চেষ্টা করে এখন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে মিথ্যা লিখে আমাদের মানহানি করতেছে। সে এর আগেও ফেসবুকে লিখে আত্মহত্যার হুমকি দিয়েছে। যার প্রমাণ আমাদের হাতে আছে।’

ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী মো. আলী বলেন, ‘সেদিন সকালে হঠাৎ দেখি ওই যুবক ব্লেড দিয়ে নিজের শরীর এঁকে ক্ষতবিক্ষত করে ফেলতেছে। তাৎক্ষণিক আমি এলাকার লোকজন ডেকে আনি। ততক্ষণে সে মাটিতে লুটিয়ে পড়ে। পরে তার হাতে থাকা মোবাইল নিয়ে তার বাবাকে ঘটনাটি অবগত করি।’

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে শহীদুল ইসলামের পিতা নুর হোসেনকে ফোন করা হলে রিসিভ করার পর তিনি, ‘এ বিষয়টি মোবাইলে বলা সম্ভব না।’ —বলে সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেন।

একই বিষয়ে বাঁশখালী থানার পরিদর্শক (তদন্ত) সুমন বণিক বলেন, ’ঘটনাস্থলে আমাদের অফিসার গিয়েছিল। এলাকার লোকজনের সাথে কথা বলে জানতে পারে, ওই যুবক ব্লেড দিয়ে তার শরীর ক্ষতবিক্ষত করছে। কেউ যদি আত্মহত্যা করতে যায়, তখন যদি সে বেঁচে ফিরে; তখন তার বিরুদ্ধে ৩০৯ ধারায় মামলা হয়। আত্মহত্যার উদ্যোগ গ্রহণ করা অপরাধ। আমিও বাঁশখালী মেডিকেলে গিয়েছিলাম। তখন দেখি সেখান থেকে তার বাবা চমেকে নিয়ে যাচ্ছে। এখন একজন মানুষকে যদি ট্রিটমেন্টের জন্য শহরে নিয়ে যায়, তখন আমরা আটকাতে পারি না।’

সিএস/এমবি

Print This Post