দোকান ইজারার নামে রেলওয়ে কর্মকর্তার অভিনব প্রতারণা

আপডেট: ১৫ ডিসেম্বর ২০২২ ১০:১৮ পূর্বাহ্ন

 

নিজস্ব প্রতিবেদক | আপডেট : ১৫ ডিসেম্বর, ২০২২ বৃহস্পতিবার : ১০.১৮ পিএম

বাংলাদেশ রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের সাবেক ট্রেনিং একাডেমীর কর্মকর্তা মো. আতাউর রহমান আতা। ১০ বছর আগে ঢাকার বিভাগের আখাউড়া-সিলেট সেকশনের টিআইটি ও টিআইসির দায়িত্ব পালনকালে কুলাউড়া রেল স্টেশনে নামে-বেনামে সরকারি সম্পত্তি দখল করে জালিয়াতির মাধ্যমে ইজারার ভুঁয়া কাগজ বানিয়েছেন এই কর্মকর্তা।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, শুরুতে সেখানে পাঁচটি দোকান নির্মাণ করে ভাড়া দেয়। পরবর্তীতে এসব দোকান প্রদর্শন ও প্রচার করে তিনি ওই জায়গার রেলের বৈধ ইজারাদার প্রচার করে সেখানে একটি মার্কেট নির্মাণ করে আটটি দোকান করা হয়। পরে এককালীন মোট অংকের অর্থ লেনদেনের মাধ্যমে ৫ ব্যবসায়িদের নিকট থেকে পাঁচটি দোকান বরাদ্দ দেন আতা। প্রতিটি দোকানের মাসিক ভাড়া নির্ধারণ করা হয় তিন হাজার টাকা। পরে এসব দোকান ব্যবসায়িদের নামে নাম সংশোধন করে দেওয়ার কথা বলে হাতিয়ে নেন আরও দেড় লাখ টাকা। পরে ব্যবসায়িদের নামে নাম সংশোধন না করে কালক্ষেপণ করে সময় পার করার এক পর্যায়ে খবর পেয়ে রেলওয়ে সেখানে উচ্ছদ অভিযান পরিচালনা করে। গুড়িয়ে দেয় মার্কেটটি। ফলে উর্পাজনের একমাত্র আয়ের উৎস দোকানগুলো ভেঙ্গে দেয়ায় দিশেহারা ব্যবসায়িরা।

২০২১ সালের ১২ জানুয়ারি বাংলাদেশ রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের সাবেক ট্রেনিং একাডেমীর অফিসার আতাউর রহমান আতার বিরুদ্ধে ঠিকানা সংবলিত স্বাক্ষরযুক্ত বাংলাদেশ রেলওয়ে সচিব বরাবরে একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন পাঁচ ব্যবসায়ি। বর্তমানে ঢাকা রেলওয়েতে কর্মরত আছেন বলে দাবি করেন আতাউর রহমান আতা।

২০১২ সালে আখাউড়া-সিলেট সেকশনের টিআইটি ও টিআইসির দায়িত্ব পালনকালে কুলাউড়া রেল স্টেশনে একটি রেলের বৈধ ইজারাদার প্রচার করে শুরুতে পাঁচটি দোকান নির্মাণ করে বাংলাদেশ রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের সাবেক ট্রেনিং একাডেমীর কর্মকর্তা আতাউর রহমান আতা। পরবর্তীতে এসব কাগজ স্থানীয় লোকজনের কাছে দেখিয়ে বৈধ ইজারাদার দাবি করে সেখানে একটি মার্কেট নির্মাণ করেন তিনি।

অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, ২০১৭ সালে কুলাউড়া পৌরসভার ৬ নম্বর ওয়ার্ড পাশার বাসিন্দা বেলাল সহ মোট ৫ ব্যবসায়িকে মোট পাঁচটি দোকান বরাদ্দ দেওয়া হয়। প্রতি মাসে তিন হাজার ভাড়া নির্ধারণ করে অগ্রিম সালামি হিসেবে তাদের কাছ থেকে এককালীন নেয় ১৫ লাখ টাকা। পরবর্তীতে দোকানগুলো ব্যবসায়িদের নামে নাম সংশোধন করে দেওয়ার কথা বলে দীর্ঘদিন ধরে ঘুরাঘুরি করার একপর্যায়ে খবর পেয়ে ২০২০ সালের ৮ নভেম্বর বৈধ ওই মার্কেটটি ভেঙ্গে দেয় রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ।

ব্যবসায়িদের অভিযোগ, পাঁচ দোকানির সরলতার সুযোগ নিয়ে বৈধ ইজারাদার দাবি করে দোকান বরাদ্দ দেয়ার দিয়ে সালামি বাবদ ১৫ লাখ টাকা হাতিয়ে নেয়। নামে সংশোধনের নামে নেয় আরও দেড় লাখ টাকা। প্রতি মাসে নিত পাঁচটি দোকান থেকে মোট ১৫ হাজার টাকা। রেলওয়ে একজন বড় কর্মকর্তা পরিচয় তুলে ধরে ব্যবসায়িদের বোকা বানিয়ে তাদের কাছ থেকে কৌশলে ২২ লাখ টাকা আত্মসাৎ করেছেন আতা।

অভিযোগ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে আতাউর রহমান আতা অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, ‘আমি এখন সেখানে নাই। ঢাকায় কর্মরত আছি।’—বলে ফোনের সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেন।

ঘন্টাখানেক পর প্রতিবেদকের মুঠোফোনে কল দিয়ে বলেন, ‘আমার সম্পর্কে জানতে চাইলে আমার ভাই চট্টগ্রাম মহানগর ছাত্রলীগ নেতা জাকারিয়া দস্তগীরের সাথে কথা বলুন।’

অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে রেলওয়ে (পূব) মহাব্যবস্থাপক (জিএম) মো. জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, ট্রেনিং একাডেমী আমার আওতায় নেই। রেক্টর বা ডিজিকে ফোন করার পরামর্শ দেন জিএম।

পরে রেলওয়ে (পূর্ব) ট্রেনিং একাডেমীর রেক্টর রুহুল কাদের আজাদকে একাধিকবার ফোন করা হলে তিনি সংযোগ তোলেননি।

Print This Post Print This Post