পরিচ্ছন্নতা বিভাগের যোগসাজশে চাঁদাবাজি— ১ যুগ ধরে জিম্মি পতেঙ্গার আড়াই হাজার পরিবার

আপডেট: ৪ ডিসেম্বর ২০২২ ২:৫৩ অপরাহ্ন

 

নিজস্ব প্রতিবেদক | আপডেট : ১ ডিসেম্বর, ২০২২ রবিবার : ২.৫৩ পিএম
২০১১ সাল থেকে চট্টগ্রাম নগরীর পতেঙ্গা থানার বিজয়নগর এলাকায় ‘ডোর টু ডোর’ ময়লা-আর্বজনা পরিস্কার করার নামে ‘চাঁদা’ আদায় করে আসছে স্থানীয় একটি সিন্ডিকেট। এই সিন্ডিকেটের কাছে দীর্ঘ ১ যুগ ধরে জিম্মি বিজয়নগরের প্রায় আড়াই হাজার পরিবার।

অভিযোগ আছে, চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের পরিচ্ছন্নতা বিভাগের সুপারভাইজারের যোগসাজশে কর্পোরেশনের কথিত অনুমোদন দিয়ে চলছে এই চাঁদাবাজি। এই সিন্ডিকেটের মূলহোতা হলেন স্থানীয় নিজাম উদ্দিনসহ আরও কয়েকজন। তাদের নেতৃত্বে কয়েকজন লোক দিয়ে এলাকায় ‘ডোর টু ডোর’ ময়লা পরিস্কার করা হয়। আর মাস শেষে প্রতিটি পরিবারের কাছ থেকে জোরপূর্বক আদায় করা হয় চাঁদা। সিটি কর্পোরেশনের নাম বিক্রি করে চাঁদাবাজি করলেও কর্তৃপক্ষ এখনও নিরব ভূমিকা পালন করছেন।

বিজয়নগরের প্রতিটি বাসা-বাড়ি থেকে আদায় করা হচ্ছে ১০০ টাকা করে চাঁদা। স্থানীয় বাসিন্দা ও ভাড়াটিয়া মিলে প্রায় আড়াই হাজার পরিবার থেকে প্রতিমাসে আড়াই লক্ষাধিক টাকা চাঁদা তোলে চক্রটি।

স্থানীয়রা জানান, বিজয়নগর এলাকায় সিটি কর্পোরেশনের লোকজন নালা-নর্দমা পরিষ্কার করতে আসে না। কর্পোরেশনের লোকজনের যোগসাজশে নিজামের নেতৃত্বে সঙ্ঘবদ্ধ চক্র ময়লা পরিষ্কারের নামে চাঁদা আদায় করে আসছে। কোন বিল্ডিংয়ে কত পরিবার থাকে সেই হিসেবে চাঁদা তোলা হয়। নিজাম নিজে গিয়ে পরিবার প্রতি ১০০ টাকা করে নেয়।

‘ডোর টু ডোর’ ময়লা পরিষ্কারের নামে চাঁদা আদায়ের বিষয়টি স্বীকার করে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের পরিচ্ছন্নতা বিভাগের ৪১ নম্বর ওয়ার্ডের সুপারভাইজার খোরশেদুল আলম বলেন, ‘আমি দায়িত্বরত অবস্থায় হচ্ছে তা নয়, আগের সুপারভাইজারের সময়ও এই রকম হয়েছে। আমি এই বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষেও জানিয়েছি।’

তবে সিটি কর্পোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো. শহীদুল আলম বললেন ভিন্ন কথা।

তিনি বলেন, ‘বিজয়নগর এলাকার সুপারভাইজার খোরশেদুল আলম আমায় কিছু জানাননি। ওই এলাকায় ময়লা পরিষ্কার করার জন্য কাউকে আলাদাভাবে দায়িত্ব দেওয়া হয়নি। আমি পরিচ্ছন্নতা বিভাগের উপপ্রধান কর্মকর্তা মোরশেদকে বিষয়টি এখনই বলছি।’

অভিযোগ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে নিজাম উদ্দিন বলেন, ‘২০১১ সাল থেকে এই কাজ করছি। এলাকার লোকজন ও স্থানীয় কাউন্সিলর বিষয়টি সম্পর্কে অবগত আছেন। ময়লা পরিষ্কার করে যার কাছ থেকে যা পাচ্ছি তাই নিচ্ছি। এই টাকা সংগঠনের লোকজনের মাঝে বিতরণ করছি। আপনি (প্রতিবেদক) চাইলে আপনাকে টাকা ওঠানোর হিসাব দেখাতে পারব।’

এ বিষয়ে জানতে চাইলে ৪১ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর ছালেহ আহমেদ চৌধুরী বলেন, ‘সিটি কর্পোরেশনের পরিচ্ছন্নতা বিভাগে যথেষ্ট জনবল রয়েছে। বিজয়নগরে স্থানীয় একটি চক্র সংগঠনের নামে ব্যবসা করছে। তারা সিটি কর্পোরেশনের পরিচ্ছন্নতা বিভাগের লোকজনকে সেখানে ঢুকতে দিচ্ছে না।’

এ প্রসঙ্গে জানার জন্য সিটি কর্পোরেশনের পরিচ্ছন্নতা বিভাগের উপপ্রধান কর্মকর্তা মোরশেদুল আলম চৌধুরীকে কল দেওয়া হলে তিনি রিসিভ করেননি।