বাঁশখালীতে সম্মেলন মঞ্চে বহিষ্কৃত আওয়ামী লীগ নেতা!

আপডেট: ২৮ জুলাই ২০২২ ১২:৫৭ পূর্বাহ্ন

নিজস্ব প্রতিবেদক | আপডেট : ২৭ জুলাই, ২০২২ বুধবার : ১০.২০ পিএম

বাঁশখালীর ছনুয়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের ওয়ার্ড কমিটির সম্মেলন উপলক্ষে আয়োজিত সমাবেশ মঞ্চে দেখা গেছে নৌকার দুই বিদ্রোহী প্রার্থীকে। তারা হলেন— সদ্য সমাপ্ত ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে (ইউপি) ছনুয়া ইউনিয়নে নৌকার বিদ্রোহী প্রার্থী এম. হারুনুর রশীদ ও আলমগীর কবির। আলমগীর আর হারুন দুজন সম্পর্কে আপন সহোদর।

জানা যায়, সদ্য সমাপ্ত ছনুয়া ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে হারুনুর রশীদ মোটরসাইকেল প্রতীক ও আলমগীর কবির ঘোড়া প্রতীক নিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বীতা করেন। তৎমধ্যে হারুনুর রশীদ ছনুয়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি ও বর্তমান চেয়ারম্যান। দলের নির্দেশনা না মেনে ইউপি নির্বাচনে বিদ্রোহী প্রার্থী হওয়ায় গত ৩১ মে দু’জনকে দল থেকে সাময়িক বহিষ্কার করে চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগ।

এদিকে আজ ছনুয়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের ওয়ার্ড কমিটির সম্মেলন উপলক্ষে আয়োজিত সভায় হারুনুর রশীদ ও আলমগীর কবিরকে মঞ্চে দেখা গেলে তৃণমূল নেতাকর্মীদের মাঝে বিরূপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়।

বুধবার (২৭ জুলাই) বিকাল ৩টায় ছনুয়া খুদুকখালী উপকূলীয় হোছাইনিয়া দাখিল মাদরাসার মাঠে ছনুয়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের আওতাধীন ৯ টি ওয়ার্ডের কর্মী সম্মেলন উপলক্ষে সমাবেশে অনুষ্ঠিত হয়।

এসময় উপস্থিত ছিলেন বাঁশখালী উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাংসদ মোস্তাফিজুর রহমান চৌধুরী, চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মোসলেহ উদ্দিন মনসুর, শ্রম বিষয়ক খোরশেদ আলম, বন ও পরিবেশ বিষয়ক সম্পাদক অ্যাডভোকেট মুজিবুল হক, বাহারছড়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান তাজুল ইসলাম, ছনুয়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি এম জিল্লুল করিম শরীফি প্রমুখ।

এদিকে দীর্ঘ ১ যুগেরও বেশি সময় শেষে ছনুয়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের ওয়ার্ডের কমী সম্মেলন হওয়ায় দলের দুঃসময়ের নেতাকর্মীদের মাঝে উচ্ছাসে দেখা গেছে। কিন্তু ইউপি নির্বাচনে নৌকার বিরুদ্ধে নির্বাচন করা হারুন ও আলমগীরকে মঞ্চে দেখায় হতাশ তৃণমূলের নেতা-কর্মীরা।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক আওয়ামী লীগ নেতা সিটিজিসানকে বলেন, ‘মঞ্চে বাঁশখালীর এমপি মহোদয়ের পাশে বসেছিলেন ছনুয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান এম হারুনুর রশীদ। এমপির সাথে হারুনের দহরমমহরম সম্পর্ক। অথচ দলের দুঃসময়ে যারা রক্ত দিয়েছে তাদের কোনও খবর নেই। হারুন আর আলমগীরের বহিষ্কারাদেশ এখনো প্রত্যাহার করা হয়নি। এরপরেও এভাবে মঞ্চে বসার বিষয়টি অত্যন্ত দুঃখজনক—যোগ করেন তিনি।

এ বিষয়ে জানতে বাঁশখালী উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাংসদ আলহাজ্ব মোস্তাফিজুর রহমান চৌধুরীকে কল দেওয়া হলে তিনি রিসিভ করেননি।

উল্লেখ্য, ২০২০ সালের ২ আগস্ট সংবাদ প্রকাশের জের ধরে একুশে পত্রিকার বাঁশখালী প্রতিনিধি মোহাম্মদ বেলাল উদ্দিনকে অপহরণ করে ছনুয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান এম হারুনুর রশীদের পালিত সন্ত্রাসীরা। পরে তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদের নির্দেশে র‌্যাব ও পুলিশ গিয়ে হারুনের বাড়ি থেকে সাংবাদিক বেলালকে ১ ঘন্টার মধ্যে উদ্ধার করে৷ এর আগে আবু সিদ্দিক নামের এক শিক্ষককে অপহরণের অভিযোগ উঠে হারুন বাহিনীর বিরুদ্ধে।

 

গত ১৫ জুন হারুনুর রশীদ পুনরায় চেয়ারম্যান নির্বাচিত হলে হারুন বাহিনী আরো বেপরোয়া হয়ে উঠে। নৌকার প্রার্থী মুজিবুর রহমান তালুকদারের পক্ষে কাজ করায় নির্বাচনের পরদিন ছনুয়া আবদুল্লাহর দোকান এলাকায় পল্লী চিকিৎসক ডা. সাগরের ফার্মেসী ভাঙচুরের অভিযোগ উঠে হারুনের লোকজনের বিরুদ্ধে। সর্বশেষ, গত ১৮ জুলাই নৌকার পক্ষে কাজ করায় মো. রায়হান ওমর (২৬) নামের এক ছাত্রলীগ কর্মীকে অপহরণ করে মারধরের অভিযোগ উঠে হারুনের ছোট ভাই আবদুল আজিজ টিপুসহ তার লোকজনের বিরুদ্ধে। হারুনের বিরুদ্ধে বিভিন্ন হত্যা, ধর্ষণ, ডাকাতিসহ বিভিন্ন অভিযোগে অন্তত ১২টি মামলা রয়েছে। তৎমধ্যে ৪টি মামলায় জামিন পেলেও ৮টি মামলা বিচারাধীন রয়েছে। আলোচিত ৩১ জেলে হত্যা মামলায় সম্প্রতি হারুনুর রশীদসহ ৩৮জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করে আদালত। তাছাড়া হারুনের ভাই আলমগীর কবিরের বিরুদ্ধে হত্যা, চাঁদাবাজি, ডাকাতির অভিযোগে অন্তত ৮টি মামলা রয়েছে।

Print This Post Print This Post