নিজস্ব প্রতিবেদক | আপডেট : ১৯ জুলাই, ২০২২ মঙ্গলবার : ১০.১৫ এএম
বাঁশখালীর ছনুয়া ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) নির্বাচনে নৌকার প্রার্থীর পক্ষে কাজ করায় মো. রায়হান ওমর (২৬) নামের এক ছাত্রলীগ কর্মীকে তুলে নিয়ে মারধর করার অভিযোগ উঠেছে ছনুয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান এম. হারুনুর রশীদের লোকজনের বিরুদ্ধে। ভুক্তভোগী রায়হান শেখ রাসেল স্মৃতি সংসদের ছনুয়া ইউনিয়ন শাখার সভাপতি।
সোমবার (১৮ জুলাই) রাত ৮টায় ছনুয়া ইউনিয়নের ইউনিয়নের খুদুকখালী গ্রামের আবদুল্লাহর দোকানের পশ্চিম পাশে লবণের মাঠে এ ঘটনা ঘটেছে। ভুক্তভোগী ছাত্রলীগ কর্মী রায়হান ছনুয়া ইউনিয়নের ৬নম্বর ওয়ার্ডের জমিলাপাড়ার আহমদ ছফার পুত্র।
জানা যায়, সোমবার রাত ৮টায় খুদুকখালী থেকে বাড়ি ফিরছিলেন ছাত্রলীগ কর্মী মো. রায়হান ওমর। এসময় তিনি আবদুল্লাহর দোকানের পশ্চিম পাশে পৌঁছলে পূর্ব থেকে ওৎ পেতে থাকা সন্ত্রাসীরা তাকে লবণের মাঠে তুলে নিয়ে যায়।
প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা যায়, সোমবার রাত ৮টায় খুদুকখালী থেকে বাড়ি ফিরছিলেন ছাত্রলীগ কর্মী মো. রায়হান ওমর। এসময় তিনি আবদুল্লাহর দোকানের পশ্চিম পাশে পৌঁছলে পূর্ব থেকে ওৎ পেতে থাকা ছনুয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান হারুনুর রশীদের ছোট ভাই আবদুল আজিজ টিপুর নেতৃত্বে মিজান সিকদার, মিয়া হোসেন, এমদাদ, শাহাবুদ্দিন রাকিব, আবুল খায়ের, ছৈয়দুল মোস্তফা ওরফে বাক্কা, আশেকুর রহমান, জাহেদ সোহানসহ ৫০ থেকে ৬০ জনের একদল সন্ত্রাসী রায়হানকে তুলে নিয়ে যায়।
এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত রায়হানকে উদ্ধার করে বাঁশখালী মাতৃসদন হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে বলে জানা যায়।
এ বিষয়ে ভুক্তভোগী রায়হানের ভাই মো. দেলোয়ার হোসেন সওদাগর বলেন, ‘আমার ভাইয়ের সাথে কারও শত্রুতা নেই। নির্বাচনের সময় নৌকার প্রার্থী মুজিবুর রহমান তালুকদারের পক্ষে কাজ করেছিল। তখন চেয়ারম্যান হারুনুর রশীদ তাকে দেখে নেয়ার হুমকি দিয়েছিল। আজকে আমার ভাইকে একা পেয়ে এ ঘটনা ঘটালো। তার বুকেপিঠে মারাত্মক জখম হয়েছে। গুরুতর আহত অবস্থায় আত্নীয়-স্বজন গিয়ে রায়হানকে উদ্ধার করে মেডিকেলে নিয়ে আসি। এখন রায়হানকে মাতৃসদন হাসপাতালে এক্স-রে কক্ষে প্রবেশ করানো হয়েছে।’
কোথায় নিয়ে মারধর করা হয়েছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘খুদুকখালী দাশপাড়া রোড থেকে ধরে নিয়ে লবণের মাঠে নিয়ে যায়। সেখানে হাতুড়ি পেটা করে হারুনের ছোট ভাই টিপুর নেতৃত্বে একদল সন্ত্রাসী। রায়হানের মোটরসাইকেল ও মোবাইল ছিনিয়ে নিয়েছে সন্ত্রাসীরা।’
ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন বাঁশখালী থানার সহকারী উপ-পরিদর্শক (এএসআই) আবদুল খালেক। তিনি বলেন, ‘কারা তাকে অপহরণ করে মারধর করেছে জানি না। ওখানে এসআই আকরাম আর আমি গিয়েছিলাম। কিন্তু আমি এ বিষয়ে কোনও মন্তব্য করতে পারবো না। আমাদের মিডিয়া অফিসার আছেন। এ বিষয়ে জানতে আপনি ওসি স্যারকে কল দিতে পারেন।’
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বাঁশখালী থানার ডিউটি অফিসার মো. ফিরোজ বলেন, ‘ ঘটনাস্থলে পুলিশ পৌঁছার আগেই ভিকটিমের লোকজন তাকে উদ্ধার করে। তাকে প্রথমে বাঁশখালী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে আসে। বর্তমানে কোন হাসপাতালে আছে জানি না।’
উল্লেখ্য, ২০২০ সালের ২ আগস্ট সংবাদ প্রকাশের জের ধরে একুশে পত্রিকার বাঁশখালী প্রতিনিধি মোহাম্মদ বেলাল উদ্দিনকে অপহরণ করে ছনুয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান এম হারুনুর রশীদের পালিত সন্ত্রাসীরা। পরে তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদের নির্দেশে র্যাব ও পুলিশ গিয়ে হারুনের বাড়ি থেকে সাংবাদিক বেলালকে ১ ঘন্টার মধ্যে উদ্ধার করে৷ এর আগে আবু সিদ্দিক নামের এক শিক্ষককে অপহরণের অভিযোগ উঠে হারুন বাহিনীর বিরুদ্ধে।
গত ১৫ জুন হারুনুর রশীদ পুনরায় চেয়ারম্যান নির্বাচিত হলে হারুন বাহিনী আরো বেপরোয়া হয়ে উঠে। নৌকার প্রার্থী মুজিবুর রহমান তালুকদারের পক্ষে কাজ করায় নির্বাচনের পরদিন ছনুয়া আবদুল্লাহর দোকান এলাকায় পল্লী চিকিৎসক ডা. সাগরের ফার্মেসী ভাঙচুরের অভিযোগ উঠে হারুনের লোকজনের বিরুদ্ধে। সর্বশেষ, গত রবিবার ফাঁড়ির মুখ মাছের ডক এলাকায় নুরুল আবছার কোম্পানি নামের এক ব্যবসায়ীর ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে লুটপাট চালাতে গেলে পুলিশ আসার খবরে সটকে পড়ে হারুন বাহিনীর লোকজন। এমতাবস্থায় উপকূলীয় জনপদ ছনুয়ার সাধারণ মানুষের মাঝে আতংক বিরাজ করছে।
সিটিজি সান/এমবিইউ
Print This Post