
সিএস ডেস্ক | আপডেট : ২৩ এপ্রিল, ২০২১ শুক্রবার ০৩:৫০ পিএম
সরকারি নিষেধাজ্ঞা থাকা সত্ত্বেও কঠোর লকডাউনেও থেমে নেই ইপিজেড এলাকা থেকে দূরপাল্লার যাত্রী পরিবহন। দেশের বিভিন্ন জেলায় মাইক্রোবাসে করে যাত্রী পরিবহন করছে এক সিন্ডিকেট। লকডাউনের শুরু থেকেই বরিশাল, রংপুর, ঢাকাসহ বিভিন্ন জেলায় যাত্রী পরিবহনে ব্যবহৃত হচ্ছে মাইক্রোবাস।
জানা যায়, ইপিজেড এলাকার রিয়াজ প্রকাশ সোর্স রিয়াজ গাড়িপ্রতি এক হাজার টাকার বিনিময়ে থানা কন্ট্রাক্টের নাম দিয়ে চালাচ্ছে এই বাণিজ্য। প্রতিদিন ১০টি গাড়ি থেকে দৈনিক ১০ হাজার টাকা যায় রিয়াজের পকেটে।
বুধবার (২১ এপ্রিল) সন্ধ্যা ৭টার দিকে ইপিজেড এলাকার হাসপাতাল গেইট এলাকা থেকে অবৈধভাবে যাত্রী পরিবহনের সময় চট্টমেট্রো- চ ১১-৭৭৯৩ নম্বর প্লেটযুক্ত একটি গাড়ি আটক করে পুলিশ। এসময় টিকেট বিক্রেতা জুয়েল মুঠোফোনে বিষয়টি সোর্স রিয়াজকে জানালেও গাড়িটি থানায় নিয়ে যাওয়া হয়।
অনুসন্ধানে জানা যায়, গত ১৩ এপ্রিল জুয়েল নামে এক কাউন্টারের টিকেট বিক্রেতাকে অবৈধভাবে গাড়ি ছাড়ার অভিযোগ পেয়ে ডেকে নেয় ইপিজেড থানার অপারেশন অফিসার (এসআই) সাজেদ কামাল। এরপরই জুয়েলের সাথে পরিচয় হয় সোর্স রিয়াজের। রিয়াজ টাকার বিনিময়ে দূরপাল্লার এসব মাইক্রোবাস চলাচলের অনুমতি নিয়ে দেয় থানা থেকে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক টিকেট বিক্রেতার সাথে কথা হয় এ প্রতিবেদকের। তিনি জানান, থানার সেকেন্ড অফিসার জুয়েলকে ধরে নিয়ে যাওয়ার পর অবৈধভাবে যাত্রী পরিবহনের জন্য প্রতিগাড়ি এক হাজার টাকা রিয়াজকে দেয়ার কন্ট্রাক্ট হয়।
এরপর থেকে প্রতি কাউন্টার থেকে যত গাড়ি ছাড়ে প্রতিদিন হিসেব করে এক হাজার টাকা করে নিয়ে যায় রিয়াজ।
এদিকে ঘটনাস্থলে ছদ্মবেশে প্রতিবেদক অবস্থান নিলে সোর্স রিয়াজের টাকা নেয়ার বিষয় এবং গাড়ি ছাড়ার অনুমতি দেয়ার বিষয়ের সত্যতা মেলে। প্রতিবেদকের সামনেই রিয়াজকে মুঠোফোনে গাড়ি আটকের বিষয়টি জানায় টিকেট বিক্রেতা।
এসময় ওই টিকেট বিক্রেতা রিয়াজকে মুঠোফোনে বলেন, ‘শিলামনি এন্টারপ্রাইজের মালিকানাধীন একটি গাড়িতো আটক হইছে। এখন ঢাকার গাড়ির লোক বসে আছে। আমরা কি গাড়ি ছাড়বো’ প্রতিউত্তরে রিয়াজ গাড়ি ছাড়তে বলে এবং তাড়াতাড়ি সিটি গেইট পাড় করার পরামর্শ দেয়। পুরো কথোপকথনের একটি ভিডিও ফুটেজ প্রতিবেদকের কাছে আসার পর এ বিষয়ে জানতে রিয়াজকে মুঠোফোনে কল করলে তিনি বিষয়টি অস্বীকার করে বলেন, ‘আমি ভাই ব্যবসা নিয়ে ব্যস্ত। আমি গাড়ি ছাড়ার অনুমতি দেয়ার কে?’
প্রতিবেদকের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘এমনে শিলামনির একটা গাড়ি আজ আটক হইছে। গাড়ির মালিক আমার পূর্বপরিচিত তাই কল দিয়েছিল।’
আপনার সাথে কাউন্টারের টিকেট বিক্রেতার মুঠোফোনে কথা বলার রেকর্ডতো আছে।
আপনি বিষয়টি অস্বীকার কিভাবে করছেন?— এ প্রশ্নের জবাব না দিয়েই তিনি মুঠোফোনের সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেন।
স্থানীয়দের সাথে কথা বলে জানা যায়, রিয়াজ মূলত এখন ‘সবুজ চট্টলা সমবায় সমিতি’র পরিচালক। একসময় তিনি ইপিজেড এলাকার বিভিন্ন ‘কাটিং বাণিজ্যের’ সাথে জড়িত ছিল। থানার সোর্স হিসেবেই তিনি এলাকায় ব্যাপক পরিচিত। তবে বর্তমান ওসি আসার পর থেমে যায় রিয়াজের ‘কাটিং বাণিজ্য’।’
এবিষয়ে জানতে চাইলে ইপিজেড থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা উৎপল বড়ুয়া বলেন, ‘গাড়ি ছাড়ার বিষয়টি আমি শুনেছি। একটি গাড়ি আটক করে ট্রাফিক আইনে মামলা দেওয়াও হয়েছে। এটা ট্রাফিক বিভাগের কাজ।’
সোর্স রিয়াজ থানা কন্টাক্ট করে গাড়ি ছাড়ছে কিনা?— এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, ‘থানা থেকে আমরা কোন অনুমতি দেইনি। যদি কেউ দাবি করে তা সম্পূর্ন মিথ্যা। আমরা অনুমতি দিতে পারি না। সারাদেশ তো ইপিজেড থানার আওতাধীন না। গাড়ি যাচ্ছে বন্দর থানা আটকাবে, হালিশহর, পাহাড়তলী থানা আছে।’
‘গাড়ি ছাড়ার বিষয়ে আমরা কোন সিদ্ধান্ত দেইনি। আপনারা এধরনের কোন তথ্য পেলে আমাদের জানাবেন। আমি ব্যবস্থা নিবো।’—যোগ করেন ওসি।
সূত্রঃ সিপ্লাস টিভি
সিএস
