
রবিউল হোসেন রবি | আপডেট : ২১ ফেব্রুয়ারি, ২০২১ রবিবার ০২:৪৫ পিএম
চট্টগ্রাম কাস্টমসের রেডিও অপারেটর স্বপন মজুমদার। একইসাথে তিনি কাজ করেন চট্টগ্রাম শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে কম্পিউটার অপারেটর হিসেবেও। প্রবাস থেকে চট্টগ্রামে আগত যাত্রীদের নিয়মিত হয়রানি করেন তিনি। শুধু তাই নয়, যাত্রীদের মালামাল আটক করে ‘টাকার কন্ট্রাক্ট’ করে সেই মালামাল ছাড়ানোর বাণিজ্যও তার দখলে।
অভিযোগ রয়েছে, স্বর্ণ চোরাকারবারিদের সঙ্গে যোগসাজশে স্বর্ণ ক্যারি করার সঙ্গে যুক্ত রয়েছেন এই কর্মচারী। স্বর্ণ চোরাকারবারিদের সঙ্গে অবৈধ আর্থিক লেনদেনের মাধ্যমে প্রতি মাসে ৫-৬ বার স্বর্ণের বার বের করে কয়েক বছরের মাথায় বনে যান অর্থবিত্তের মালিক।
এছাড়াও তিনি বিদেশগামি যাত্রীদের অতিরিক্ত মালামাল কাস্টমস কর্তৃক ডেমোটেশন মেমো (ডিএম) বাণিজ্য করার মাধ্যমেও হাতিয়েছেন লাখ লাখ টাকা। আর সেই টাকায় গড়ে তুলেছেন তার নামে বেনামে সম্পত্তি। একজন কম্পিউটার অপারেটর কিভাবে সরকার নির্ধারিত সামান্য বেতন দিয়ে ফুলে ফেঁপে ওঠে সেই প্রশ্ন এখন অনেকের!
সূত্র বলছে, ২০১৯ সালে চট্টগ্রামের শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের কার্গো শাখায় জালিয়াতির ঘটনায় এক সিঅ্যান্ডএফ এজেন্টের বিরুদ্ধে ফৌজদারি আইনে মামলা করা হয়েছিলো। ওই ঘটনায় দায়িত্বহীনতা, অদক্ষতা ও অসতর্কতার কারণে রেডিও অপারেটর স্বপন মজুমদারকে কারণ দর্শানোর নোটিশও দিয়েছিল কাস্টমস কর্তৃপক্ষ।
সরেজমিনে বিমানবন্দরে গিয়ে দেখা যায়,স্বপন মজুমদারের রুমের সামনে লাইন ধরে দাঁড়িয়ে রয়েছে কয়েকজন যাত্রী। সবারই কোনো না কোনো অভিযোগ নিয়ে আসা।
চট্টগ্রামের হাটহাজারী উপজেলা থেকে বিমানবন্দর এসেছেন মোহাম্মদ নাছির নামে এক ব্যক্তি। প্রায় তিন সপ্তাহ আগে তিনি বিদেশ থেকে এসেছিলেন দেশে। আসার সময় সঙ্গে আনেন তিনটি স্বর্ণের বার। যা নিয়ে তিনি ধরা পড়েন বিমানবন্দর কাস্টমসের হাতে। যে কারণে তাকে ডিএম করে ছাড়াতে হবে স্বর্ণের বার।
এজন্য ওই যাত্রীর সাথে ‘টাকার কন্ট্রাক্ট’ করেন স্বপন মজুমদার। সকল লাইন ঘাট ঠিকও করে দেন তিনি। কিন্তু শেষমেশ ‘কন্ট্রাক্টে’ বনিবনা না হওয়ায় মাসে পর মাস কাস্টম হাউজে গিয়ে মালামাল ছাড়াতে বেগ পেতে হয়েছে ওই যাত্রীকে।
প্রতিবেদককে ওই যাত্রী বলেন, ‘স্বপন স্যারের ‘টাকার কন্ট্রাক্টের’ ফাঁদে পড়ে এ পর্যন্ত তিন বার আসতে হয়েছে বিমানবন্দরে। বার বার আমাদের ঘোরাঘুরি করিয়েছেন। এত দূর থেকে আসতে আমার অনেক কষ্ট হয়। উনি টাকা নিয়ে এখন আমাকে ঘুরাচ্ছেন।’
উনিতো একজন কম্পিউটার অপারেটর, ওনাকে কেন টাকা দিলেন ডিএম করতে?— এমন প্রশ্নের জবাবে ওই যাত্রী বলেন, ‘উনি আশ্বাস দিয়েছিলেন ঝামেলা ছাড়াই সমাধান করে দিবেন। আর আমিও কোন ঝামেলা চাইনি। তাই এ প্রক্রিয়া অনুসরণ।’
অভিযোগের বিষয়ে জানতে স্বপন মজুমদারের ব্যক্তিগত মুঠোফোনের নম্বরে কল করা হলে প্রথমে তিনি প্রতিবেদককে দেখা করার অনুরোধ জানিয়ে সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেন।
কিন্তু সাথে সাথে প্রতিবেদক একাধিক বার কল করলেও তিনি রিসিভ না করেই প্রত্যেকবার কল কেটে দেন। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম হোয়াটসঅ্যাপে একাধিক ক্ষুদে বার্তা পাঠিয়েও এ সকল প্রশ্নের উত্তর জানা সম্ভব হয়নি।
এ বিষয়ে চট্টগ্রাম শাহ আমানত বিমানবন্দর কাস্টমসের উপ-কমিশনার রোকসানা আক্তার বলেন, ‘অভিযোগ থাকলে যে কোন ব্যক্তি তা আমাকেও জানাতে পারে। যাত্রীদের কোন কাজ থাকলে তা অফিসারদের সাথে থাকতে পারে। কিন্তু একজন কম্পিউটার অপারেটরের সাথে থাকতে পারে না।’
কাস্টমসের যুগ্ম কমিশনার বাপ্পি শাহরিয়ার বলেন, ‘স্বপনের বিরুদ্ধে অভিযোগের বিষয়টি খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’
সিএস
