
নিজস্ব প্রতিবেদক | আপডেট : ১৭ ফেব্রুয়ারি, ২০২১ বুধবার ০৮:২০ পিএম
কক্সবাজারের টেকনাফ পৌর নির্বাচনের আগেই জমে উঠেছে সেখানকার নির্বাচনের মাঠ। নির্বাচনীয় মাঠে বর্তমান মেয়র সহ ক্ষমতাসীন দলের পাঁচজন ও একজন জামায়াত প্রার্থী নেতা সহ ছয়জন প্রার্থীর নাম ইতোমধ্যে গুঞ্জন শুনা যাচ্ছে।
এদিকে ভোটারদের কাছে পাঁচজন সম্ভাব্য প্রার্থীর গ্রহণ যোগ্যতা নিয়েও ভিন্ন ভিন্ন অভিযোগ রয়েছে। সেখানে তুলনামূলক ভাবে সামর্থবান একেবারেই তরুণ প্রার্থীর দিকে ভোটারদের সমর্থন চোখে পড়ার মতো। সব মিলিয়ে সাবেক সাংসদ আব্দুর রহমান বদির সমর্থন যেদিকে, সেদিকেই পাল্লাভারি হবে, রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা এমনটাই অভিমত প্রকাশ করেছেন।
অনুসন্ধানে দেখা গেছে, নির্বাচনীয় তফসিল ঘোষণার আগেই মাঠে নেমেছে অন্তত ছয়জন প্রার্থী। এরা হলেন— বর্তমান মেয়র সাবেক সাংসদ আব্দুর রহমান বদির চাচা হাজী মো. ইসলাম, উপজেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক হাজী নুরুল বশর, পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি জাবেদ ইকবাল, পৌর আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আব্দুস শুক্কুর (সিআইপি), সাবেক এমপি মৃত আব্দুল গণীর পুত্র সাইফুদ্দীন খালেদ, সাবেক কাউন্সিলর মো. ইসমাঈল। এরা প্রত্যেকে দলীয় মনোনয়ন পাওয়ার প্রত্যাশী। তবে এবার মেয়র পদে এসেছে নতুন চমক।
২০০১ সালে পৌরসভা গঠিত হওয়ার পর থেকে উপযুক্ত সঠিক অভাবে অন্যান্য পৌরসভা থেকে পিছিয়ে রয়েছে টেকনাফ উপজেলা। প্রতিবছর কোটি কোটি টাকার বাজেটের গল্প শোনা গেলেও দৃশ্যমান কোন কাজ দেখা যায়নি। রাস্তা-ঘাট, ড্রেইন,পয়োনিষ্কাশন, সুপেয় পানি সর্বরাহসহ পৌর শহরের চিত্র দেখলেই অনুমান করা যাচ্ছে মেয়র হাজী ইসলামের ১০ বছরের কর্মকাণ্ড।
মাত্র পাঁচ মিনিটের একটি কাজ করতে গেলে অকারণে পাঁচদিন ঘুরানো হচ্ছে। তাছাড়া নিজ উদ্যোগে কোনো কাজ করেনা, আমলা নির্ভর কর্মকান্ড পৌরসভার উন্নয়নের প্রধান বাঁধা।— এমন অভিযোগ পৌরবাসীর।
অভিযোগ রয়েছে— বিভিন্ন দরপত্র, হাট বাজার ইজারা থেকে শুরু করে প্রতিটি কাজ বাগিয়ে নিয়ে পৌরসভাকে লুটপাটের খনিতে পরিনত করেছে তার আশেপাশে থাকা ব্যক্তিরা। বর্তমান মেয়রের ১০ বছর দায়িত্বকালীন সময়ে এসব ব্যক্তিদের ভাগ্য বদলে গেলেও শুধু বদলায়নি পৌরবাসীর ভাগ্য। তাই এবার নির্বাচনে নতুন নেতৃত্ব চাইছে পৌরবাসী।
এদিকে টেকনাফের সাম্ভাব্য প্রার্থী আলহাজ্ব এজাহারমিয়া কোম্পানীর ছেলে পৌর আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আব্দুস শুক্কুর (সিআইপি)। বয়সে তরুণ হলেও ইতিমধ্যে অবিরাম গণসংযোগ করে তরুণ ভোটারদের মাঝে ব্যাপক সাড়া ফেলেছেন। তাছাড়া বাবা ও বড় ভাই সাবেক সাংসদ আব্দুর রহমান বদির জনপ্রিয়তার সূত্র ধরে এলাকার সাধারণ জনগণের কাছে তুলনামূলক গ্রহণযোগ্যতা রয়েছে। সেই হিসেবে পৌরসভায় তার রয়েছে বিশাল ভোট ব্যাংক।
অন্যদিকে উপজেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক হাজী নূরুল বশর ছাত্রলীগের সভাপতি ছিলেন। যুবলীগের গন্ডি না পেরিয়ে বর্তমানে উপজেলা আওয়ামীলীগের নেতৃত্বে রয়েছেন। তিনি সদর ইউনিয়নের বাসিন্দা হলেও কৌশলে পৌর এলাকা থেকে ভোটার হয়ে ৫ নম্বর ওয়ার্ড থেকে কাউন্সিলর নির্বাচিত হয়েছিলেন। সাবেক এ পৌর কাউন্সিলরের কোন ভোট ব্যাংক নেই। এমনকি ৫ নম্বর ওয়ার্ডেও তার জনপ্রিয়তায় ভাটা পড়েছে। আগামী নৌকার মনোনয়নের জন্য মরিয়া হয়ে উঠেছেন। মনোনয়ন নিশ্চিত করতে ঢাকা পড়ে রয়েছেন তিনি—এমনটাই জানিয়েছেন স্থানীয়দের একটি বিশাল অংশ।
স্থানীয়রা অভিযোগ করে বলেন, রাজনীতি তার ব্যবসায় পরিণত হয়েছে। তাই দলীয় পদ থাকলেও ভোটারদের মাঝে তার গ্রহণ যোগ্যতা নিয়ে নানা প্রশ্ন রয়েছে। তিনি বিগত উপজেলা নির্বাচনে তার ভাইয়ের পক্ষে আওয়ামীলীগের বিদ্রোহীদের শীর্ষ অবস্থানে ছিলেন। তাছাড়া দলীয় নেতা কর্মীদের মাঝেও বিভিন্ন বিতর্কিত কর্মকাণ্ডের জন্য তিনি সমালোচিত হয়েছিলেন বেশ কয়েকবার।
এছাড়া পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি জাবেদ ইকবালের রাজনীতির হাতেখড়ি ছাত্রলীগের রাজনীতির মধ্য দিয়ে। গত উপজেলা নির্বাচনে ভাইস চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। দলের নেতা কর্মীদের মধ্যে সমন্বয়হীনতার কারণে হেরে যান। দলীয় নেতা কর্মীদের দাবি, তিনি সব সময় দ্বৈতনীতি অনুসরণ করতেন। তার নেই কোন আর্থিক স্বচ্ছলতা। নিজ স্বার্থের জন্য দলীয় নেতা কর্মীদের বিভক্ত রাজনীতি পক্ষে ছিলেন সবসময়। সব মিলিয়ে তার ওপর ভোটারদের আস্থাহীনতা লক্ষ্য করা যাচ্ছে।
এদিকে, সেক্টর কমান্ডার ফোরামের সভাপতি সাইফুদ্দীন খালেদ সাবেক এমপি হাজী আব্দুল গণীর ছেলে। তাদের পারিবারিক ঐতিহ্য থাকলেও রাজনৈতিক কোনো ব্যাকগ্রাউন্ড নেই। যুগ যুগ ধরে জন বিচ্ছিন্ন হয়ে থাকার কারনে স্থানীয় জনসাধারনের কাছে আস্থা অর্জন করতে ব্যর্থ হয়েছে। সেই হিসেবে তার নেই কোন ভোট ব্যাংক।
স্থানীয় সাধারণ ভোটারদের দাবি, বিগত সময়ে আমরা হাজী ইসলাম, নূরুল বশর, জাবেদ ইকবাল ও ইসমাঈলের কর্মকান্ড দেখেছি। তাদের উপর পৌর নেতৃত্ব আশা করা যায় না। তাই এবারে আমরা দলমত বুঝিনা। আব্দুস শুক্কুরকে পৌরসভার নেতৃত্ব তুলে দিতে চাই।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে স্থানীয় কয়েজন শীর্ষ স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতাদের দাবি, উপজেলা থেকে মনোনয়ন প্রত্যাশীদের যে তালিকা জেলা আওয়ামী লীগের কাছে পাঠানো হয়েছে এটি একটি পাতানো তালিকা। সুতরাং সর্বশেষ হিসেব-নিকেষে এ পর্যন্ত আব্দুস শুক্কুর (সিআইপি)’র জনসমর্থন তুঙ্গে রয়েছে। তাই নীতি নির্ধারকদের উচিৎ, দলীয় পদ মর্যাদা বিবেচনা না করে জনসমর্থন পর্যালোচনা করে দলীয় মনোনয়ন দেয়া।
তবে এটা অস্বীকার করার উপায় নেই যে, সাবেক সাংসদ আব্দুর রহমান বদির সমর্থনের ওপর নির্ভর করবে কে হবেন টেকনাফ পৌর মেয়র।
আরএইচ/সিএস
