খাদ্যপণ্যে ভেজাল, বাড়ছে জীবনের ঝুঁকি!

আপডেট: ২ ফেব্রুয়ারী ২০২১ ১০:০০ পূর্বাহ্ন

নিজস্ব প্রতিবেদক | আপডেট : ০৬ জুলাই, ২০২০ সোমবার ১০:০০ এএম
বেঁচে থাকার প্রয়োজনে দৈনন্দিন খাদ্য গ্রহণ করে মানুষ। দেশের অধিকাংশ খাদ্য তালিকার মেন্যুতে যুক্ত ভেজাল উপকরণ। একশ্রেণীর মুনাফালোভী ব্যবসায়ীরা অতিরিক্ত লাভের আশায় খাদ্যপণ্য মেশানো হচ্ছে রাসায়নিক ক্যামিক্যালসহ ফরমালিন। এসব খাবার গ্রহণের ফলে মানুষের শরীরে বিভিন্ন রোগের আবির্ভাব ঘটে। দীর্ঘদিন টানা ভেজাল খাদ্য গ্রহণের ফলে মানুষের শরীরে ভয়ানক ক্যান্সার সহ বাড়ছে প্রাণহানির আশঙ্কা।
এদিকে আইন ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সমন্বয়হীনতার অভাবে হাইকোর্টের দেয়া এক আদেশ প্রায় ১২ বছরেও বাস্তবায়ন হয়নি চট্টগ্রামের খাদ্য আদালত গঠন। শুধু তাই নয়, নিয়ম থাকলেও নিয়োগ দেয়া হয়নি খাদ্য বিশ্লেষক ও পরিদর্শক।
সাম্প্রতিক চট্টগ্রামের বিভিন্ন কোম্পানির পণ্যসামগ্রী, খাবার হোটেল ও কাঁচাবাজারে অভিযান পরিচালনা করেছে চট্টগ্রাম জেলা ভ্রাম্যমান আদালত ও সরকারি বিভিন্ন সংস্থা— সেখানে দেখা যায় এসব চিত্র।
দেখা যায়, মাছ, মাংস ও মুরগী ইত্যাদি খাদ্য সংরক্ষণ ও কৃত্রিমভাবে বড় করতে মেশানো হচ্ছে ফরমালিন সহ ট্যানারির বর্জ্য ব্যবহার করা হচ্ছে। চলতি বছরের ২৯ জুন রাজধানী ঢাকার ডেমরা থানা এলাকায় ট্যানারির বর্জ্য দিয়ে মুরগী ও মাছের খাদ্য তৈরীর দায়ে ৩২ লাখ জরিমানা করে র‌্যাবের ভ্রাম্যমান একটি আদালত। ওইসময় ৬ হাজার টন বিষাক্ত মুরগী ও মাছের খাদ্য জব্দ করা হয়।
এছাড়া বেকারির খাবারে মেশানো হচ্ছে টেক্সটাইল ও লেদার রং। শুঁটকি মাছে মেশানো হচ্ছে কীটনাশক ওষুধ। ২০১৯ সালের ১১ মে চট্টগ্রামের পৃথক ভেজাল অভিযানে নোংরা পরিবেশে খাবার তৈরী, পচা ডিম, বাসি পামওয়েল ও টেক্সটাইল ক্যামিকেল দিয়ে কেক ও বিস্কুট তৈরির দায়ে বনফুলকে জরিমানা করে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসনের ভ্রাম্যমান আদালত।
এদিকে হোটেল ও দোকানে ভেজাল খাবার পরিবেশন, অবিক্রিত খাবার সংরক্ষণ করার দায়ে বিভিন্ন সময় জরিমানা করে ভ্রাম্যমান আদালত। একই সঙ্গে দোকানপাট ও হোটেলগুলো সিলগালা করা হয়। ২০১৯ সালের ১০ জুলাই নগরের মুরাদপুর এলাকায় হোটেল জামানকে মৃত মুরগীর রান্না ও গ্রিল বানিয়ে খাওয়ানোর দায়ে ১০ হাজার টাকা, ২০১৯ সালের ১০ মে নগরীর জিইসি এলাকায় জামান রেস্টুরেন্ট মেজবানি এন্ড কাবাব ও বাসমতি হোটেলকে পৃথকভাবে জরিমানা করে জেলা প্রশাসন ও চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের ভ্রাম্যমান আদালত।
এসব ভেজাল খাদ্যের বিষয়ে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মাইক্রোবায়লজি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডা. জাকির হোসেন বলেন, ‘খাবারে মেশানো ক্যালসিয়াম কার্বোইডে থাকে আর্সেনিক ও ফসফরাস সহ রাসায়নিক পদার্থ। এই খাবার গ্রহণের ফলে মানুষের শরীরে দুইভাবে ক্ষতি সাধন করে। ফলে এসিটাইলিন গ্যাস স্নায়ুতন্ত্রের মধ্যে মস্তিস্কের অক্সিজেন সরবরাহ কমিয়ে দেয়। এতে আর্সেনিক, চর্ম, লিভার, কিডনি ও ফুসফুসের নানা ধরনের মারাত্মক ক্ষতি হতে পারে।
এছাড়া মানুষের শ্বাস-প্রশ্বাসের সাহার্য্যে খাবার গ্রহণের ফলে গলা ব্যাথা, কাশি ও শ্বাসকষ্ট হতে পারে। চোখ ও চামড়ার সংস্পর্শে এলে জ্বালাপোড়া, চোখের অন্ধত্ব ও চামড়ায় ঘা হতে পারে। অতিমাত্রায় খাবার গ্রহণের ফলে শ্বাসকষ্টসহ ফুসফুসের পানি জমে থাকার সম্ভাবনা রয়েছে। পরবর্তীতে কফ, কাশি ও এজমা হওয়ার সম্ভাবনা।’
আইন যা বলছে—
১৯৭৪ সালের বিশেষ ক্ষমতা আইনে বলা হয়, খাদ্য ভেজাল ও বিক্রয় করার সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদন্ডের বিধান রাখা হলে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের এই আইন বাস্তবায়নের নজর নেই সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের।
অভিযোগ আছে, চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে আসা ফলমূল ও মাছের ফরমালিন পরীক্ষা-নিরীক্ষা করার প্রক্রিয়া সঠিক কার্যকারিতা নেই। কর্মকর্তাদের গাফেলতি ও উৎকোচের বিনিময়ে টেস্টিং প্রক্রিয়াও চলে ঢিলেঢালাভাবে পরীক্ষা ইত্যাদি। এছাড়া পচনশীল পণ্যের মাধ্যমে প্রতিদিন বিভিন্ন মার্কেট ও বাজারে ঢুকে পড়ছে ফরমালিনযুক্ত ফলমূল সহ বিভিন্ন খাবার।
চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসন সূত্র জানায়, গত জুলাই ২০১৮ জুন ২০১৯ পর্যন্ত জেলা ও নগরে ভ্রাম্যমান ম্যাজিস্ট্রেট অভিযান চালিয়ে একহাজার পাঁচশ’ ৪২টি অভিযান পরিচালনা করা হয়। সেখানে মামলা হয়েছে ৩ হাজার ৫৫৬ টি। ২০১৯ সালের রমজান মাসে সবচেয়ে বেশি ভেজাল বিরোধী অভিযান পরিচালনা করা হয়েছে। ওই সময় ১৯২ বার অভিযান চালিয়ে ৬০৪ টি মামলা সহ জরিমানা করা হয়।
চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক ইলিয়াস হোসেন এই প্রসঙ্গে বলেন, ‘জেলা ও নগরে বিভিন্ন জায়গায় নিয়মিত ভেজাল বিরোধী অভিযান অব্যাহত রয়েছে। সুনির্দিষ্ট অভিযোগ পেলে তাৎক্ষনিক যে কোনো জায়গা বা প্রতিষ্ঠানে পরিচালনা করা হচ্ছে।’
হাইকোর্টের এক আদেশের প্রসঙ্গ টেনে প্রশ্নের জবাবে জেলা প্রশাসক আরও বলেন, ‘১ জুন ২০০৯ সালে একটি রিটের পরিপ্রেক্ষিতে চট্টগ্রামে খাদ্য আদালত, বিশ্লেষক ও পরিদর্শক নিয়োগ দেওয়ার জন্য দু’বছর সময় বেঁধে দেয় সংশ্লিষ্ট দফতরকে। কিন্তু এই আদেশ বাস্তবায়ন না হওয়ার পেছনে দায়ী আইন ও খাদ্য মন্ত্রণালয়। দুই সংস্থার সমন্বয়হীনতায় অভাবে এটি বাস্তবায়ন হচ্ছে না।’
সিটিজিসান ডটকম/সিএস/আরএইচ