অনলাইন | সিটিজিসান.কম
ঢাকা | ২৫ ডিসেম্বর ২০১৮, মঙ্গলবার ০৮:৪৫ পিএম |
একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ভোটের দিন (৩০ ডিসেম্বর) ও তার পরের দিনের (৩১ ডিসেম্বর) এয়ারলাইনসের টিকিট এখন সোনার হরিণ। এসব দিনে দেশের বাইরে যেতে টিকিটের চাহিদা এখন তুঙ্গে। চাহিদা ব্যাপক হওয়ায় সংকট তৈরি হয়েছে। চাহিদা এতোই যে, অন্য সময়ের চেয়ে দ্বিগুণ দামে ওই সময়ের টিকিট বিক্রি হচ্ছে।
একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের দিন ও তার পরের দিন অর্থাৎ ৩১ ডিসেম্বর বছরের শেষ দিনে এয়ারলাইন্সের অভ্যন্তরীণ রুটে কোনো সিট পাওয়া যাচ্ছে না। এই দু’দিন বাংলাদেশ থেকে বিদেশি রুটগুলোতেও একই অবস্থা। বেশিরভাগ দেশি বা বিদেশি এয়ারলাইনসের সিট খুব বেশি খালি নেই বলে জানিয়েছেন অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক রুটে চলা একাধিক এয়ারলাইনসের কর্মকর্তারা।
জানা যায়, প্রতি বছর ডিসেম্বর মাসে সাধারণত টিকিটের সংকট থাকে। কারণ এ মাসে বাচ্চাদের ছুটি থাকায় অনেকে বেড়াতে যান দূরে কোথাও। তাই আগেই টিকিট কেটে রাখেন সবাই। যে কারণে পুরো ডিসেম্বরে টিকিটের সংকট থাকে। কিন্তু এ বছরের জাতীয় নির্বাচন এ মাসে নতুন মাত্রা যোগ করেছে। নির্বাচনের মাসে বিমানে যাত্রী চাহিদা বেড়েছে।
সূত্র জানায়, ইকোনমি ক্লাসের টিকিট মোটামুটি শেষ। তবে বিজনেস ক্লাসের টিকিট পাওয়া যাচ্ছে। তবে ইকোনমি বা বিজনেস ক্লাসের কিছু টিকিট মিললেও তা কিনতে গেলে উচ্চমূল্য পরিশোধ করতে হচ্ছে। তবে এ দুই তারিখে দেশের বাইরে থেকে আসতে টিকিটের উচ্চমূল্য পরিশোধ করতে হচ্ছে না।
ইংরেজি নববর্ষ উদযাপন ও পর্যটন মৌসুম হওয়ায় ডিসেম্বরের মাঝামাঝি থেকে অনেক সচ্ছল পরিবার দেশের বাইরে যায়। স্বাভাবিকভাবেই প্রতি বছর ডিসেম্বরের শেষভাগে থাইল্যান্ড, মালয়েশিয়া, ভারতসহ পার্শ্ববর্তী দেশগুলো ভ্রমণে আকাশপথের টিকিট সংকট তৈরি হয়। তবে এবার জানুয়ারিতেও বাংলাদেশ থেকে বিদেশি গন্তব্যগুলোয় টিকিট সংকট দেখা দিয়েছে। কানাডা, যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যের মতো দূরের গন্তব্যও আছে এর মধ্যে। নির্বাচন-পরবর্তী সহিংসতার আশঙ্কাকে এর একটা কারণ হিসেবে দেখছেন সংশ্লিষ্টরা। জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহের জন্য এসব রুটে চাহিদা বাড়ায় স্বাভাবিকের তুলনায় তিন-চার গুণ বেশি দামে টিকিট বিক্রি হচ্ছে।
পর্যটন মৌসুমের পাশাপাশি নির্বাচনও এ বছর আকাশপথে টিকিট সংকটের অন্যতম কারণ বলে মনে করছে ট্রাভেল এজেন্সিগুলো। তারা বলছে, ৩০ ডিসেম্বর একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন। আর তার একদিন বাদেই শুরু হচ্ছে নতুন বছর। বছরের এ শেষ দিন উদযাপনে অনেকেই দেশের বাইরে যাওয়ার পরিকল্পনা করেন। আবার অনেকেই চাইছেন ৩০ ডিসেম্বর ভোট দিয়ে ছুটি কাটাতে দেশের বাইরে যেতে। এ কারণে ৩০ ডিসেম্বর রাতের ফ্লাইট থেকেই মূলত আকাশপথে টিকিট পেতে যাত্রীদের সমস্যা হচ্ছে। জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহের ইকোনমি ক্লাসের টিকিট এরই মধ্যে মোটামুটি শেষ। তবে বিজনেস ক্লাসের টিকিট পাওয়া যাচ্ছে। ইকোনমি বা বিজনেস ক্লাসের টিকিট মিললেও তার জন্য যাত্রীদের উচ্চমূল্য পরিশোধ করতে হচ্ছে।
বাংলাদেশ থেকে এমিরেটস এয়ারলাইনস, কাতার এয়ারওয়েজ ও টার্কিশ এয়ারলাইনসই মূলত বড় দূরত্বের যাত্রী পরিবহন করছে। এ তিন এয়ারলাইনসের ক্ষেত্রেই জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহে টিকিট সংকট তৈরি হয়েছে। স্বাভাবিক সময়ে ঢাকা থেকে কানাডা যেতে যাত্রীপ্রতি রিটার্ন টিকিটের মূল্য গড়ে ১ লাখ ৩০ হাজার টাকা থাকলেও জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহে সেটি ৩ লাখ ৫০ হাজার টাকায় বিক্রি হচ্ছে। একইভাবে ঢাকা-নিউইয়র্ক রুটের ৮৫ হাজার টাকার রিটার্ন টিকিট ১ লাখ ৩০ হাজার ও ঢাকা-লন্ডন রুটের ৭০ হাজার টাকার রিটার্ন টিকিট বিক্রি হচ্ছে ৯০ হাজার টাকায়।
আর্ক ট্রাভেলসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. আহসান হাবিব এ প্রসঙ্গে বলেন, পর্যটন মৌসুম হওয়ায় প্রতি বছরই এ সময় টিকিটের বাড়তি চাহিদা থাকে। তবে এবার পার্শ্ববর্তী দেশগুলো ছাড়াও কানাডা, যুক্তরাষ্ট্রের মতো দেশের টিকিটও বেশি বিক্রি হচ্ছে, যা কিছুটা ব্যতিক্রম বলে মনে হচ্ছে। আমেরিকা ও ইউরোপের ক্ষেত্রে আগামী ২ থেকে ৬ জানুয়ারি পর্যন্ত টিকিটের জন্য যাত্রীদের ব্যাপক চাপ রয়েছে। কানাডার টিকিট ৪ লাখ টাকায়ও বিক্রি হতে দেখা গেছে।
তিনি বলেন, লম্বা দূরত্বের ক্ষেত্রে বাংলাদেশী যাত্রীদের মূলত এমিরেটস এয়ারলাইনস, কাতার এয়ারওয়েজ ও টার্কিশ এয়ারলাইনসই পছন্দ। কারণ এ তিন এয়ারলাইনস মধ্যপ্রাচ্যে একটি ট্রানজিট দিয়ে কাক্সিক্ষত গন্তব্যে পৌঁছে দেয়। সে কারণে ঢাকা থেকে দুবাই, দোহা ও ইস্তাম্বুলের টিকিট প্রায় শেষ।
আন্তর্জাতিক রুটে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনস, রিজেন্ট এয়ারওয়েজ, নভোএয়ার, ইউএস-বাংলা এয়ারলাইনস, মালয়েশিয়া এয়ারলাইনস, এমিরেটস এয়ারলাইনস, কুয়েত এয়ারওয়েজ, সিঙ্গাপুর এয়ারলাইনস, কাতার এয়ারওয়েজ, টার্কিশ এয়ারলাইনস, এয়ার অ্যারাবিয়া, এয়ার এশিয়া, ফ্লাই দুবাই, জেট এয়ারওয়েজ, এয়ার ইন্ডিয়াসহ প্রায় ৩৫টি দেশী-বিদেশী এয়ারলাইনস ফ্লাইট পরিচালনা করছে। সব এয়ারলাইনসেরই আগামী ১৫ দিনের টিকিট প্রায় শেষ। এয়ারলাইনসগুলোর ওয়েবসাইট সূত্রে জানা গেছে, ৩১ ডিসেম্বর থেকে পরবর্তী এক সপ্তাহ টিকিটের চাহিদা সবচেয়ে বেশি।
৩১ ডিসেম্বর থেকে পরবর্তী এক সপ্তাহে টিকিটের বাড়তি চাহিদার জন্য ৩০ ডিসেম্বরের নির্বাচনকে অন্যতম কারণ হিসেবে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। একাধিক ট্রাভেল এজেন্সির সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তারা জানায়, নির্বাচন-পরবর্তী পরিস্থিতি কী হয়, তা নিয়ে অনেকেই শঙ্কায় আছেন। এ শঙ্কা থেকেও অনেকে বিদেশী গন্তব্যের এয়ার টিকিট কিনছেন।
বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা জানান, সাধারণত প্রতি বছর ডিসেম্বরে টিকিটের সংকট থাকে। কারণ বছরের শেষ সময়ে ছুটি নিয়ে অনেকেই দেশের বাইরে যান। এবার নির্বাচনের কারণেও টিকিটের চাহিদা বেড়েছে। কারণ অনেক প্রবাসী বাংলাদেশী যারা ছুটিতে দেশে এসেছেন, তারা ভোটের পর নিজ নিজ কর্মক্ষেত্রে ফিরবেন। এছাড়া সাংবাদিকরাও নির্বাচন পর্যবেক্ষণে এসেছেন, যারা জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহে ফিরবেন। এ কারণে জানুয়ারিতে টিকিটের চাপও বেশি।
উল্লেখ্য, অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক মিলে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে প্রতিদিন গড়ে ২৬৬টি ফ্লাইট ওঠানামা করে। এসব ফ্লাইট ওঠানামার কার্যক্রম পরিচালনা করছে ২৭টি বিদেশী ও চারটি দেশী এয়ারলাইনস। এছাড়া চট্টগ্রাম শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর ও সিলেটের ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকেও দেশী-বিদেশী এয়ারলাইনসের আন্তর্জাতিক ফ্লাইট রয়েছে।
দেশীয় এয়ারলাইনসগুলোর মধ্যে আন্তর্জাতিক রুটে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনস মধ্যপ্রাচ্যে কুয়েত, দাম্মাম, দোহা, রিয়াদ, জেদ্দা, আবুধাবি, দুবাই ও মাসকাটে ফ্লাইট পরিচালনা করছে। আর দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে ব্যাংকক, কুয়ালালামপুর ও সিঙ্গাপুরে এবং স্বল্পদূরত্বে কলকাতা, ইয়াঙ্গুন ও কাঠমান্ডুতে ফ্লাইট রয়েছে এয়ারলাইনসটির। এছাড়া ইউরোপে কেবল লন্ডন রুটে ফ্লাইট রয়েছে বিমানের।
বেসরকারি এয়ারলাইনসের মধ্যে ইউএস-বাংলা এয়ারলাইনসের আন্তর্জাতিক রুটে সিঙ্গাপুর, কুয়ালালামপুর, দোহা, মাসকাট, গুয়াংজু ও কলকাতায় ফ্লাইট রয়েছে। এছাড়া রিজেন্ট এয়ারওয়েজের কলকাতা, ব্যাংকক, সিঙ্গাপুর, কুয়ালালামপুর, মাসকাট ও দোহায় ফ্লাইট রয়েছে। আর নভোএয়ারের কলকাতা রুটে ফ্লাইট রয়েছে।
সিএস/সিএম/এসআইজে
Print This Post