দ্বন্দ্ব নিষ্পত্তিতে ব্যবহৃত ভাড়াটে কিলার!

আপডেট: ৪ অক্টোবর ২০১৮ ২:২৩ অপরাহ্ন

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | সিটিজিসান.কম

চট্টগ্রাম:
ব্যবসায়িক দ্বন্দ্ব, স্বার্থের বিরোধ ও রাজনৈতিক শত্রুতাসহ নানা স্বার্থের হাসিলে উদ্দেশে ভাড়াটে খুনিদের ব্যবহার করা হচ্ছে। এসব কাজে বিভিন্ন জেলার শীর্ষ সন্ত্রাসীরা মূলত চট্টগ্রামে আসে। চুক্তি মোতাবেক খুনের পর পরই আবার স্থান ছেড়ে চলে যায়। সম্প্রতি চট্টগ্রাম মহানগর পুলিশ (সিএমপি) খুনির ঘটনা তদন্তে নামার পর এসব চিত্র চিহ্নিত করেছে।

মহানগর পুলিশের কয়েকজন কর্মকর্তা জানিয়েছে, চট্টগ্রাম মহানগরে বেশ কয়েকটি স্থানকে চিহ্নিত করে ভাগ করে কাজ করছে শীর্ষ সন্ত্রাসীরা। এদের মধ্যে কয়েকজন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে আটক হয়ে জেলে, কেউ আবার নজরদারিতে, কেউ আন্ডারগ্রাউন্ডে এবং অনেকইে বিদেশে পালিয়েছে। খুনের কাজ পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে হত্যাকান্ডের নকশা সাজিয়ে সে অনুযায়ী ভাড়াটেদের নির্দেশনা দিচ্ছে। এদের শীর্ষ সন্ত্রাসীদের সংখ্যা নেই মহানগর পুলিশের কাছে।

চলতি বছরে ১৪ সেপ্টেম্বর রাত সোয়া ১০টার দিকে মহানগরের মুরাদপুর এন মোহাম্মদ কনভেনশন সেন্টারের সামনে আওয়ামী লীগ নেতা ও জেলা পরিষদ সদস্য আলমগীর চৌধুরী সন্ত্রাসী হামলার শিকার হন। এসময় তার পিঠে ও শরীরে গুরুতর জখম করা হয় তাকে। গ্রেপ্তার করে পাঁচলাইশ থানা পুলিশ। এদের মধ্যে নেজাম উদ্দিন নজু গত ২৪ সেপ্টেম্বর আদালতে দেওয়া জবানবন্দিতে জানায়, আলমগীরের ওপর হামলার পরিকল্পনায় চট্টগ্রামের আনোয়ারা উপজেলার কয়েকজন প্রভাবশালী রাজনৈতিক ও ব্যবসায়িক ব্যক্তিবর্গ জড়িত ছিলেন। আহত আলমগীর চৌধুরীর বিভিন্ন ব্যবসা ছিল আনোয়ারায়। এ নিয়ে বিরোধের জের ধরে ছুরিকাঘাতের ঘটনা ঘটেছে বলে পুলিশ তদন্তে জানতে পেরেছে।

পুলিশ কর্মকর্তারা জানান, ঘটনার সময় উপস্থিত থাকা আজিজ মেম্বার হচ্ছেন আনোয়ারা উপজেলার বারখাইন ইউনিয়নের ৭ নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য। অভিযুক্ত জসিম হচ্ছেন একই ইউনিয়নের ৯ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক। সেদিন আওয়ামী লীগ নেতা আলমগীর চৌধুরীকে ছুরিকাঘাত করা মো. আলমগীর হচ্ছেন সদরঘাটের পরিবহন ব্যবসায়ী হারুনুর রশিদ চৌধুরী হত্যা মামলার এক নম্বর আসামি।

২০১৭ সালের ৩ ডিসেম্বর সদরঘাটের কদমতলীর শুভপুরে ট্রাক স্টেশন কেন্দ্রীক ব্রোকারদের কমিশনের টাকা ভাগ-বাটোয়ারায় আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে এ হত্যাকান্ড ঘটেছে বলে তদন্তে উঠে এসছে। হারুন হত্যা মামলায় গত ১৬ সেপ্টেম্বর ১৮ জনের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র দেয় তদন্ত কর্মকর্তা মহানগর সদরঘাট থানার পুলিশের উপপরিদর্শক (এসআই) অলি উল্লাহ। এই মামলায় অভিযোগপত্রভুক্ত আসামি নুর উদ্দিন খান মুরাদ, যিনি সর্বশেষ আওয়ামী লীগ নেতা আলমগীর চৌধুরীকে ছুরিকাঘাতের ঘটনায়ও অংশ নিয়েছেন।

পুলিশ সূত্র বলছে, চিহ্নিত সন্ত্রাসী মো. আলমগীর নগরের একজন জনপ্রতিনিধির ছত্রছায়ায় থাকেন। তার অধীনে আরো বেশকিছু সন্ত্রাসী আছে। তারা নগরীর মোগলটুলি এলাকায় অস্থায়ীভাবে থাকেন। এই গ্রুপের সদস্যরা যে কোন ধরনরে অস্ত্র-গোলাবারদ চালাতে পারদর্শি। টাকার জন্য যে কোন কাজ করতে পারে। পরিবহন ব্যবসায়ী হারুন নিহত হয়েছিলেন তাদের গুলিতেই। গত ১৪ সেপ্টেম্বর আলমগীর চৌধুরীকে খুন করার কাজও পেয়েছিল পেশাদার খুনিদের গ্রুপটি। এজন্য উপর্যুপরি কোপানো হয় তাকে। কিন্তু আশপাশের মানুষ এগিয়ে আসায় ও ভাগ্য সহায় হওয়ায় এ যাত্রায় বেঁচে যান আলমগীর চৌধুরী।

পাঁচলাইশ থানার পরিদর্শক (ওসি তদন্ত) ওয়ালী উদ্দিন আকবর বলেন, গ্রেপ্তার নজুর জবানবন্দি ও তথ্য প্রযুক্তির মাধ্যমে আমরা জেনেছি, আওয়ামী লীগ নেতা আলমগীর চৌধুরীর ওপর হামলায় যারা জড়িত ছিলেন তারা তাকে চিনেনও না। টাকার বিনিময়ে চুক্তিতে খুন করতে আসে তারা। হত্যাকান্ডে অংশ নেয়া ৭-৮ জন ভাড়াটে খুনির পরিচয় এখনো শনাক্ত করতে পারেনি পুলিশ।

পুলিশ আরো জানায়, এসব শীর্ষ সন্ত্রাসী হত্যাকান্ড ঘটনার কাজে কাজের ধরণ অনুপাতে একেক রকম। যেখানে বেশি মূল্য পাবে ওই কাজে আগ্রহ বেশি তাদের। স্থান বিষয় না। যে কোন জায়গায় হত্যাকান্ড ঘটারত পারবে। ফ্যাক্টর হচ্ছে টাকা। যে যত টাকা গুনতে পারবে তার কাজ তত সহজ করে দিচ্ছে এসব ভাড়ায় খুনীরা। আওয়ামী লীগ নেতা আলমগীর চৌধুরীর ওপর হামলার জন্য তারা কত টাকা নিয়েছিল তা বিস্তারিত টাকার পরিমাণ জানায়নি। তাকে হত্যার টার্গেটই ছিল তাদের।

মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের সহকারী কমিশনার (বন্দরজোন) আসিফ মহিউদ্দীন বলেন, হত্যাসহ বিভিন্ন অপরাধের ঘটনা তদন্তে ভাড়াটে খুনিদের ব্যবহার সম্পর্কে জানতে পেরেছে পুলিশ। সম্প্রতি বেশ কয়েকটা খুনের ঘটনার পর পরই পুলিশ তদন্তে নামার পর এসব তথ্য বেরিয়ে আসে। এসব খুনিদের নজরদারি বাড়িয়ে তাদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা করছে পুলিশ।

মহানগর পুলিশের উপকমিশনার (উত্তর) বিজয় বসাক বলেন, রাজনৈতিক দ্বন্দ্ব, ব্যবসায়িক বিরোধ বা মতের ভিন্নতার কারে বেশ কয়েকটি খুনের ঘটনা বেড়েছে চট্টগ্রাম মহানগরে। এসব ঘটনায় টাকার বিনিময়ে পেশাদার সন্ত্রাসীরা অংশ নিচ্ছে। খুনের ঘটনায় অনেকেই গ্রেপ্তার হয়েছে। অপরাধী যেই হউক না কেন দ্রুত আইনের আওতায় আনা হবে সবাইকে।

সিএস/সিএম