স্থানীয়দের তোপের মুখে কাস্টমসের ভোগ্যপণ্য ধ্বংস কার্যক্রম স্থগিত, পরে সমাধান!

আপডেট: ৫ ডিসেম্বর ২০১৭ ৪:১৪ অপরাহ্ন

ctg patenga

নিজস্ব প্রতিবেদক, চট্টগ্রাম :
চট্টগ্রাম কাস্টমসে খাওয়ার অনুপযোগী ২ হাজার টন ভোগ্যপণ্য ধ্বংসের চারদিনব্যাপি চলা কর্মসূচি মধ্য আজ এসব ধ্বংসের কাজে বাঁধা দিয়েছে এলাকাবাসী। মঙ্গলবার সকাল চট্টগ্রাম নগরীর পতেঙ্গা থানাধীন বিজয় নগর এলাকার মোড়ে এ ঘটনা ঘটে।

প্রায় ঘন্টা খানেক যানজট লেগে যায়। দূর্ভোগে পড়ে এয়ারপোর্টগামী যাত্রী ও বিভিন্ন শ্রেনীর মানুষ। পরে প্রশাসনের এক ঘন্টার সমঝােতায় অবরোধ উঠিয়ে নেয় তারা।

এসময় এলাকাবাসীর অভিযোগ, পূর্বের থেকে কোন ধরনের নোটিশ ছাড়া পরিবেশ দুষণ করে একটি ঘণবসতিপূর্ণ এলাকায় ভিআইপি রোডের পাশে ধ্বংত্নাক কার্যক্রম কাস্টমসের মোটেই উচিত হয়নি বলে মনে করেন স্থানীয়রা।

অবরোধের নেতৃত্বদানকারী যুবনেতা মোহাম্মদ ফজল করীম বলেন, দক্ষিণ পতেঙ্গা বিজয়, গুচ্ছগ্রাম, লালদিয়ার, চরবস্তি, নিজাম মার্কেট, দক্ষিণ পাড়া এলাকা মিলে প্রায় ৫ লাখের লোকের বসবাস। এখানে আছে এয়ারপোর্স ঘাটি, আছে শাহ আমানত বিমানবন্দর, নেভাল একাডেমী। এতো কিছুর থাকার পর একটি লোকারণ্যে স্থানে পরিবেশ দুষণ করে কাস্টসের এ ধরনের কার্যক্রম মোটেই সমীচীন হয়নি।

ctg patenga1

তিনি আরো বলেন, গত বছর এ ধরনের ধ্বংত্নাক কার্যক্রমের কারণে এলাকায় নানান ধরনরে সমস্যা সৃষ্টি হয়েছে। বিশেষ করে শ্বাস কষ্ট, ডায়েরিয়া, এলার্জিসহ বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হয়েছিল স্থানীয়রা।

স্থানীয় যুবনেতা মোহাম্মদ ওয়াহিদ চৌধুরী বলেন, আমরা চট্টগ্রাম কাস্টমসের অন্যায়ভাবে এলাকাবাসীর উপর চাপিয়ে দেয়া ধ্বংত্নাক কার্যক্রম শান্তিপূর্ণভাবে বাঁধা দিয়েছি। তবে পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাগণ, কাস্টমসের কর্মকর্তাগণ, স্থানীয় প্রতিনিধিরা একটি সুষ্ট সমাধানের মাধ্যমে আজকের (মঙ্গলবার) মতোই বর্জ্য অপসারণের পর পরবর্তীতে এলাকাবাসীর স্বার্থে কোন ধরনের এসব ধ্বংত্নক কার্যক্রম চালাবে না বলে উভয়পক্ষ একমত পোষণ করলে অবরোধ উঠিয়ে নেয় স্থানীয়রা।

উল্লেখ্য, গতকাল সোমবার থেকে চট্টগ্রাম কাস্টমসে চারদিনব্যাপি ৮৯ কন্টেনারভর্তি ২ হাজার টন খাওয়ার অনুপযোগী ভোগ্যপণ্য ধ্বংসের উদ্যোগ নেয়। ২০১০ সাল এসব পণ্য আমদানি করে কাস্টমস কর্তৃপক্ষ। এসব তালিকার মধ্যে রয়েছে, আপেল, কমলা, মাছ, আনার, আদা, রসুন, আঙ্গুর। দীর্ঘদিন ধরে খালাস না হওয়ায় ১০৯টি কন্টেনার ভোগ্যপণ্য পচে খাওয়ার অনুপযোগী হয়ে পড়ে। তাই নির্ধারিত সময় শেষে এসব পণ্যের ধ্বংসের জন্য সিদ্ধান্ত নেয় চট্টগ্রাম কাস্টমস কর্তৃপক্ষ।

ঘটনাস্থলে উপস্থিত চট্টগ্রাম কাস্টমসের সহকারী কমিশনার (নিলাম) মো. নাজমুল হক জানান, বন্দরের ইয়ার্ড দখল করে আটকে থাকা কন্টেনার নিলাম ও ধ্বংস করতে কাস্টমস কমিশনারের নির্দেশে কাজ চলছে। আমরা বন্দর থেকে জায়গা চাইলে বন্দর কর্তৃপক্ষ আমাদেরকে ভিআইপি রোড বিজয়নগর পাশ্ববর্তী স্থানে ধ্বংসের স্থান নির্দিষ্ট করে দেয়। তাই আমরা উক্ত স্থানে কার্যক্রম চালাতে আসছি। তবে এলাকার লোকজনের দুষণে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে বলে জানানো হলে আমাদের কর্তৃপক্ষ তাদের সাথে একটি বৈঠকের মাধ্যমে একটা সমাধানের চেষ্টা করি। পরবর্তীতে এই স্থানে আর কোন ধরনরে ধ্বংত্নক কার্যক্রম চালাব না বলে স্থানীয়দের আশ্বস্ত করলে তারা আমাদের সঙ্গে একমত পোষণ করেন। আজ (মঙ্গলবার) বন্দর থেকে আনীত ১৩ কন্টেনার খালাস করে আগামীকাল বুধবার থেকে আর এইস্থানে এসব ধ্বংত্নাক কার্যক্রম চালানো হবে না। বাকি কন্টেনার গুলো অন্যস্থানে ধ্বংত্নক কার্যক্রম চালানো হবে বলে জানান সহকারী কমিশনার মো. নাজমুল হক।

জানতে চাইলে ঘটনাস্থলে উপস্থিত পতেঙ্গা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবুল কাশেম ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে জানান, স্থানীয়দের স্বার্থে কাস্টমস কর্তৃপক্ষ, পুলিশ, স্থানীয় প্রতিনিধিগণের যৌথ সমন্বয়ে একটি বৈঠকের মাধ্যমে সমাধানের আশ্বস্ত করা হলে স্থানীয়রা ধ্বংত্নাক কার্যক্রম বাঁধা উঠিয়ে নেয়। বর্তমানে ওই এলাকার পরিস্থিতি ভাল।