বয়স নিয়ে মা-মেয়ের পাল্টা-পাল্টি সংবাদ সম্মেলন

আপডেট: ২২ সেপ্টেম্বর ২০১৯ ৮:০৯ অপরাহ্ন

রোববার, ২২ সেপ্টেম্বর ২০১৯, ০৪:৩০ পিএম

নাঈম ইসলাম, রাঙামাটি :: কারো প্ররোচনা ছাড়াই নিজে প্রেমিকের হাতধরে বাড়ি থেকে পালিয়ে বিয়ে করে সুখে আছেন এমন দাবি আজরা আতিকা আনান নামের এক কিশোরীর। আজরা আতিকা আনান জানান, শ্বশুরালয়ের লোকগদের আদর সোহাগের কমতি নেই। নিজের কন্যার মতোই বুকে আগলে রেখেছেন তাকে। আর ওই কিশোরীর মা উর্মিলা আলমের দাবি, আজরা আতিকা আনানের আজও বিয়ের বয়স হয়নি। প্রাপ্ত বয়স হতে আরও দুই বছর বাকি। গত ক’দিন আগে স্কুলের গণ্ডি পার হওয়া কিশোরী কন্যাকে ফুসলিয়ে নিয়ে গিয়ে বিয়ে করেছে এক বখাটে যুবক। আজরা আতিকা আনানের মা জানান, বিয়ের তিন তিনটি বছর পর পৃথিবীতে এসেছে আজরা আতিকা আনান। তার জন্ম সাল ২০০৩।

রোববার রাঙামাটি শহরে একটি রেস্টুরেন্টে এক সংবাদ সম্মেলন করে আজরা আতিকা আনানের বিয়ে ও পরবতী অবস্থানের কথা তুলে ধনের হতভাগান মা উর্মিলা আলম।

তবে মা-বাবার আগে চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবে গত ১৫ সেপ্টেম্বর সংবাদ সম্মেলন করে মেয়ে আজরা আতিকা আনান। সেখানে আনান জানায়. মায়ের বিয়ের এক বছর পরই তার জন্ম। জন্ম নিবন্ধনে সে তথ্য লিখেনি বাবা-মা। মনগড়া একটি তারিখ বসিয়েছেন তারা। এরমধ্যে এক যুবকের সঙ্গে তার বিয়ে ঠিক করেছেন মামা। এতে পরিবারের সবাই রাজি। তবে সেই যুবকের সাথে সংসারী হতে রাজি নয়। তাই নিজের পছন্দের পাত্রের হাত ধরে বাড়ি ছেড়েছে। আর ম-বাবা ও মামা থানায় গিয়ে অফহরণের অভিযোগে মামলা করেছেন।

আজরা আতিকা আনানের বাবার অভিযোগ, আমার বড় মেয়ে আজরা আতিকা আনান (১৬) ২০১৯ সালে এসএসসি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়ার পর তাকে ঢাকায় লালমাটিয়া মহিলা কলেজে ভর্তি করাই। ভর্তি হওয়ার এক মাস পরেই গত কোরবানির ঈদের ছুটিতে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে রাঙামাটি আসে সে। চিকিৎসা শেষে সুস্থ হওয়ার পর তাকে রাঙামাটিতেই প্রাইভেট পড়ার জন্য শিক্ষকের কাছে প্রেরণ করি। রাঙামাটির হ্যাপির মোড় এলাকায় তাকে ‘সাগর স্যার’র প্রাইভেটে ভর্তি করানো হয়। গত ৮ সেপ্টেম্বর প্রথম দিনের মতো প্রাইভেটে যাওয়ার জন্য ঘর থেকে বের হয়। কিন্তু বেলা ২টার প্রাইভেটে গিয়ে সন্ধ্যায়ও ফিরে আসেনি। এ কারণে আমরা উৎকণ্ঠায় পড়ি এবং তাকে খোঁজাখুঁজি শুরু করি। পরে একপর্যায়ে জানতে পারি রাঙামাটি হ্যাপির মোড় এলাকা থেকে একটি সাদা প্রাইভেট কারে করে কাঠালতলী এলাকার নিয়াদ খান ও তার বন্ধু আরমানসহ আরো কিছু তাদের সহযোগী আমার মেয়েকে তুলে নিয়ে যায়।

উর্মিলা আলম আরো বলেন, একাধিক প্রত্যক্ষদর্শীর কাছ থেকে বিষয়টি জানতে পেরে নিয়াদ খানের পরিবারের সঙ্গে আমরা যোগাযোগ করি। তারা বিষয়টি স্বীকার করে এক দিনের মধ্যে মেয়েকে আমাদের হাতে তুলে দেওয়ার আশ্বাস দেয়। পরে ওই দিন থানায় কোনো অভিযোগ করিনি আমরা। কিন্তু তারা তাদের প্রতিশ্রুতি রক্ষায় ব্যর্থ হলে ১০ সেপ্টেম্বর আমরা কোতয়ালী থানায় একটি অভিযোগ দায়ের করি। পরে অপহরণকারী নিয়াদ খানের পিতা নেসার আহমেদকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। কিন্তু গত ১৪ দিনেও এখনো আমার মেয়ের কোনো সন্ধান পাইনি।

উর্মিলা আলম অভিযোগ করে বলেন, অপহরণকারী নিয়াদ খানের মামা লিয়াকত আলী খান ও আব্দুল মালেক খান আমাকে ফোন করে অশ্রাব্য ভাষায় গালাগালি, হুমকি এবং ‘পারলে কিছু করিস’ বলে জানান। লিয়াকত আলী খান আমার ছোট ভাই সাইফুল আলম রাশেদকে ‘গুম করে ফেলা’র হুমকি দিয়েছেন। শুধু তাই নয়, বিভিন্নভাবে চাপ সৃষ্টি করে সমঝোতার জন্য হুমকি দিচ্ছেন। অন্যথায় আমাদের পুরো পরিবারকে জেলের ভাত খাওয়ানো এবং নিশ্চিহ্ন করে দেওয়ার হুমকি দিচ্ছেন। এমনকি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আমার মেয়ের ছবি ছড়িয়ে দিয়ে আমাদের সামাজিকভাবেও বিব্রত করার চেষ্টা করছেন।

সংবাদ সম্মেলনে অপহরণের জন্য নিয়াদ খানকে, পৃষ্ঠপোষকতা প্রদানের জন্য তার সহযোগী আরমান খান, তার মামা চট্টগ্রামের আওয়ামী লীগ নেতা পরিচয় দানকারী তার মামা লিয়াকত আলী খান, আন্দরিকল্লার প্রিন্টিং ব্যবসায়ী আব্দুল মালেক খান, আসবাবপত্র ব্যবসায়ী আব্দুল খালেক ও তার পিতাকে দায়ী করেন আনানের মা উর্মিল ও বাবা দেলোয়ার হোসেন। তারা বলেন, আমার মেয়ের বয়স ১৬ বছর। তার প্রকৃত জন্ম তারিখ ২০০৩ সালের ৮ ফ্রেব্রুয়ারি। কিন্তু এই জন্মনিবন্ধনটিকে এডিটি করে অপহরণকারীরা চট্টগ্রামে সাংবাদিকদের কাছে কপি সরবরাহ করেছে।

রাঙামাটির কোতয়ালী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি-তদন্ত) খান নুরুল ইসলাম জানান, আমরা এরই মধ্যে অপহরণকারীর বাবাকে গ্রেপ্তার করে চালান দিয়েছি। আমরা সর্বোচ্চ চেষ্টা করছি কিশোরীটিকে উদ্ধার করার এবং অভিযুক্তদের গ্রেপ্তার করার। এই বিষয়ে আমরা কোনো ছাড় দেব না।

রাঙামাটি শহরের লেকার্স পাবলিক স্কুল থেকে এ বছরই এসএসসি পাশ করে রাজধানীর লালমাটিয়া কলেজে ভর্তি হওয়া দেলোয়ার হোসেন ও উর্মিলা আলম দম্পতির বড় মেয়ে আজরা আতিকা আনান গত ৮ সেপ্টেম্বর রাঙামাটি শহরের হ্যাপির মোড় এলাকায় প্রাইভেট পড়তে গিয়ে নিখোঁজ হন। এই ঘটনার পর মেয়েটির পরিবার থানায় শহরের কাঠালতলী এলাকার নিয়াদ খান, নেসার আহমেদসহ কয়েকজনকে আসামি করে একটি অপহরণ মামলা দায়ের করেন।

জেএইচ/সিএস

Print This Post Print This Post