মামলা থেকে রেহাই পাচ্ছেন বিএনপির কর্মীরা

আপডেট: ২৬ জানুয়ারী ২০১৯ ৩:৪৩ অপরাহ্ন

অনলাইন | সিটিজিসান.কম

ঢাকা | ২৬ জানুয়ারি ২০১৯, শনিবার ০৩:৩৫ পিএম|

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে দেশের বিভিন্ন থানায় দায়ের করা মামলা থেকে রেহাই পেতে যাচ্ছেন বিএনপির সাধারণ কর্মীরা। একইসঙ্গে নিরীহ মানুষ ও রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত নন, এমন ব্যক্তিদের বাদ দিয়ে সব মামলার অভিযোগপত্র দাখিল করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। পুলিশ সদর দফতর সূত্রে এই তথ্য জানা গেছে।

সূত্র জানায়, সংসদ নির্বাচনের আগে-পরে পুলিশ বাদি হয়ে দায়ের করা মামলায় বিএনপির নেতা-কর্মীদের পাশাপাশি মৃত ব্যক্তি, বৃদ্ধ প্যারালাইজড রোগী, হজ বা চিকিৎসার জন্যে বিদেশে থাকা ব্যক্তিসহ প্রবাসীদের নামেও নাশকতা-ভাঙচুর-অগ্নিসংযোগ-পুলিশের ওপর আক্রমণ ও পুলিশের কাজে বাধা দেওয়ার অভিযোগ আনা হয়েছে।

এসব অভিযোগ পরবর্তী সময়ে আমলে নিয়ে পুলিশ সদর দফতর, ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি)সহ সকারের একাধিক গোয়েন্দা সংস্থা তদন্ত শুরু করে। ওই তদন্তে প্রতিটি মামলায় কমবেশি সাধারণ মানুষ ও বিএনপির দায়িত্বপ্রাপ্ত পদে নেই, এমন ব্যক্তিদের নাম উঠে এসেছে।

মামলার পরিসংখানের তথ্য অনুযায়, গতবছরের ১ সেপ্টেম্বর থেকে নভেম্বর পর্যন্ত বিএনপি নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে ৪ হাজার ৪২৯টি। আসামি করা হয়েছে ১ লাখ ৯ হাজার ৪৪১ জনকে, অজ্ঞাত আসামি হিসেবে আদালতে চালান করা হয়েছে ৩ লাখ ২৫ হাজার ৫৩৪ জনকে। জ্ঞাত ও অজ্ঞাত আসামির সংখ্যা ৪ লাখ ৩৪ লাখ ৯৭৫ জন।

জানা গেছে, এসব মামলার তদন্ত শেষে আদালতে অভিযোগপত্র ও চূড়ান্ত প্রতিবেদন দাখিল করার সময় হয়েছে। অভিযোগপত্র দাখিলের আগে তদন্তকারী কর্মকর্তারা মামলাগুলো নিয়ে একাধিক বৈঠক করে অভিযোগ থেকে নিরপরাধ ব্যক্তিদের রেহাই দিতে সরকারের নীতি-নির্ধারণী পর্যায়ের সঙ্গে আলোচনা করেন। আলোচনা শেষে সরকারের পক্ষ থেকে সাধারণ মানুষের পাশাপাশি বিএনপির সাধারণ কর্মীদেরও রেহাই দেওয়ার পক্ষে সম্মতি জানানো হয়।

সূত্র জানায়, পুলিশ সদর দফতর থেকে কেন্দ্রীয়ভাবে এসব মামলা সঠিকভাবে তদন্ত করার জন্য এরইমধ্যে সব মেট্রোপলিটন কমিশনার ও পুলিশ সুপারদের নির্দেশ দেওয়া হয়। নির্দেশ অনুযায়ী দেশের থানাগুলোর তদন্ত কর্মকর্তারা মামলার নথী নিয়ে কাজ শুরু করছেন। তারা রাজনৈতিক মামলা নিয়ে বেশ দ্রুততার সঙ্গে কাজ করছেন।

তদন্ত ও মামলার ধরন সম্পর্কে ডিএমপির একজন কর্মকর্তা বলেন, ‘একাদশ সংসদ নির্বাচনের আগে পুলিশ বাদি হয়ে দায়ের করা মামলাগুলোর পৃথক তালিকা করা হয়েছে। এসব মামলার মধ্যে যারা সত্যিকারভাবে যানবাহনে অগ্নিসংযোগ, ভাঙচূর, পুলিশের ওপর হামলার ঘটনায় জড়িত ছিলেন, তাদের পাশাপাশি এসব ঘটনায় নির্দেশদাতা ও অর্থদাতাদের আসামি রাখা হবে।’

এই কর্মকর্তা আরও বলেন, একেবারে নিরপরাধ ব্যক্তিদের সবাইকে বাদ দেওয়া হবে। পাশাপাশি যারা বিএনপি করেন, কিন্তু দায়িত্বপ্রাপ্ত কোনো পদে নেই, তাদেরও বাদ দেওয়া হবে। এছাড়া নির্বাচনের সময় বিভিন্ন স্থান থেকে আটককৃতদের থানা হাজতে রাখার স্থান না থাকায় বিভন্ন থানায় স্থান্তর করা হয়। তাদেরও মামলা থেকে বাদ দেওয়ার চিন্তা করা হয়েছে। গায়েবি মামলা নিয়ে যেসব অভিযোগ আছে, তাও বিবেচনা করা হবে।

ডিএমপি সূত্র জানায়, এসব মামলা তদন্তের কথা বলা হয়েছে। ফলে ডিএমপির প্রতিটি ক্রাইম ডিভিশনের ডিসি, এডিসি ও এসিরা এসব মামলা থেকে বিএনপির শীর্ষ নেতাদের বাদ দিয়েছেন কিনা, আবার সাধারণ কাউকে মামলা থেকে বাদ দেওয়ার কথা বলে অর্থ লেনদেন করছে কি না, সেসব বিষয় পুলিশ কেন্দ্রীয়ভাবে নজরদারিসহ দেখভাল করবে।

এ বিষয়ে মতিঝিল বিভাগের অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার শিবলী নোমান বলেন, ‘যেকোনো ঘটনায় বাদি যেকারো বিরুদ্ধে অভিযোগ এনে মামলা দায়ের করতে পারেন। তবে তদন্ত কর্মকর্তা যদি অভিযোগের সত্যতা না পান, তাহলে মামলায় চূড়ান্ত প্রতিবেদন দাখিল করতে পারে। ’

শিবলী নোমান বলেন, ‘তবে একটি সংসদ নির্বাচন অনেক বড় একটা ইভেন্ট। অনেক দলের সম্পৃক্ততা থাকে। এসব ঘটনায় সাধারণ মানুষ থাকলে তাদের অবশ্যই বাদ দেওয়া হবে।’ রাজনৈতিক মামলাগুলোর অভিযোগপত্র ও চূড়ান্ত প্রতিবেদন আদালতে দাখিল করার যে নির্দেশনা আসছে, তা আমরা পালন করবেন বলেও তিনি মন্তব্য করেন।
সুত্র: সারাবাংলা.নেট

সিএস/সিএম/এসআইজে

Print This Post Print This Post