দু’শর্তে খালেদা জিয়ার মুক্তির ইঙ্গিত!

আপডেট: ৫ নভেম্বর ২০১৮ ১১:৫৬ পূর্বাহ্ন

অনলাইন | সিটিজিসান.কম

ছবি : সংগৃহিত

ঢাকা | ০৫ নভেম্বর ২০১৮, সোমবার, ১১:৪৫ এএম |

বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার মুক্তির বিষয়ে শর্তসাপেক্ষে আলোচনা করতে রাজি ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। তবে এজন্য বিএনপিকেও অনেক ছাড় দিতে হবে। বিশেষ করে নির্বাচনের আগে দেশের পরিস্থিতি স্থিতিশীল রাখতে হবে এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অধীনে নির্বাচনে অংশ নেওয়ার বিরোধিতা করতে পারবে না বিএনপি।

আওয়ামী লীগ মনে করে, সরকারের সঙ্গে ঐক্যফ্রন্টের দ্বিতীয় দফায় আলোচনায় খালেদা জিয়ার মুক্তির বিষয়টি অন্যতম আলোচ্য বিষয় থাকবে। এ কারণে এ ইস্যুতে বিরোধী পক্ষের সঙ্গে আলোচনায় রাজনৈতিক দরকষাকষিতে সরকারি দল শর্তসাপেক্ষে আলোচনার প্রক্রিয়া ঠিক করে রেখেছে।

এদিকে, রোববার (৪ নভেম্বর) এক অনুষ্ঠানে খালেদা জিয়ার মুক্তির বিষয়টি নিয়ে আলোচনার করার ইঙ্গিত দিয়েছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। উল্লেখ্য, জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের সবচেয়ে বড় শরিক দল বিএনপি। আর শনিবার (৩ নভেম্বর) ঐক্যফ্রন্টের বৈঠকে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরকে নবগঠিত এই জোটটির মুখপাত্র করা হয়েছে। ফলে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বধীন ১৪ দলীয় জোটের সঙ্গে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের সংলাপেরও বড় একটি অংশীদার বিএনপি।

গতকাল রোববার সকালে সচিবালয়ে সমসাময়িক বিষয় নিয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের উপস্থিত সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে বলেন, খালেদা জিয়ার মুক্তির বিষয়টি আদালতের এখতিয়ার। তবে প্যারোলে তার মুক্তি চাইলে তা প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনা করতে হবে। জামিনে মুক্তি দেওয়ার বিষয়টি আদালতের, সে এখতিয়ার সরকারের নয়।

আওয়ামী লীগ ও ১৪ দলের জেষ্ঠ্য নেতারা বলছেন, বর্তমান সরকারের রাজনৈতিক সিদ্ধান্তের কারণে গত ১০ বছরে দেশের ব্যাপক উন্নয়ন হয়েছে, যা সাড়াবিশ্বে প্রশংসিত হয়েছে। এছাড়া রোহিঙ্গা ইস্যুতেও বাংলাদেশের প্রতি বিশ্বের বিভিন্ন শক্তিশালী রাষ্ট্রগুলোর ইতিবাচক মনোভাব তৈরি হয়েছে। দেশের বিভিন্ন সাফল্যের কারণে বিভিন্ন আর্ন্তজাতিক পুরস্কার ও উপাধিতে ভূষিত হয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

নেতারা বলেন, বাংলাদেশের প্রতি বিশ্বব্যাপী যে ইতিবাচক মনোভাব তৈরি হয়েছে, এর মূলে রয়েছে আভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক পরিস্থিতির স্থিতিশীলতা। রাজনৈতিক স্থিতিশীলতার কারণেই গত ১০ বছরের আর্থসামাজিক পরিস্থিতি ও অবকাঠামোগত উন্নয়ন হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মূলত দেশের আভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক স্থিতিশীলতার ওপরই সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিচ্ছেন। এ কারণেই নির্বাচনের আগে দেশের বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের দমন-পীড়ন ও বিএনপি ছাড়া নির্বাচন অনুষ্ঠান নিয়ে আর্ন্তজাতিক মহলে সমালোচনা ওঠার আগেই তিনি বিরোধী পক্ষের সঙ্গে সংলাপে বসেছেন। শেখ হাসিনা কোনোভাবেই নিজের কর্মকাণ্ডকে প্রশ্নবিদ্ধ করতে চান না। তাই নির্বাচনের আগে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে ঐক্যফ্রন্টের বড় শরিক দল বিএনপি সঙ্গে সংলাপের মাধ্যমে সমঝোতায় পৌঁছানোর লক্ষ্যও রয়েছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের।

আওয়ামী লীগ ও ১৪ দলের নেতারা জানান, দ্বিতীয় দফার সংলাপে খালেদা জিয়ার মুক্তির ইস্যুর বিষয়ে শর্তসাপেক্ষে খোলামেলা আলোচনা করবে সরকারি দল। বিএনপি যদি নির্বাচনের আগে দেশের পরিস্থিতি স্থিতিশীল রাখা ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অধীনে নির্বাচনে অংশ নেওয়ার বিষয়টি মেনে নেয়, তাহলে বিদ্যমান ব্যবস্থায় উচ্চ আদালতে খালেদা জিয়ার জামিনে মুক্তির আবেদন করা হলে সরকারি পক্ষ এর বিরোধিতা করবে না।

এছাড়া বিকল্প হিসেবে উন্নত চিকিৎসার জন্য প্যারোলে মুক্তি নিয়ে বিদেশে চলে যাওয়ার পথও খোলা রাখা হবে। নির্বাচনের আগেই এই প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা সম্ভব উল্লেখ করে নেতারা বলেন, এই রাজনৈতিক সমঝোতায় বিএনপি রাজি থাকলে আওয়ামী লীগ ও ১৪ দলের পক্ষ থেকে তাদের স্বাগত জানানো হবে।

১৪ দলের এক শীর্ষ নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, প্রথম দফার সংলাপের পর জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের নেতা ড. কামাল হোসেনের সঙ্গে অনানুষ্ঠানিক যোগাযোগ হয়েছে। তিনি সংলাপ নিয়ে সন্তুষ্টির কথা জানিয়েছেন। সংলাপে ১৪ দলের পক্ষ থেকে উত্থাপিত নির্বাচনের জন্য নির্দিষ্ট ও স্থায়ী সাংবিধানিক কাঠামোর নির্ধারণ করার বিষয়টিতেও তিনি সায় দিয়েছেন। বিএনপির অনেকেই বিষয়টিকে ইতিবাচক হিসেবেই দেখছেন।

তবে খালেদা জিয়ার মুক্তির ইস্যুতে এখনও বিএনপি অনড়। যেভাবেই হোক, বিএনপি চাইছে খালেদা জিয়ান মুক্তি। এজন্য বিএনপিও ছাড় দিতে রাজি আছে। এ কারণেই দ্বিতীয় দফা সংলাপে বিএনপি আগ্রহী বেশি।

১৪ দলের শরিক সাম্যবাদী দলের সাধারণ সম্পাদক দিলীপ বড়ুয়া সারাবাংলাকে বলেন, জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের সঙ্গে দ্বিতীয় দফা সংলাপে মূল আলোচনার বিষয় থাকবে খালেদা জিয়ার মুক্তি। এ নিয়ে আলোচনার মাধ্যমে একটি সমাধানে পৌঁছাতে চায় বিএনপি। আমরাও এ বিষয়ে আলোচনায় আন্তরিক থাকব। তিনি বলেন, কিছু কিছু বিষয়ে বিএনপির সঙ্গে রাজনৈতিক সমঝোতা হতেই পারে। তবে তা অবশ্যই আলোচনার মাধ্যমে।

সিএস/সিএম/এসআইজে

Print This Post Print This Post