দুর্নীতির কারিগর হাটহাজারী কলেজের অধ্যক্ষ কফিল উদ্দিন!

আপডেট: ২৯ নভেম্বর ২০১৮ ৬:৫২ অপরাহ্ন

অনলাইন | সিটিজিসান.কম

চট্টগ্রাম | ২৯ নভেম্বর ২০১৮, বৃহস্পতিবার ০৬:২০ পিএম |

৬০ বছর বয়স পূর্ণ হওয়ার পরও বহাল তবিয়তে রয়েছেন অধ্যক্ষ পদে। তুলছেন প্রতিমাসে মোটা অঙ্কের বেতন। এ জন্য যা কিছু করা দরকার করেন তিনি। সরকারি আইনের তোয়াক্কা না করে অনুগত লোকজনকে কলেজ পরিচালনা কমিটির দায়িত্বশীল ব্যক্তি দেখিয়ে বিভিন্ন কলা-কৌশলে রেজুলেশন তৈরী করে নিজেই আইন বানিয়ে নেন।

শুধু কি তাই? কলেজের আয়-ব্যয় ও ক্রয়-বিক্রয়ে গণমাধ্যমে কোন রকম টেন্ডার নোটিশ প্রকাশ না করে নিজস্ব লোক দিয়ে হাতিয়ে নেন মোটা অঙ্কের টাকা। নানা অজুহাতে কলেজের শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে আদায় করেন অতিরিক্ত ফি।

এভাবে নানা অনিয়মের কারিগর হিসেবে পরিচিতি পেয়েছেন চট্টগ্রামের হাটহাজারী সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ মীর কফিল উদ্দিন। তিনি বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতা মীর নাছির উদ্দিনের ভাই। ফলে তার অনিয়মের বিরুদ্ধে কথা বললে প্রথমেই হুমকি আসে মীর নাছির উদ্দিনের ক্ষমতার।

এরপর হুমকি আসে তার কোন এক আত্নীয় নাকি বিচারপতি। আছেন ব্যারিষ্টার ভাতিজা মীর হেলাল উদ্দিনও। ব্যস, কথায় কথায় দেওয়া হয় মামলা আর জেল-জুলুমের হুমকি। হুঙ্কার আর অনিয়মের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করায় এ পর্যন্ত সাসপেন্ড হতে হয়েছে কলেজের তিন অধ্যাপককে।

অথচ সাম্প্রতিক সময়ে কলেজে অনিয়মের দায়ে ভ্রাম্যমান আদালতের অভিযানে এই অধ্যক্ষকে নিতে হয়েছে অর্থদন্ডের সাজাও। যার পরে চাকুরিই থাকার কথা নয় এই অধ্যক্ষের। এরপরও তিনি এখনো অধ্যক্ষ। আর এই পদ বাচাতে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়, মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ড, শিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং উচ্চ আদালতে দৌড়েই চলেছেন তিনি।

এ ব্যাপারে জানতে সোমবার দুপুরে মুঠোফোনে কল করা হলে কলেজের অধ্যক্ষ মীর কফিল উদ্দিন পরিচয় জানার পর ব্যস্ততা দেখাতে শুরু করেন। তিনি বলেন, আমি এখন ঢাকায়। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে গুরুত্বপূর্ণ একটি কাজে এসেছি। আপনি ফোনে কথা না বলে সরাসরি আমার সাথে দেখা করুন।

এরপরও অনিয়মের কয়েকটি বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমার চাকুরির বয়স ৬০ বছর পূর্ণ হয়েছে। কিন্তু গর্ভনিং বডির সুপারিশে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় দুই বছরের জন্য অধ্যক্ষ পদে আমাকে এক্সটানশন করেছে। মেয়াদ শেষ হলে আমি চলে যাব। আর অন্য অনিয়মগুলোকে তিনি মিথ্যা ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বলে দাবি করেন।

সংশ্লিষ্ট সূত্রমতে, বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের (স্কুল ও কলেজ) জনবলকাঠামো ও এমপিও নীতিমালা-২০১৮ এর ১১.৬ মোতাবেক বয়স ৬০ বছর পূর্ণ হবার পর কোন প্রতিষ্ঠানে প্রতিষ্ঠান প্রধান/সহকারী প্রধান/শিক্ষক-কর্মচারীকে কোন অবস্থাতেই পূন;নিয়োগ বা চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ দেওয়ার কেন সুযোগ নেই।

এক্ষেত্রে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় বা কোন শিক্ষা বোর্ড চাকুরিতে এক্সটানশান করার কোন এখতিয়ার রাখেন না। এ অবস্থায় জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের দোহাই দেওয়া সম্পূর্ণ বানোয়াট। অনুগত গভর্ণিং বডির রেজুলেশন দিয়ে তিনি জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের নামে বানোয়াট এক্সটানশন লেটার তৈরী করে গুরুতর অনিয়ম করেছেন বলে অভিযোগ রয়েছে।

এদিকে চাকুরির মেয়াদ পূতির কারনে মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ড কলেজের হিসাব জব্দের নির্দেশ দিলেও কারচুপির মাধ্যমে কাগজপত্র তৈরী করে তিনি হিসাব পরিচালনা করছেন। এমনকি তিনি কলেজ থেকে প্রতিমাসে এক লাখ ২৫ হাজার টাকা বেতন হাতিয়ে নিচ্ছেন।

সূত্র আরও জানায়, চলতি সনের জুন মাসে হাটহাজারী কলেজ জাতীয়করণ হয়। এমতাবস্থায় জাতীয়করণ বিধিমালার ২ (৮) নং উপধারা মোতাবেক গভর্নিং বডি কলেজ পরিচালনা কার্যকারিতা ও নিয়োগের এখতিয়ার হারান। ফলে গভর্নিং বডির রেজুলেশনের বৈধতাও নেই।

অভিযাগ রয়েছে, ২০০৯ সালে মীর কফিল উদ্দিনকে কলেজের অধ্যক্ষ পদে নিয়োগ প্রক্রিয়াও ছিল প্রশ্নবিদ্ধ। অধ্যক্ষ পদে যোগাদানের পূর্বশর্ত অনুযায়ী তাঁর সহকারী অধ্যাপকের কোন অভিজ্ঞতা ছিল না। এ সময় তিনি কলেজের একজন প্রভাষক ছিলেন। অনিয়মের হাত ধরে অধ্যক্ষ পদে যোগদানের পর শুরু হয় নানা অনিয়ম, কারচুপি ও দুর্নীতি।

কলেজের আয়-ব্যয় ও রক্ষাবেক্ষন কাজে প্রকাশ্যে গণমাধ্যমে টেন্ডার প্রকাশের নিয়ম থাকলেও তিনি তা করেনি। এ পর্যন্ত বহু টেন্ডার গোপনে নিজের লোককে দিয়ে তিনি লাখ লাখ টাকা ভাগাবাটোয়ারা করে আতœসাৎ করেন। নানা অজুহাতে কলেজের শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে অতিরিক্ত ফি আদায় করেন। আর এসবের প্রতিবাদ করলেই আসে অনুগত লোকজন দিয়ে নানা রকম ভয়-ভীতি প্রদর্শন ও মামলা দিয়ে জেল খাটানোর হুমকি।

অনিয়মের প্রতিবাদ করতে গিয়ে তিনি এ পর্যন্ত কলেজের ৩ জন সহকারী অধ্যাপককে সাসপেন্ড করেছেন। এরমধ্যে অধ্যাপক নুরুল ইসলাম ও অধ্যাপক আবদুস সাত্তার চৌধুরীর নাম জানা গেলেও একজনের নাম জানা যায়নি।

এরমধ্যে নাম প্রকাশে এক অধ্যাপক বলেন, অধ্যক্ষ মীর কফিল উদ্দিন ব্যাপক অনিয়ম ও দুর্নীতি করে কলেজের প্রভুত ক্ষতিসাধন করলেও ভয়ে কেউ মুখ খোলার সাহস করেন ন। কলেজের শিক্ষক থেকে শিক্ষার্থী সকলেই অধ্যক্ষের কাছে জিম্মী। সুত্র: বিচিত্রবাংলা.কম

সিএস/সিএম/এসআইজে

Print This Post Print This Post