তাবলিগের দু’পক্ষে সংঘর্ষ, নিহত ১, আহত দু’শতাধিক

আপডেট: ১ ডিসেম্বর ২০১৮ ৬:৩৯ অপরাহ্ন

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | সিটিজিসান.কম


ঢাকা | ০১ ডিসেম্বর ২০১৮, শনিবার ০৬:২০ পিএম |

টঙ্গীর বিশ্ব ইজতেমা ময়দানে তাবলিগ জামাতের দুই পক্ষের সংঘর্ষের ঘটনায় একজন নিহত ও উভয়পক্ষের কমপক্ষে ২শতাধিক আহত হয়েছেন।

শনিবার (১ ডিসেম্বর) ভোর থেকে দুপুর পর্যন্ত মওলানা সাদ ও মাওলানা জুবায়েয়ের অনুসারীদের মধ্যে দফায় দফায় সংঘর্ষ চলে। এসময় ইজতেমা মাঠে থাকা প্রাইভেটকার ও মোটরসাইকেল ভাঙচুর করা হয়।

নিহত ইসমাইল হোসেন (৭০)। তিনি মুন্সিগঞ্জ জেলার মিলিয়াপাড়া গ্রামের খলিল মণ্ডলের ছেলে। তিনি মাওলানা সাদ গ্রুপের অনুসারী।

টঙ্গী আহসান উল্লাহ মাস্টার স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের দায়িত্বশীল সুত্র জানায়, বিকাল পর্যন্ত প্রায় দেড়শ’ মুসল্লিকে চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে গুরুতর আহত ২৫ জনকে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ, কুর্মিটোলা হাসপাতালসহ বিভিন্ন হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।

গুরুতর আহতরা হলেন- আব্দুর রাজ্জাক(৩০), আবু তালেব (৩৫), নূর হোসেন (১৫), মাওলানা মাসুদুর রহমান (৩৫), ইমরান (৩৫), সফিকুল ইসলাম (৩০), মো. শামীম মাতব্বর (৪৯), মো. শেখ আব্দুর রব (৮৪), রাসেদ (৩০), মো. জালাল খান(৫০), রুস্তম আলী (৪০), সোলায়মান আকন্দ (৫৫) প্রমুখ।

তাবলিগ জামাতের দুই পক্ষের নেতৃত্বের কোন্দলের কারণে জানুয়ারিতে অনুষ্ঠেয় বিশ্ব ইজতেমার প্রথম পর্ব গত মাসে স্থগিত করা হয়। দেওবন্দপন্থিদের আবেদনে নির্বাচন কমিশন শুক্রবার এক আদেশে ৩০ ডিসেম্বর ভোটের আগে টঙ্গীর ইজতেমা মাঠে সব ধরনের জমায়েত নিষিদ্ধ করে একটি নির্দেশনা জারি করে।

উপমহাদেশে সুন্নী মতাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় সংঘ তাবলিগ জামাতের মূলকেন্দ্র ভারতের দিল্লিতে। মাওলানা সাদের দাদা ভারতের ইসলামি পণ্ডিত ইলিয়াছ কান্ধলভি ১৯২০ এর দশকে তাবলিগ জামাত নামের এই সংস্কারবাদী আন্দোলনের সূচনা করেন।

মাওলানা ইলিয়াছের মৃত্যুর পর তার ছেলে মাওলানা মোহাম্মদ ইউসুফ এবং তারপর মাওলানা ইনামুল হাসান তাবলিগ জামাতের আমিরের দায়িত্ব পালন করেন। মাওলানা ইনামুলের মৃত্যুর পর একক আমিরের বদলে সাংগঠনিক সিদ্ধান্ত নেওয়ার ভার দেওয়া হয় একটি শুরা কমিটির ওপর।

সেই কমিটির সদস্য মাওলানা জুবায়েরের মৃত্যুর পর মাওলানা সাদ আমিরের দায়িত্ব নেন এবং একক নেতৃত্বের নিয়ম ফিরিয়ে আনেন।

এ অবস্থায় মাওলানা জুবায়েরের ছেলে মাওলানা জুহাইরুল হাসান নেতৃত্বের দাবি নিয়ে সামনে আসেন এবং তার সমর্থকরা নতুন করে শুরা কমিটি গঠনের দাবি জানান।

কিন্তু সাদ তা প্রত্যাখ্যান করলে বিরোধ বড় আকার ধারণ করে। বিভিন্ন সময়ে মাওলানা সাদের বক্তব্য নিয়েও আলেমদের মধ্যে বিভক্তি তৈরি হয়।

বাংলাদেশে তাবলিগ জামাতের প্রধান কেন্দ্র কাকরাইল মসজিদে ওই বিরোধের জের চলে বছরজুড়ে। গত এপ্রিলে দুই পক্ষের অনুসারীদের মধ্যে হাতাহাতিও হয়।

টঙ্গী পশ্চিম থানার ওসি এমদাদুল জানান, বিকাল ৩টার দিকে ইজতেমার মাঠ থেকে সবাইকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। সেখানে র‌্যাবের হেলিকপ্টার টহল অব্যাহত রয়েছে।

দিল্লি মারকাজের মাওলানা মোহাম্মদ সাদ কান্ধলভির অনুসারীরা এর মধ্যেই পাঁচ দিনের জোড় ইজতেমা করার ঘোষণা দিলে দেওবন্দপন্থি মাওলানা জুবায়েরের অনুসারীরা দিন কয়েক আগে ইতজেমা মাঠ দখল করে আশপাশে পাহারা বসায়। এ অবস্থায় মাওলানা সাদের অনুসারীরা শুক্রবার ময়দানে ঢুকতে না পেরে আশোপাশের মসজিদে অবস্থান নেন।

শনিবার ভোর থেকে সাদের অনুসারী শত শত মানুষ ঢাকার দিক থেকে টঙ্গীর পথে রওনা হলে পরিস্থিতি বিস্ফোন্মুখ হয়ে ওঠে।

বিমানবন্দর সড়কসহ টঙ্গীর পথের বিভিন্ন স্থানে দুই পক্ষের মধ্যে ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া শুরু হলে বিমানবন্দর সড়কের এক দিকে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়।

মাওলানা সাদ এর অনুসারী তাবলিগ জামাতের মুসল্লিরা শনিবার ফজরের নামাজের পর থেকে ইজতেমা মাঠে প্রবেশের চেষ্টা করেন। এসময় ভেতরে থাকা মাওলানা জুবায়ের এর অনুসারী তাবলিগ জামাতের মুসল্লি ও মাদ্রাসার ছাত্ররা তাদের ভেতের প্রবেশে বাধা দেয়। এতে সাদ অনুসারীরা টঙ্গী-কামারপাড়া সড়কে অবস্থান নিয়ে তাসবিহ তাহলিম ও বয়ান করছিলেন। এসময় পুলিশ সদস্যরা ভেতরে ঢুকে জুবায়ের অনুসারীদের সঙ্গে কথা বলতে থাকেন।

বেলা ১১টার দিকে ইজতেমা মাঠের টয়লেটের ছাদ থেকে জুবায়ের অনুসারী ছাত্ররা বাইরে অবস্থান নেওয়া সাদ অনুসারীদের ওপর ইট পাটকেল নিক্ষেপ করতে থাকে। এতে সাদ অনুসারীরা তাদের ওপর নিক্ষেপ করা ইট পাটকেল দিয়ে পাল্টা জুবায়ের অনুসারীদের ওপর হামলা করে। এক পর্যায়ে সাদ অনুসারীরা ইজতেমা মাঠে প্রবেশ করলে দু’পক্ষের মধ্যে মুখোমুখি সংঘর্ষ শুরু হয়। সংঘর্ষে মুসল্লি ও মাদ্রাসা ছাত্ররা আহত হয়। বিকেল ৩টার দিকে গাজীপুর মেট্রাপলিটন পুলিশ ও র‌্যাব সদস্যরা ইজতেমা মাঠে অবস্থান করা সাদ অনুসারীদের মাঠ থেকে সরিয়ে দেন।

সিএস/সিএম/এসআইজে

Print This Post Print This Post