চট্টগ্রামে কাউন্সিলর জসিমের বিরুদ্ধে এন্তার অভিযোগ

আপডেট: ১ এপ্রিল ২০১৮ ৩:০১ অপরাহ্ন

জহুরুল আলম জসিম

চট্টগ্রাম : পাহাড় কেটে শতাধিক প্লট বিক্রি করে দিয়েছেন চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের ৯ নম্বর উত্তর পাহাড়তলী ওয়ার্ডের কাউন্সিলর জহুরুল আলম জসিম। এ অভিযোগে তার বিরুদ্ধে ৩টি মামলা হয়েছে। একটি মামলায় চার্জশিট দাখিল করা হয়েছে। তার নেতৃত্বে শক্তিশালী সিন্ডিকেট দুই বছর ধরে প্রকাশ্যে পাহাড় কেটে প্লট তৈরি ও বিক্রি করছে।

কেবল পাহাড় কাটা নয়, নিজের ওয়ার্ডে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান নিয়েও বাণিজ্যের অভিযোগ তার বিরুদ্ধে। এছাড়া তার বিরুদ্ধে থানা ও আদালতে সন্ত্রাসী,অপহরণ, চাঁদাবাজিসহ এক ডজনেরও বেশি মামলা ও জিডি রয়েছে। এতকিছুর পরও তিনি আছেন বহাল তবিয়তে। নানা অপকর্মে মানুষের কাছে বারবার ফিরে আসে এই কাউন্সিলরের নাম। পাহাড় ধসে হতাহতের পর সামনে আসে চট্টগ্রামের ‘পাহাড়খেকো’ এই কাউন্সিলরের নাম। দখল বাণিজ্যসহ চাঁদাবাজির এন্তার অভিযোগও তার বিরুদ্ধে।

সূত্র বলছে, বাস্তহারা আবিউল হকের ছেলে সরকারি জমিতে গৃহ নির্মাণ করে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে অল্প সময়ের মধ্যেই বিপুল অর্থবিত্তের মালিক বনে গেছেন। হাঁকান দামি গাড়ি। সম্প্রতি নগরীর আকবর শাহ থানার ইস্পাহানী ১নং গেইট এলাকায় জমি দখলের ঘটনায় এই কাউন্সিলরের নাম আবার চলে আসে নগরবাসীর সামনে।

স্থানীয় লোকজন জানান, কাউন্সিলর জহুরুল আলম জসিম গত ২৫ মার্চ রাতের আঁধারে আকবর শাহ থানার ওসি আলমগীরের সহযোগিতায় ইস্পাহানী ১ নম্বর গেইট পাহাড়িকা সিএনজি পাম্পের পূর্বপাশে স্থানীয় বসতিদের উচ্ছেদের চেস্টা করেন। এ সময় বাঁধা দিলে পুলিশ বসবাসকারীদের মারধর করেন। এমনকি থানার এসআই শফিউল আলম মুন্সী বসতির নারীদের ওড়না, শাড়ি টেনে শ্লীলতাহানির চেষ্টা করেন।

জানা যায়, কাউন্সিলর জহুরুল আলম জসিম নগরীর আকবর শাহ থানাধীন বিশ্ব কলোনি ও ফয়’স লেক এলাকায় পাহাড় কেটে শতাধিক প্লট করে কাঠাপ্রতি ২ লাখ টাকা করে বিক্রি করে কোটি কোটি টাকা বাগিয়ে নেন। এছাড়া বিশ্বকলোনি এলাকার সেভেন মার্কেটের প্রায় দেড়শ’ দোকান থেকে অবৈধভাবে মাসে প্রায় ৩ লাখ টাকা তোলেন বলে অভিযোগ রয়েছে।

বেআইনিভাবে এলাকায় প্রায় দেড়শ’ অবৈধ ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা চলাচলের অনুমতি দিয়ে প্রতি রিকশা থেকে দৈনিক ৪০ টাকা করে আদায় করছেন কাউন্সিলর জসিম। এসব অটোরিকশা কর্নেলহাট সিডিএ আবাসিক এলাকার ১ নম্বর রোড থেকে ইস্পাহানী গেট পর্যন্ত চলাচল করে। রেলওয়ের জায়গায় পাহাড়তলী বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজ পরিচালনা নিয়েও তার বিরুদ্ধে বিস্তর অভিযোগ।

কমিটির সভাপতি থাকার সুবাদে ৬ তলা কলেজ ভবনের অর্ধেকই বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানকে ভাড়া দিয়ে মোটা অংকের অর্থ হাতিয়ে নেয়া হচ্ছে। এই ভবনে কোটি টাকা মূল্যের দুটি দোকানও রয়েছে তার কব্জায়।

পাহাড় কাটা সংক্রান্ত পরিবেশ অধিদফতরের তিনটি মামলা ছাড়াও অস্ত্র, হত্যা ও চাঁদাবাজিসহ বিভিন্ন অভিযোগে এক ডজনেরও বেশি মামলা রয়েছে তার নামে। সূত্র বলছে, কাউন্সিলর জসিমের বিরুদ্ধে ক্ষমতার অপব্যবহারের অভিযোগ নিয়ে অন্যান্যের সঙ্গে পাল্টাপাল্টি হামলা ও মামলার ঘটনা ঘটছে। এ নিয়ে এলাকায় ক্ষোভ রয়েছে।

এক সময় পাহাড়তলী থানার ৯ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক থাকলেও বর্তমানে জহুরুল আলম জসিম দলীয় কোনো পদ-পদবিতে নেই। ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের নেতারা বলছেন, নানা অভিযোগে অভিযুক্ত এ কাউন্সিলর আওয়ামী লীগের ‘কলঙ্ক’।

সূত্র জানায়, ১১ মে নগরীর আলঙ্কার মোড়ে ভাংচুর ও লুটপাটের অভিযোগে জসিমের বিরুদ্ধে আদালতে মামলা করেন পাহাড়তলী থানা আ’লীগ সভাপতি নুরুল আবছার মিয়া।

তিনি বলেন, ‘গত ৯ মে কাউন্সিলর জসিম উচ্ছেদ অভিযানের নামে চসিককে ব্যবহার করে আমার নিজস্ব সম্পত্তিতে ভাংচুর ও লুটপাট চালান। এতে ২০ লাখ টাকা ক্ষতি হয়।’ অপর একটি উচ্ছেদ অভিযানের নামে মিথ্যা মামলার প্রতিবাদে তার বিরুদ্ধে স্থানীয় আওয়ামী লীগ ও হকাররা ৬ জুন বিক্ষোভ করে।

এ প্রসঙ্গে আকবরশাহ থানা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক কাজী আলতাফ হোসেন বলেন, ‘৯নং ওয়ার্ড জসিমের বিরুদ্ধে পাহাড়তলী থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি নুরুল আবছার মিয়ার করা মামলা ভিন্ন খাতে নিতেই ৬ জুন হকার উচ্ছেদের নামে সন্ত্রাসী কার্যক্রম চালায় কাউন্সিলর জসিম। অলংকার মোড়ের হকাররা উচ্ছেদের প্রতিবাদ করতে গেলে সাধারণ জনগণের রোষানলে পড়েন এ কাউন্সিলর।’

৯নং ওয়ার্ড যুবলীগ সভাপতি মো. আবদুল ওয়াজেদ খান রাজিব বলেন, কাউন্সিলর জসিম রাজনীতি করেছেন মানুষের সেবা করার জন্য নয়, নিজের জন্য। তা না হলে কাউন্সিলর নির্বাচনের ২ মাসের মাথায় ৪৫ লাখ টাকার গাড়ি ও ৬ মাসের মাথায় ৫ তলা বাড়ি কেমন করে করেছেন?

কাউন্সিলর জসিমের বিরুদ্ধে পাহাড়তলী থানায় একাধিক মামলার কথা স্বীকার করে ওসি আলমগীর হোসেন বলেন, ‘নিজেদের মধ্যে গ্রুপিং দ্বন্দ্বের জেরেও অনেক মামলা-পাল্টা মামলা হয়েছে।’ তার বিরুদ্ধে হিন্দু সম্প্রদায়ের ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাতের অভিযোগও রয়েছে।

পাহাড় কেটে কাউন্সিলর জসিমের প্লট বিক্রির অভিযোগের সত্যতা স্বীকার করে পরিবেশ অধিদফতরের চট্টগ্রাম মেট্রো অঞ্চলের পরিচালক আজাদুর রহমান মল্লিক জানান, ‘পাহাড় কাটার অভিযোগে কাউন্সিলর জসিমের বিরুদ্ধে আকবরশাহ থানার ৩টি মামলার মধ্যে একটির অভিযোগপত্র ১৫ মার্চ দাখিল করা হয়েছে। বাকি দুটি পর্যায়ক্রমে দেয়া হবে।’ আওয়ামীলীগের অনেক ত্যাগী নেতাকর্মীদের বিভিন্ন হয়রানি মিথ্যা মামলা করে ও করাচ্ছেন তিনি ৷

এমন কি তার বাপের বয়সী লোকজনদেরও নাজেহাল করতে পিছপা হয় না এ জসিম ৷ তার বিরুদ্ধে এলাকাবাসীর অভিযোগের অন্ত নেই ৷ তবে সব অভিযোগ অস্বীকার করে ৯নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর জহুরুল আলম জসিম ৷সুত্র : জাগো চট্টগ্রাম

Print This Post Print This Post