অনলাইন ডেস্ক, সিটিজিসান.কম :: ঘূর্ণিঝড় মোরায় তিন জেলায় নয়জনের মৃত্যু হয়েছে। এর মধ্যে কক্সবাজারে ছয়জন, রাঙ্গামাটিতে দুইজন, ভোলায় আশ্রয়কেন্দ্রে যাবার পথে এক শিশুর মৃত্যু হয়েছে। ঘণ্টায় ১০০ কিলোমিটারের বেশি গতির এ ঝড় মঙ্গলবার ভোরে বাংলাদেশের কক্সবাজার উপকূলে আঘাত হানে। এরপর সেটি চট্টগ্রামের দিকে অগ্রসর হয়। দুপুর নাগাদ সেটি দুর্বল হয়ে স্থল নিম্নচাপে পরিণত হয়।
প্রচুর বৃষ্টি ঝরিয়ে মোরা ধীরে ধীরে দুর্বল হয়ে বাংলাদেশ সীমান্ত অতিক্রম করে যাওয়ায় চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার থেকে ১০ নম্বর মহা বিপদ সংকেত উঠিয়ে নেওয়া হয়েছে। দুই জেলাতে ৩ নম্বর স্থানীয় সতর্ক সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে।
মোরার কয়েক ঘণ্টার তাণ্ডবে বিভিন্ন জেলায় কমপক্ষে ২০ হাজার ঘরবাড়ি বিধ্বস্ত হয়েছে। উপড়ে পড়েছে অসংখ্য গাছপালা। এ ছাড়া বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে উপকূলীয় বেশ কিছু এলাকা।
কক্সবাজার :
ঘূর্ণিঝড় মোরায় কক্সবাজারে ৬ জন মারা গেছে । কক্সবাজারে পুলিশ কন্ট্রোলরুম জানিয়েছে, মোরার বাতাসে গাছচাপা পড়ে চকরিয়ায় দু’জন, পেকুয়ায় ১ জন এবং মহেশখালীতে ১ মারাগেছে। কক্সবাজার সদরে আতঙ্কে আরো দু’জনের মৃত্যু হয়েছে। এরমধ্যে চকরিয়ায় গাছ চাপা পড়ে মসজিদের এক ইমাম ও একজন বৃদ্ধা মারা গেছেন।
এ ছাড়া কক্সবাজার শহরের একটি আশ্রয়কেন্দ্রে ঘূর্ণিঝড় মোরা আতঙ্কে দু’জনের মৃত্যু হয়।
চকরিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) বখতিয়ার উদ্দিন চৌধুরী জানান, মঙ্গলবার সকালে চকরিয়ার ডুলহাজারায় গাছ চাপা পড়ে স্থানীয় মসজিদের ইমাম রহমত উল্লাহ মারা যান।
অপর দিকে চকরিয়ার বড়ভেউলা ইউনিয়নে গাছ চাপা পড়ে সাহেরা খাতুন নামে আরেকজন বৃদ্ধার মৃত্যু হয়েছে। এ ছাড়া কক্সবাজার শহরের নুনিয়াছড়ায় ও সদর উপজেলার ইসলামাবাদে আশ্রয়কেন্দ্রে ভোরে ঘূর্ণিঝড় মোরা আতঙ্কে দু’জনের মৃত্যু হয়।
ঘণ্টায় ১০০ কিলোমিটারের বেশি গতির বাতাস নিয়ে মঙ্গলবার ভোর ৬টার দিকে কুতুবদিয়ার কাছ দিয়ে কক্সবাজার-চট্টগ্রাম উপকূল অতিক্রম শুরু করে ঘূর্ণিঝড়টি। সকাল সাড়ে ৭টার দিকে এটি কক্সবাজার উপকূল অতিক্রম করে চট্টগ্রামের দিকে অগ্রসর হয়।
মোরার প্রভাবে ঝড়ো বাতাস ও ভারি বৃষ্টিতে কক্সবাজার উপকূলের শত শত ঘরবাড়ি ধসে গেছে। জেলার বিভিন্ন স্থানে বিদ্যুতের তার ছিঁড়ে এবং গাছ পড়ে যান চলাচল বন্ধ হয়ে গেছে। জলোচ্ছ্বাসের ফলে প্লাবিত হয়েছে বহু এলাকা।
রাঙ্গামাটি :
রাঙ্গামাটিতে ঘূর্ণিঝড় মোরার আঘাতে গাছচাপায় দু’জনের মৃত্যু হয়েছে। নিহতরা হলেন- জাহিদা সুলতানা নাহিমা (১৪) ও হাজেরা বেগম (৪৫)। রাঙ্গামাটি জেনারেল হাসপাতালের মেডিকেল কর্মকর্তা ডা. মো. আবু তৈয়ব ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করেন।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, মঙ্গলবার সকাল ৯টার দিকে ঘূর্ণিঝড় মোরা রাঙ্গামাটিতে আঘাত আনে। তীব্র বাতাসের কারণে বিধ্বস্ত হয়ে পরে প্রায় ২ শতাধিক ঘর। এ সময় শহরের আসামবস্তী ও ভেদভেদী এলাকায় ঘরের উপর গাছ ভেঙে পরে। গাছের নিচে চাপা পড়েন জাহিদা সুলতানা নাহিমা ও হাজেরা বেগম। খবর পেয়ে স্থানীয়রা তাদের উদ্ধার করে রাঙ্গামাটি সদর হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত ডাক্তার মৃত ঘোষণা করে।
এই ব্যাপারে রাঙ্গামাটি জেনারেল হাসপাতালের মেডিকেল কর্মকর্তা ডা. মো. আবু তৈয়ব জানান, ঘূর্ণিঝড়ের কারণে শহরের বেশকিছু জায়গায় গাছ উপড়ে পড়ে। গাছের নিচে চাপা পড়ে দুজন নিহত হয়েছে।
এদিকে রাঙ্গামাটি শহরের কলেজ গেইট, রাঙ্গামাটি যাদুঘর সড়ক, তবলছড়ি, আসামবস্তী, রিজার্ভ বাজার, ঝুলিখা পাহাড়, পুড়ানবস্তী, ফরেস্ট কলোনি সড়ক ও ডিসি অফিস এলাকায় ব্যাপক গাছপালা ভেঙ্গে সড়কের উপর পড়ে। এছাড়া বৈদ্যুতিক লাইন ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় রাঙ্গামাটি শহর বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। বন্ধ রয়েছে মোবাইল নেটওয়ার্কও।
রাঙ্গামাটির প্রায় ১০টি উপজেলায় ঘূর্ণিঝড় মোরা আঘাত হানে। তীব্র বাতাসের তাণ্ডবে পাহাড়ের বিভিন্ন এলাকায় সহস্রাধিক ঘরবাড়ি বিধ্বস্ত হয়েছে। উপড়ে পড়েছে অসংখ্য গাছপালা।
মনপুরায় শিশুর মৃত্যু :
ভোলার মনপুরা উপজেলায় সোমবার রাতে আশ্রয়কেন্দ্রে যাওয়ার সময় মায়ের কোলে থাকা এক বছর বয়সী এক শিশুর মৃত্যু হয়েছে।
কলাতলীর দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটির স্বেচ্ছাসেবক ইউনিটের টিম লিডার মো. নাজিমউদ্দিন জানান, কলাতলীচরের পুরাতন আবাসন বাজার থেকে মনির বাজার সংলগ্ন মনপুরা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় আশ্রয় কেন্দ্রে যাওয়ার পথে মায়ের কোলে রাশেদ মনি নামে এক বছর বয়সী ওই শিশুর মৃত্যু হয়। রাশেদ কলাতলীচর আবাসন বাজার এলাকার সালা উদ্দিনের ছেলে।
সিটিজিসান.কম/ফয়সাল
Print This Post