মঙ্গলবার, অক্টোবর ৮, ২০১৯, ১০:২৭ পিএম
নিজস্ব প্রতিবেদক :: ক্ষমতার দাফট দেখিয়ে দায়িত্ব পালন না করেই বছরের পর বছর বেতন-ভাতা নিচ্ছেন চট্টগ্রামের কর্ণফুলী ফার্টিলাইজার কোম্পানী (কাফকো) লিমেটেডের কর্মচারি ওসমান গনি রাসেল। গত অর্ধযুগ ধরে কাফবো এমপ্লোইজস্ ইউনিয়ন’র (সিবিএ) সভাপতির পদটি আকরে ধরে বাহিরে চাঁদাবাজি, ঠিকাদারী ও রাজনীতে মেতে আছেন তিনি। তবে বাহিরে চাঁদাবাজি, ঠিকাদারী ও রাজনীতি যাই করেন না কেন, নিয়মিত বেতন-ভাতা উত্তোলন করছেন কাফকো থেকে। এই নিয়ে প্রতিবাদ করলেই ট্যুটি চেপে ধরেন নিজেকে যুবলীগের নেতা পরিচয়ে দিয়ে। নিয়োগ বাণিজ্য করে অর্ধকোটি টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ ওসমান গনি রাসেল’র বিরুদ্ধে। মঙ্গলবার সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম বিভিন্ন জনের ফেসবুকে কাফকোতে কর্মচারি নিয়োগের নামে ওসমান গনি রাসেল’র অর্থ আদায়ের ছড়িয়ে পড়েছে।
কাফবো এমপ্লোইজস্ ইউনিয়ন’র (সিবিএ) একাধিক সদস্য জানান, সর্বশেষ কাফবো এমপ্লোইজস্ ইউনিয়ন’র নির্বাচন হয় ২০১৫ সালে। প্রথম দুই বছর নিয়ম মাফিক দায়িত্বে থাকলেও পরের চার বছর নির্বাচন ঠেকিয়ে পদটি আকড়ে আছেন তিনি। আর এই পদটি ব্যাবহার করে কোনো ধরনের দায়িত্ব পালন না করেই বছরের পর বছর প্রতিষ্ঠান থেকে বেতন ভাতা নিচ্ছেন তিনি।
কাফকো সূত্রে জানাগেছে, কাফকোর সিনিয়র ফিল্ড কন্ট্রোলার পদে ওসমান গণি রাসেলসহ আছেন চারজন কর্মচারি। প্রতিজনের ৮ঘন্টা দায়িত্ব পালনের নিয়মত থাকলেও ওসমান গণি রাসেল প্রতিদিন হাজিরা খাতায় স্বাক্ষর করেই দায়িত্ব শেষ করেন। যার কারণে ওই পদে তিনজনের একজনকে অতিরিক্ত দায়িত্ব পালন করতে হয়। এই জন্য কাফকো থেকে ওভারটাইম বিল নেন ওই কর্মচারি। আর দায়িত্ব পালন না করেই নিয়মিত বেতন-ভাতা নেন ওসমান গণি রাসেল।
কাফকোর একাধিক কর্মচারি জানান, গত কিছুদিন আগে কাফকোর কর্মচারি নিয়োগে প্রায় অর্ধকোটি টাকা হাতিয়েছেন সিবিএর সভাপতি ওসমান গণি রাসেল। কাফকোকে অনেকটা জিম্মিকরেই প্রায় ১৫জনকে নিয়োগ দিতে বাধ্য করেছেন তিনি। এর বিনিময়ে প্রতিজন থেকে হাতিয়েছেন ৪ থেকে ৫ লক্ষ টাকা। অনেকে নিয়োগ পেতে ওসমান গণি রাসেলকে টাকা দিয়ে এখন পথে বসেছেন। চাকরি না পেয়ে টাকা ফেরত চাওয়ায় অনেককে বিভিন্ন মামলায় জড়িয়ে দেয়াসহ নানান প্রকার হুমকি দিচ্ছেন।
তারা আরও জানান, ওসমান গণি রাসেল কাফকোর কর্মচারি হলেও কর্ণফুলী র্টানেলসহ বিভিন্ন স্থানে ঠিকাদারী আর চাঁদাবাজিতে ব্যস্ত সময় পার করেন। কাফকোর ভেতরের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে নির্দিষ্ট হারে চাঁদা নেন।
আনোয়ারার হাসানুর রশিদ নামক একজন জানান, তিনি নিয়োগ পেতে ১০ লাখ টাকা দিয়েছেন সিবিএ সভাপতি ওসমান গণি রাসেলকে। তবে চাকরিতো পানই-নি এখন টাকা ফেরত পেতে আদালতের দারস্থ হচ্ছেন।
হাসানুর রশিদ বলেন, শুধু আমার কাছ থেকেই নয়। এভাবে আরও অনেকের কাছ থেকে নিয়োগের নামে অর্থ হাতিয়েছেন ওসমান গণি রাসেল। সেই টাকা ফেরত চাইলেও ক্ষেপে যান তিনি। বিভিন্ন মামলায় জড়িয়ে দেয়াসহ নানান ধরনের হুমকি দেন তিনি।
এই প্রসঙ্গে জানতে চাইলে কাফকো এমপ্লোইজস্ ইউনিয়নের সভাপতি ওসমান গণি বলেন, নিয়োগ নিয়ে আমি কোনো মন্তব্য করতে রাজি নই। আর টাকা নিয়ে কর্মচারি নিয়োগ পাইয়ে দেয়ার অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে বলেন, এসব মিথ্যা। একইভাবে দায়িত্ব পালন না করে নিয়মিত বেতন ভাড়া নেয়ার ব্যাপারের জানতে চাইলে বলেন, এটা সত্য না। কাফকোর ভেতরে-বাহিরে চাঁদাবাজি, রাজনীতি ও ঠিকাদারির ব্যাপারে জানতে চাইলে বলেন সবই মিথ্যা। এসব নিয়ে কাফকোর মানব সম্পদ কর্মকর্তা মীর রাজিউর রহমানের সঙ্গে কথা বলার পরামর্শ দেন।
পরে কাফকোর মানব সম্পদ কর্মকর্তা মীর রাজিউর রহমানের কাছে নিয়োগের বিষয়ে জানতে চাইলে বলেন, চলতি বছরে মোট ২৪জন কর্মচারি নিয়োগ দেয়া হয়েছে। তবে এই নিয়োগের জন্য পত্রিকায় কোনো বিজ্ঞাপন দেয়া হয়নি। বিভিন্ন মাধ্যমে বায়োডাটা সংগ্রহ করে সেখান থেকেই সিলেকটেড বোর্ডের মাধ্যমে নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা হয়েছে। পত্রিকায় বিজ্ঞাপন না দেয়ার প্রসঙ্গে বলেন, পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দিলে বিভিন্নভাবে চাপ আসে। সেই চাপ এড়াতে এই প্রক্রিয়া। কর্মচারি নিয়োগের জন্য পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দেয়ার কোনো বাধ্যবাধকতা নেই বলেও দাবি কাফকোর মানব সম্পদ কর্মকর্তা মীর রাজিউর রহমানের। তিনি বলেন, কাফকো যেহেতু সরকারি প্রতিষ্ঠান না, সায়ত্ত্বশাসিত। এখানে দেশের ইনভেস্ট সামান্য, পুরোটাই বিদেশী ফান্ড। তাই পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দেয়ার কোনো বাধ্য বাধকতা নেই। জন্মলগ্ন থেকে কর্মচারি নিয়োগের জন্য কোনো বিজ্ঞাপন দিতে হয়নি।
কাফকো সিবিএ সভাপতি ওসমান গণি রাসেল দায়িত্ব পালন না করে হাজিরা খাতায় স্বাক্ষর করে বেতন নেয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে মীর রাজিউর রহমান প্রসঙ্গটি এড়িয়ে যান। ভিন্ন প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, সিবিএ নিয়ন্ত্রণ করে লেভার ডাইরেক্টরের কার্যলয়। নির্বাচন হোক বা না হোক সেটা আমাদের বিষয় না। যেহেতু কর্মচারিদের সংগঠন, কর্মচারিরাই বুঝবে। কাফকো সিবিএ সভাপতি ওসমান গণির নিয়োগ বাণিজ্যের বিষয়ে জানতে চাইলে মীর রাজিউর রহমান বলেন, একশজন নিয়োগ পরীক্ষায় অংশ নিয়েছেন সেখান থেকে প্রথমে ২০ জন পরে ৪জনকে নিয়োগ দেয়া হয়েছে।
Print This Post