চট্টগ্রামে চাঁদা চেয়ে থানায় চিঠি, আটক কথিত সাংবাদিক

আপডেট: ৩ অক্টোবর ২০১৯ ৮:৩৯ অপরাহ্ন

বৃহস্পতিবার, অক্টোবর ৩, ২০১৯, ৮:৩২

নিজস্ব প্রতিবেদক ::
চাঁদা চেয়ে থানায় চিঠি পাঠিয়ে পুলিশের হাতে আটক হয়েছে বান্দরবান থেকে বিতাড়িত এইছ এম মহিবুল্লাহ চৌধুরী নামের কথিত এক সাংবাদিক। বৃহস্পতিবার (৩ অক্টোবর) বিকেলে নগরীর পাহাড়তলী এলাকায় অভিযান চালিয়ে তাকে আটক করা হয়।

থানার ওসিদের পাঠানো চাঁদার ওই চিঠিতে মুহিবুল্লাহ নিজেকে ‘বিবিসিনিউজ ২৪’ নামে একটি অনলাইন নিউজ পোর্টালের চিফ রিপোর্টার উল্লেখ করেন। চিঠির সঙ্গে ৫ লাখ টাকার খরচের একটি হিসাবও সংযুক্ত করেন। একইভাবে সিএমপির কোতোয়ালী থানার ওসির কাছে চাঁদা চেয়ে চিঠি পাঠানো হয়েছে বলে ওসি মোহাম্মদ মহসিন জানিয়েছেন।

প্রতিষ্ঠানটির প্যাডে পাঠানো চিঠিতে কার্যালয়ের ঠিকানায় উল্লেখ রয়েছে, চট্টগ্রাম মহানগরের পাহাড়তলী থানার অলঙ্কার মোড়ের হানিমুন টাওয়ার।

ওসিদেরকে ওই চিঠিতে জানানো হয়, আগামী ১১ ও ১২ অক্টোবর কক্সবাজারে অনলাইন পত্রিকাটির চতুর্থ প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উদযাপন করা হবে। এই অনুষ্ঠান উপলক্ষে আর্থিক সহায়তা চান তিনি।

চিঠির সঙ্গে প্রতিষ্ঠানের প্যাডে পাঠানো খরচের বিবরণীতে উল্লেখ করা হয়েছে, অনুষ্ঠানে সর্বমোট লোক হবে ২১৫ জন। ৫০টি হোটেল কক্ষের ভাড়া ১ লাখ টাকা, ১৫টি মেহমানদের ভিআইপি কক্ষের ভাড়া ৩০ হাজার টাকা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের জন্য কনফারেন্স রুমের ভাড়া ৫০ হাজার টাকা, ৪টি বাসে আসা-যাওয়া বাবদ ৭২ হাজার টাকা, ২১৫টি টি-শার্টের দাম ৩২ হাজার ২৫০ টাকা, ১৫টি ক্রেস্টের দাম বাবদ ১৫ হাজার টাকা, ৭ জনকে পুরস্কার বাবদ ১৫ হাজার টাকা, ৪ বেলা নাস্তা বাবদ ৫৪ হাজার ৮২৫ টাকা, তিনবেলা খাবার বাবদ ১ লাখ ৪৮ হাজার ৩৫০ টাকা। সবমিলিয়ে ৫ লাখ ১৭ হাজার ৪২৫ টাকা খরচ হবে অনুষ্ঠানটিতে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ওয়ার্ল্ড হিউম্যানিটি কমিশন (ডাব্লিউএইচসি) নামে কথিত একটি মানবাধিকার সংস্থার বান্দরবান জেলার সভাপতি, বাংলাদেশ জাতীয় সাংবাদিক কল্যান ফাউন্ডেশন (জেএসকেএফ) এর কোষাদ্যক্ষ এইছ এম মহিবুল্লাহ চৌধুরী। তার বিরুদ্ধে গত ১৮জুন চাঁদাবাজীর অভিযোগে বান্দরবান পৌরসভার রোয়াংছড়ি বাসস্টেশন এলাকার ভান্তে কদঞেঞ থের বৌদ্ধ ধর্মীয় ভান্তে বান্দরবান সদর থানায় অভিযোগ দায়ের করেন।

এইছ এম মহিবুল্লাহ চৌধুরী চট্টগ্রামের চন্দনাইশ উপজেলার বাসিন্দা। বান্দরবান জেলার লামা উপজেলায় বসবাস করলেও একটি ইন্সুরেন্স কোম্পানির অর্থ আত্মসাত করে লামা ছেড়ে গত কয়েকবছর ধরে বান্দরবান শহরের বনরুপা পাড়ায় বসবাস করে মানবাধিকার কর্মী, সাংবাদিক ও গোয়েন্দা পরিচয় দিয়ে তিনি চাঁদাবাজীসহ বিভিন্ন অনৈতিক কর্মকান্ড সংগঠিত করছেন বলে অভিযোগ রয়েছে।

মানবাধিকার কর্মী হয়ে বান্দরবান সদরে অবস্থান নেন। সেখানে চাঁদা চেয়ে এক ভান্তেকে চিঠি দিয়ে চাঁদাবাজী মামলার অভিযুক্ত হন তিনি। এই মামলার পর বান্দরবান থেকে চট্টগ্রামের পাহাড়তলীতে গিয়ে আস্তানা গাড়েন। সেখানেও কথিত মানবাধিকার সংগঠক ও সাংবাদিক পরিচয় চাঁদাবাজিতে ব্যস্ত হয়ে পড়েন।

সিএমপির খুলশী থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) প্রণব চৌধুরী বলেন, ‘নিউজ পোর্টালের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী, আর টাকা চেয়ে থানায় ওসিদেরকে চিঠি, এ ধরনের ঘটনা ঘটনা আগে দেখা যে দুরের কথা শুনিনি। এগুলো ¯্রফে চাঁদাবাজি। উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশে মুহিবুল্লাহ নামে ব্যক্তিটিকে আটক করা হয়েছে। তার বিরুদ্ধে চাঁদাবাজির মামলা দায়েরের প্রক্রিয়া চলছে।’

সিএমপির কোতোয়ালী থানার ওসি মোহাম্মদ মহসীন বলেন, ‘তিনদিন আগে চাঁদা চেয়ে পাঠানো একই চিঠি আমার থানায়ও এসেছে। সাংবাদিকতার মতো পরিচ্ছন্ন পেশার সাইনবোর্ড লাগিয়ে একটি চক্র এভাবে চাঁদাবাজি করে বেড়াচ্ছে। তার সাহস দেখে আমি বিস্মিত। আমরাও এই মুহিবুল্লাহকে আটকের জন্য খুঁজছিলাম।’

Print This Post Print This Post