সার্বক্ষণিক সুন্নত অনুসরণের তাকিদ

আপডেট: ২৫ অক্টোবর ২০১৬ ১০:১৬ পূর্বাহ্ন

allah

হাবীবুল্লাহ সিরাজ ::
মানবতার জন্যে ইসলামে পূর্ণাঙ্গ জীবনবিধান। ব্যক্তি জীবন থেকে শুরু করে আন্তর্জাতিক জীবন পর্যন্ত রয়েছে সুন্দরতম বিধানাবলি। আর হজরত মুহাম্মদ সা: ছিলেন সেই বিধানগুলোর বাস্তবায়নকারী। তার জীবনের প্রতিটি পর্ব ছিল ঐশী বিধানের সুন্দরতম বিন্যাস।

এরই ধারাবাহিকতায় বাদ পড়েনি খাওয়া, ঘুম, গোসল, ইসতেঞ্জা, বসা ও চলাফেরাসহ ক্ষুদ্র থেকে ক্ষুদ্র কোনো কাজ। যেমন বসার ক্ষেত্রে হাদিস বর্ণিত হয়েছে- ‘বিলম্বে এসে মানুষদের ঠেলে মজলিসের মধ্যে বসা নিষেধ।’ রোদ্র ছায়ায় মিলে বসা স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর, যা নিষেধ। মজলিস চলাকালে ঘোরাফেরা, নড়াচড়া, দুজনের মাঝখানে বসা, কথা বলা নিষেধ। এসব হাদিসের ওপর আমল করা মুমিনের একান্ত কর্তব্য।

শোয়ার ক্ষেত্রে রাসূলের সা: কিছু বিধানের প্রতি আমাদের লক্ষ করা উচিত। হজরত জাবির রা: থেকে বর্ণিত- তিনি বলেন, রাসূল সা: চিত হয়ে শুয়ে এক পা খাড়া করে অপর পা তার ওপর রাখতে নিষেধ করেছেন। জাবির রা: থেকে অন্য এক হাদিসে এসেছে, রাসূল সা: বলেন, ‘তোমাদের কেউ কখনো এমনভাবে চিত হয়ে শয়ন করবে না যে, এক পা খাড়া করে অপর পা তার ওপর থাকে।’
সুতরাং হাদিসগুলো থেকে বোঝা গেল, চিত হয়ে শয়ন করে এক পা খাড়া করে অপর পা তার ওপর রাখা যাবে না। উভয় হাদিস মুসলিম শরিফের বর্ণনায় এসেছে।

তাই আমাদের উচিত উপরিউক্ত পন্থা পরিহার করা। তবে চিত হয়ে শুয়ে এক পা অপর পায়ের ওপর রাখা নিষেধ না। কেননা এর দ্বারা সতর খোলার সম্ভাবনা ক্ষীণ। হজরত আব্বাস ইবনে তামিম রহ: তার চাচা থেকে বর্ণনা করেন। রাসূল সা. কে আমি মসজিদের মধ্যে চিত হয়ে এক পা অপর পায়ের ওপর রেখে শায়িত অবস্থায় দেখেছি। (বুখারি ও মুসলিম) আগের পন্থাকে নিষেধ করা হয়েছে কারণ সতর খুলে যাওয়ার আশঙ্কায়। আর দ্বিতীয় পন্থাকে জায়েজ বলা হয়েছে সতর খুলে যাওয়ার সম্ভাবনা ক্ষীণ।

শোয়ার ক্ষেত্রে আরো একটি নিষিদ্ধ পদ্ধতি হলো মুখ, বুক ও পেট উপুড় করে শোয়া। হজরত ইয়াঈশ ইবনে তিখতাহ ইবনে কায়েস আল গিফারি র: তাঁর বাবা থেকে বর্ণনা করেন, ‘তিনি (তিখফাহ ইবনে কায়েস আল গিফারি) আসহাবে সুফফার অন্যতম সাহাবি ছিলেন।

তিনি বলেন, ‘আমি একদিন বুক ব্যথার কারণে উপুড় হয়ে শুয়ে ছিলাম। এমন সময় এক ব্যক্তি তার পা দ্বারা নাড়া দিয়ে আমাকে বলল, এ রূপ শয়নে আল্লাহ তায়ালা অসন্তুষ্ট হন। তখন আমি তাকিয়ে দেখি তিনি স্বয়ং রাসূলুল্লাহ সা. (আবু দাউদ ইবনে মাজাহ) চলাফেলার ক্ষেত্রেও রয়েছে সুন্দরতম বিধানাবলি। আমরা প্রায় প্রতিদিন সিঁড়ি দিয়ে ওঠা-নামা করি। সিঁড়ি দিয়ে ওঠা-নামা না করলেও সমতল ভূমি দিয়ে চলি। এসবের প্রতিক্ষেত্রে রয়েছে সুস্পষ্ট হাদিস।

হাদিসে বর্ণিত হয়েছে ওপরে ওঠার সময় ‘আল্লাহু আকবার’ পাঠ করা। চাই চলন্ত সিঁড়ি হোক লিফট হোক বা সাধারণ সিঁড়ি হোক। এরূপ নিচে অবতরণের সময় ‘সুবহানাল্লাহ’ বলা। আর সমতল ভূমিতে চলা অবস্থায় ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’ বলা। এসব দোয়া পাঠে নিজেদের ভেতর বিনয়ভাব আসে। আর না পাঠে আসে অহঙ্কারভাব। আল্লাহ তায়ালা কুরআনে ঘোষণা করেন- ‘তোমরা জমিনে দম্ভভরে চলাফেরা করো না। এরপরে বলেন, চলাফেরায় মধ্যম পন্থা অবলম্বন করো।’ (সূরা লোকমান : ১৮.১৯)

উল্লিখিত আয়াতের ব্যাখ্যায় লেখা হয়েছে। আল্লাহ ভূমিতে সব বস্তু হতে নত ও পতিত করে সৃষ্টি করেছেন। আর তোমাদের সৃষ্টিও এ মাটি দিয়েই। তোমরা এর ওপর দিয়ে চলাফেলা করো- নিজের নিগূঢ় তত্ত্ব বুঝতে চেষ্টা করো। আত্মভিমানীদের ধারা অনুসরণ করে অহঙ্কার ভরে বিচরণ করো না।

এরপর আল্লাহ বলছেন, ‘আল্লাহ কোনো অহঙ্কার আত্মাভিমানীকে পছন্দ করেন না।
‘চলাফেরায় মধ্যমপন্থা অবলম্বন করো’ এর ব্যাখ্যায় লেখা হয়েছে। দৌড় ঝাঁপসহও চলো না। যা সভ্যতা ভব্যতা ও শালীনতার পরিপন্থী। হাদিস শরিফে আছে দ্রুতগতিতে চলা মুমিনের সৌন্দর্য ও মর্যাদাহানিকর। এভাবে চলার ফলে নিজেরও দুর্ঘটনায় পতিত হওয়ার আশঙ্কা থাকে অপরেরও দুর্ঘটনার কারণ হতে পারে। আবার অত্যধিক মন্থরগতিতেও চলো না- যা সেসব গর্ব স্ফীত আত্মাভিমানীদের অভ্যাস।

যারা অন্যান্য মানুষ থেকে নিজের অসার কৌলীন্য ও শ্রেষ্ঠত্ব দেখাতে চায়। অথবা সেসব মেয়েদের অভ্যাস যারা অত্যধিক লজ্জা সঙ্কোচনের দরুন দ্রুতগতিতে বিচরণ করে না। অথবা অক্ষম ব্যক্তিদের অভ্যাস। প্রথমটি হারাম। দ্বিতীয়টি যদি নারীদের অনুসরণে হয় তাও হারাম। আর এ উদ্দেশ্য না থাকে তাহলে পুরুষের জন্য কলঙ্ক। তৃতীয় অবস্থায় আল্লাহর প্রতি অকৃতজ্ঞতা প্রদর্শন। লেখক : প্রবন্ধকার

সিটিজিসান.কম/রবি

Print This Post Print This Post