মিতু হত্যা : বাবার সন্দেহ পরকীয়ার কারণে খুন

আপডেট: ৫ জুন ২০১৭ ১২:৩৪ অপরাহ্ন

babul-mitu

চট্টগ্রাম :: বহুল আলোচিত পুলিশ সুপার বাবুল আক্তারের স্ত্রী মাহমুদা আক্তার মিতু হত্যার কোন কুল কিনারা হয়নি। ধরা পড়েনি এখনো এ হত্যাকাণ্ডের মূল খুনি এবং খুনের পরিকল্পনাকারী। এক বছরেও মিতু হত্যাকাণ্ডের রহস্যভেদ না হওয়ার মধ্যে জামাতা বাবুল আক্তারকে নিয়েই সন্দেহে ঘুরপাক খাচ্ছেন শ্বশুর পুলিশ কর্মকর্তা মোশাররফ হোসেনের মধ্যে।

মিতুর বাবা অবসরপ্রাপ্ত পুলিশ পরিদর্শক মোশাররফ মনে করছেন, পরকীয়ার কারণে তার জামাতা সাবেক এসপি বাবুল আক্তারই স্ত্রীকে হত্যা করিয়েছে।

এদিকে এক মুছাতেই অন্ধকারে এখনও পুলিশ প্রশাসন। পুলিশ বলছে মুছাকে তারা খুঁজে পাচ্ছেনা। তাকে ধরিয়ে দিতে পুরস্কার ঘোষণা করা হয় সিএমপি’র পক্ষ থেকে । দেশের সকল বন্দর গুলোতে জারি করা হয় রেড এলার্ট। কিন্তু মুছার পরিবারের দাবী ঘটনার কয়েকদিন পর বন্দর থানার অফিসার ইনচার্জ (সাবেক) মহিউদ্দিন সেলিমের নেতৃত্বে একদল পুলিশ মুছাকে তার আত্মীয়ের বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে আসে। এ নিয়ে মুছার স্ত্রী সংবাদ সম্মেলন করতে চাইলে অজানা কারণে তা করা সম্ভব হয়নি।

গত বছরের ৫ জুন সকালে চট্টগ্রামের জিইসি মোড়ে সন্তানের সামনে মিতুকে হত্যার পর বাবুলকে নিয়ে কোন সন্দেহের কথাই আসেনি শ্বশুর পক্ষের কাছ থেকে। সন্তানদের নিয়ে তখন বাবুল ঢাকায় ছিলেন তাদের বাড়িতেই।

মাস খানেকের মধ্যে বাবুলকে ঢাকায় ডিবি কার্যালয়ে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদের পরও জামাতার পক্ষেই ছিলেন শ্বশুর। কিন্তু বাবুল সন্তানদের নিয়ে বাড়ি ছাড়ার পর তাকে নিয়ে মুখ খুলতে শুরু করেন মিতুর বাড়ির লোকজন।

অন্য নারীর সঙ্গে বাবুলের সম্পর্কের কথা বলতে থাকেন মোশাররফ। এর মধ্যে বাবুলের বাবার বাড়ির এলাকার বনানী বিনতে বসির বর্ণি নামে এক নারীর কথা আলোচনায় ওঠে।

একজন পুলিশ কর্মকর্তার স্ত্রীকে তার স্কুল পড়ুয়া ছেলের সামনে কার নির্দেশে কেন হত্যা করা হয়েছিল, সেই প্রশ্নের উত্তর এক বছর তদন্তের পরও দিতে পারেনি পুলিশ।

এ হত্যাকাণ্ডের পর স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এবং পুলিশ কর্মকর্তাদের বক্তব্য নিয়েও দেখা দেয় বিতর্ক। মামলা নিয়ে বাণিজ্যের অভিযোগে বদল করা হয় মামলার তদন্ত কর্মকর্তাকে।

মামলার তদন্ত কর্মকর্তা (আইও) চট্টগ্রাম নগর গোয়েন্দা পুলিশের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার (উত্তর) মো. কামরুজ্জামান বলছেন, তাদের তদন্ত চলছে এবং ‘ভালো অগ্রগতি’ আছে।

কিছু জায়গায় জট ছাড়াতে না পারার মধ্যেই চট্টগ্রামের পুলিশ কমিশনার ইকবাল বাহার বলছেন, তারা জুলাইয়ের মধ্যে আলোচিত এই মামলার অভিযোগপত্র জমা দিতে চান।

গত বছরের ৫ জুন চট্টগ্রামের জিইসি মোড়ে ওই হত্যাকাণ্ডের পর এক মাসের মধ্যে ছয়জনকে গ্রেফতার করে পুলিশ। দুইজন পুলিশের সঙ্গে কথিত ‘বন্দুকযুদ্ধে’ নিহত হন। কিন্তু যাকে পুলিশ ওই হত্যাকাণ্ডের ‘মূল পরিকল্পনাকারী’বলছে, সেই কামরুল ইসলাম শিকদার ওরফে মুছা এবং ‘হত্যাকাণ্ডে সরাসরি অংশ নেওয়া’কালুর হদিস গত এক বছরেও মেলেনি।

তদন্ত কর্মকর্তা কামরুজ্জামান বলেন, “আমরা তদন্ত করে যাচ্ছি। এটা কন্টিনিউয়াস প্রসেস।”

মুছা ও কালু বাদে সব আসামি গ্রেফতারের তথ্য তুলে সিএমপি কমিশনার ইকবাল বাহার বলেন, “যেটুকু ব্যর্থতা আছে তা উৎরে উঠার জন্য প্রাণপণ চেষ্টা করছি। হত্যাকাণ্ডের প্রকৃত কারণ উদঘাটনে মুছাকে পাওয়াটা আমাদের জন্য বেশি প্রয়োজন, এ জন্য আমরা অপেক্ষা করছি।

“বছর অতিক্রান্ত হয়ে গেছে, খুব বেশিদিন অপেক্ষা করাটা সমীচীন হবে না। যেহেতু চার্জশীট দিতে হবে, আমরা চাচ্ছি জুলাই মাসের মধ্যে এটা নিষ্পত্তি করতে।”

কিন্তু তদন্তের অগ্রগতি নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করে মিতুর বাবা মোশাররফ হোসেন আঙুল তুলেছেন জামাতা সাবেক পুলিশ কর্মকর্তা বাবুল আক্তারের দিকে।

বাবুলের অন্য দুই নারীর সঙ্গে সম্পর্কের যে অভিযোগ মিতুর পরিবার থেকে এখন করা হচ্ছে, সে বিষয়ে ইকবাল বাহার বলেন, “এমন যে কোন কর্মকাণ্ড, যেটি এ হত্যাকাণ্ডের সাথে সংশ্লিষ্ট, সেটিকে গুরুত্ব দিয়ে মিতু হত্যাকাণ্ডের তদন্তের সাথে নিয়ে আসব।”

তবে মিতু হত্যার তদন্তে এখনও বাবুল আক্তারের সম্পৃক্ততার কোন প্রমাণ পাওয়া যায়নি বলে জানান ইকবাল বাহার।

উল্লেখ্য, গত বছরের ৫ জুন ভোরে ছেলেকে নিয়ে স্কুলে যাওয়ার পথে নগরীর জিইসি মোড়ের ওআর নিজাম সড়কে নিজ সন্তানের সামনেই গুলি ও ছুরিকাঘাতে খুন করা হয় মাহমুদা খানম মিতুকে। ঘটনার পর খুনিদের তিনজন একটি মোটরসাইকেলে করে এবং অন্যরা হেঁটে ঘটনাস্থল ত্যাগ করে।

শুরুতে পুলিশ এ ঘটনার সঙ্গে জঙ্গিদের সংশ্লিষ্টতার বিষয়ে তদন্ত শুরু করে। কিন্তু হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত মোটরসাইকেলের মালিকানার সূত্র ধরে ২০ দিনের মাথায় পুলিশ রাংগুনিয়া থেকে ওয়াসিম, আনোয়ার ও শাহজাহানকে গ্রেফতার করে।

তারা এ ঘটনায় জড়িত থাকার কথা উল্লেখ করে আদালতে জবানবন্দি দেয় এবং জড়িত অন্যদের নাম উল্লেখ করে। এ ঘটনায় জড়িত নুরুন্নবী ও রাশেদ রাংগুনিয়ার রাণীরহাট এলাকায় ইটের ভাটায় পুলিশের ক্রসফায়ারে নিহত হয়।

পুলিশ হত্যাকাণ্ড ব্যবহৃত একটি পিস্তল নগরীর কালামিয়া বাজার এলাকার একটি রিকশার গ্যারেজ থেকে উদ্ধার করে। গ্রেফতার করে অস্ত্রের মালিক ও যুবলীগ নেতা এহতেশামুল হক ভোলা এবং তার সহযোগী মনির হোসেনকে। মনির জামিনে বের হলেও ভোলা এখনও কারাগারে রয়েছে। অস্ত্রটি মিতু হত্যার ঘটনায় ব্যবহৃত হওয়ার ব্যাপারে ভোলা আদালতে জবানবন্দি দিয়েছে।

সিটিজিসান.কম/রবি

Print This Post Print This Post