চট্টগ্রাম মহানগরে ১ বছরে ৮৪ খুন

আপডেট: ১৫ জানুয়ারী ২০১৭ ৯:০৭ পূর্বাহ্ন

chittagong

চট্টগ্রাম :: নগরীর বিভিন্ন এলাকায় গত বছর ৮৪টি হত্যাকান্ড ঘটেছে। এর মধ্যে সবচেয়ে আলোচিত খুনের ঘটনা হলো সাবেক পুলিশ সুপার বাবুল আক্তারের স্ত্রী মাহমুদা খানম মিতু হত্যা। তবে এর আগের বছরের চেয়ে গত বছর খুনের ঘটনা কমেছে। চট্টগ্রাম মহানগর পুলিশের (সিএমপি) এক পরিসংখ্যানে এ তথ্য পাওয়া গেছে।

সিএমপির কমিশনার ইকবাল বাহার বলেন, ২০১৬ সালের জানুয়ারি থেকে অক্টোবর পর্যন্ত চট্টগ্রাম মহানগরে হত্যাকাণ্ডের শিকার হয় ৭৭ জন। গড়ে প্রতি মাসে প্রায় আটজন। শেষ দুই মাসে খুনোখুনি কম হয়- নভেম্বরে তিনজন এবং ডিসেম্বর মাসে চারজন।

সিএমপি কমিশনার জানান, গত ২০১৫ সালে চট্টগ্রাম মহানগরে খুন হয়েছিল ১০৫ জন। সে হিসেবে ২০১৬ সালে খুনের ঘটনা কমেছে ২১টি। তবে সাবেক এসপি বাবুল আক্তারের স্ত্রী মিতু হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় পুলিশ প্রশাসনে অস্থিরতা বেড়েছে। ৫ জুনের এ হত্যাকাণ্ডের মূল আসামি মুছা গ্রেপ্তার না হওয়ায় এ মামলা রহস্যই থেকে গেছে।

মামলা ও গণমাধ্যমে প্রকাশিত খবরের সূত্রে দেখা যায়, মিতু হত্যা ছাড়া অন্যান খুনের ঘটনার নেপথ্যে ছিল পরকীয়া, অনৈতিক সম্পর্ক, পারিবারিক বিরোধ ও মাদকাসক্তি। ছিনতাইকারীদের হাতেও একাধিক খুনের ঘটনা ঘটেছে। মাদক ব্যবসা নিয়েও কিছু এলাকায় খুনোখুনি হয়েছে।

এ ছাড়া পারিবারিক কলহে খুনের পর বেশির ভাগ ঘটনা আত্মহত্যা বলে চালিয়ে দেয়ার অভিযোগ আছে। এসব রহস্যজনক মৃত্যুর ঘটনায় থানায় মামলা হয়েছে অপমৃত্যুর। পরে বেশির ভাগ অপমৃত্যুর মামলা তদন্তে দেখা যায়, আত্মহত্যা নয় সেগুলো ছিল খুন। ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন পাওয়াসহ নানা কারণে এসব মামলার রহস্য উদঘাটনেও সময়ক্ষেপণ হচ্ছে।

এসব হত্যাকাণ্ড পর্যালোচনা করে দেখা যায়, অনেক হত্যা মামলায় খুনিরা ধরা পড়েনি এবং সঠিক সময়ে তদন্ত শেষ হয়নি। আর এতে পার পেয়ে যাচ্ছে অপরাধীরা, বাড়ছে খুনের ঘটনা।

পুলিশের পরিসংখ্যানে জানা গেছে, গত বছরের সর্বশেষ হত্যাকাণ্ডটি ঘটে ২৫ ডিসেম্বর রাতে নগরীর হালিশহর থানার বিহারি কলোনিতে। সেখানে এক বিয়ের অনুষ্ঠানে ছুরিকাঘাতে সাইফুল ইসলাম (২৫) নামের এক যুবক খুন হন। এ সময় রকি (২৪) নামের আরো একজন আহত হয়। এ ঘটনায় দুই যুবককে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।

১১ ডিসেম্বর দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে নগরীর কোতোয়ালি থানা থেকে কয়েক শত মিটার দূরে জেনারেল পোস্ট অফিসের উল্টো দিকে ইব্রাহিম হোসেন মানিক (৩২) নামের এক স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতাকে গুলি করে হত্যা করা হয়। মানিক নগরীর সদরঘাট বাইলেনের আবু হানিফের ছেলে। ঘটনাস্থল থেকে রানা নামের এক ঘাতককে গ্রেপ্তার করা হয়।

এ হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় পরদিন ১২ ডিসেম্বর নিহতের স্ত্রী লুৎফুন নাহার বাদি হয়ে নগরীর কোতোয়ালি থানায় একটি হত্যা মামলা করেন। মামলায় ঘটনাস্থল থেকে গ্রেপ্তার হওয়া মোহাম্মদ রানাসহ ছয়জনের নাম উল্লেখ করে এবং অজ্ঞাতনামা আরো ৮-১০ জনকে আসামি করা হয়।

৯ ডিসেম্বর নগরের পাঁচলাইশ থানার পূর্ব নাছিরাবাদে খাদিজা বেগম জান্নাত (১৯) নামের এক গৃহকর্মীকে ধর্ষণের পর আটতলা থেকে ফেলে হত্যা করা হয়। জান্নাতের গৃহকর্তার ছেলে ফাওয়াদ ধর্ষণের পর প্রমাণ না রাখতে পরিকল্পিতভাবে এই হত্যাকাণ্ড ঘটায় বলে অভিযোগ রয়েছে।

এ ঘটনায় ১১ ডিসেম্বর চট্টগ্রামের অতিরিক্ত মহানগর হাকিম মোহাম্মদ সাহাদাৎ হোসেন ভূঁইয়ার আদালতে ফৌজদারি কার্যবিধির ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দেন একই বাসার গৃহকর্মী লায়লা বেগম (২০)। ঘটনার একমাত্র প্রত্যক্ষদর্শী হিসেবে তিনি এই জবানবন্দি দেন।

৬ ডিসেম্বর সকাল নয়টার দিকে নগরীর ডবলমুরিং থানার মনসুরাবাদ রেলওয়ের ওভারব্রিজের পূর্ব দিকে নালার পাশ থেকে মিজানুর রহমান (৪২) নামের এক পোশাককর্মীর লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। মিজানুর নগরীর মুরাদপুর এলাকায় একটি পোশাক কারখানার কর্মী ছিলেন। তিনি নগরীর টাইগার পাস এলাকায় রেলওয়ে কলোনিতে ভাড়া বাসায় থাকতেন। তার বাড়ি চাঁদপুরের কচুয়া উপজেলায়। এ ঘটনায় থানায় মামলা হয়েছে।

২০ নভেম্বর সকালে নগরের ডবলমুরিং থানার আগ্রাবাদ সিডিএ আবাসিক এলাকার ২৯ নম্বর সড়ক থেকে বস্তাবন্দি অবস্থায় ব্যবসায়ী জালাল উদ্দিন সুলতানের (৪৬) লাশ উদ্ধার করে পুলিশ।

মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা পিবিআই, চট্টগ্রামের পরিদর্শক সন্তোষ কুমার চাকমা জানান, জালালকে কৌশলে আটকে ৫০ লাখ টাকা দাবি করে কামাল নামের এক ব্যক্তি। টাকা দিতে অস্বীকার করায় জালালকে মুখে বালিশ চাপা দিয়ে খুন করা হয়। কামালকে গ্রেপ্তারের পর রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়।

২০ নভেম্বর নগরীর হালিশহর থানার মধ্য রামপুরা এলাকার আনন্দপুর প্রাথমিক বিদ্যালয়ের দ্বিতীয় শ্রেণির ছাত্র ইয়াছিনকে খুন করেন তার মামা। ইটের দেয়ালে মাথা ঠুকিয়ে ইয়াছিনকে খুন করা হয় বলে পুলিশের কাছে স্বীকার করেন ঘাতক মামা। হত্যাকাণ্ডের দিন গভীর রাতে মামা জুয়েলকে (৪০) আটক করা হয়।

১৮ নভেম্বর নগরীর হালিশহরে স্ত্রী ও তার প্রেমিক মিলে আব্দুল বাতেন প্রকাশ খোকন (৩৪) নামের একজনকে খুন করে। এ ঘটনায় স্ত্রী জেসমিন আক্তার (৩০) ও প্রেমিক আলাউদ্দিনকে (৩০) গ্রেপ্তার করে পুলিশ। রাতে খাবার শেষে বাতেন ঘুমিয়ে পড়লে পূর্বপরিকল্পনা মতো আলাউদ্দিনকে খবর দিয়ে বাসায় নেন জেসমিন। তারপর দুজন মিলে বাতেনের হাত-পা বেঁধে অণ্ডকোষ চেপে ধরে তাকে খুন করে বলে জানান পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত)।

এই সাত হত্যাকাণ্ডের আগে জানুয়ারি থেকে অক্টোবর পর্যন্ত ৭৭টি খুনের ঘটনা ঘটে। তবে বছর জুড়ে আলোচনায় ছিল সাবেক এসপি বাবুল আকতারের স্ত্রী মিতু হত্যা। ৫ জুন নগরীর জিইসি মোড় এলাকায় দুর্বৃত্তদের গুলি ও ছুরিকাঘাতে নিহত হন মাহমুদা খানম মিতু। এ ঘটনায় মিতুর স্বামী বাবুল আক্তার অজ্ঞাত পরিচয় তিনজনের বিরুদ্ধে পাঁচলাইশ থানায় মামলা করেন।

এ ছাড়া হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত অস্ত্র উদ্ধারের ঘটনায় ভোলা ও মনির হোসেনকে আসামি করে বাকলিয়া থানায় অস্ত্র আইনে আরেকটি মামলা করে পুলিশ। এ মামলায় গত ২৭ জুলাই আদালতে এ দুই আসামিকে অভিযুক্ত করে চার্জশিট দাখিল করা হয়। কিন্তু গত সাত মাসেও মিত্যু হত্যা মামলার তদন্ত শেষ হয়নি।

সিটিজিসান.কম/রবি

Print This Post Print This Post