‘অবৈধ বাংলাদেশিদের’ ওয়ার্ক পারমিট দেবার প্রস্তাব

আপডেট: ৯ মে ২০১৮ ১১:১১ পূর্বাহ্ন

সিটিজিসান, অনলাইন ডেস্ক :
আসামে আর মাস দেড়েকের মধ্যেই চূড়ান্ত নাগরিক তালিকা প্রকাশিত হওয়ার কথা – যা থেকে বেশ কয়েক লক্ষ মানুষের বাদ পড়ার আশঙ্কা সৃষ্টি হয়েছে, আর তাদের বেশির ভাগই বাঙালি মুসলিম।

আসাম এদের অবৈধ বাংলাদেশি হিসেবে চিহ্নিত করলেও বাংলাদেশ তাদের নিতে প্রস্তুত নয় – আর দুদেশের মধ্যে কোনও প্রত্যাবাসন চুক্তিও নেই।

ফলে এই লক্ষ লক্ষ তথাকথিত অবৈধ বিদেশিকে নিয়ে কী করা হবে, তা নিয়ে দিল্লির কেন্দ্রীয় সরকারের সাথে ভারতের উত্তরপূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যগুলোর গত সপ্তাহেই আলোচনা হয়েছে।

ঐ বৈঠকে একাধিক মুখ্যমন্ত্রী লাখ লাখ ‘অবৈধ বাংলাদেশিদের’ বৈধভাবে কাজের সুবিধা করে দেওয়ার জন্য প্রস্তাব করেছেন।

মেঘালয়ের মুখ্যমন্ত্রী কনরাড সাংমা বিবিসি বাংলাকে জানিয়েছেন, সম্প্রতি পররাষ্ট্রমন্ত্রী সুষমা স্বরাজের সঙ্গে বৈঠকে দেশের উত্তরপূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যগুলো এ নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেছে।

“এই ইস্যুটা অ্যাড্রেস করার জন্য একটা মেকানিজম লাগবেই – ফলে আমরা কেউ ইনার লাইন পারমিট, কেউ ওয়ার্ক পারমিটের কথা বলেছি। অবশ্য প্রতিটা প্রস্তাবেরই নানা সুবিধা-অসুবিধা আছে, কিন্তু এটা যে উপেক্ষা করা যাবে না তা নিয়ে কোনও সন্দেহ নেই।”

এমনকী, বিষয়টা মোকাবিলার জন্য বাংলাদেশের সঙ্গে আলোচনা দরকার বলেও মনে করছেন তিনি। মি সাংমা বলছেন, “ওই অঞ্চলের সার্বিক অর্থনৈতিক উন্নয়নের স্বার্থেই প্রয়োজনে নিয়মকানুনের কিছু পরিবর্তন করেও এই বিপুল সংখ্যক লোককে ওয়ার্ক পারমিট বা ওই জাতীয় কিছু দেওয়ার কথা ভাবা যেতে পারে।”ভারতের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা বোর্ডের সাবেক সদস্য ও বিএসএফের প্রাক্তন মহাপরিচালক প্রকাশ সিংও মনে করছেন, ওয়ার্ক পারমিট হল দুটো চরম রাস্তার মধ্যে একটা মাঝামাঝি সমাধান।

তিনি বলছেন, “একটা রাস্তা হল এই লোকগুলোকে ছুঁড়ে ফেলা, যা অবশ্যই নিষ্ঠুর ও মানবাধিকারের দৃষ্টিতে আপত্তিজনক। আর একটা রাস্তা হল ঠিক আছে তোমরা বিদেশি, থাকছ থাক – আমরা কিছুই করলাম না – যেটা দেশের সার্বভৌমত্বের সঙ্গে আপস করা।”

“কিন্তু এই দুটোর মাঝে একটা মধ্যপন্থা হতে পারে বিদেশি হিসেবে এদেশে দুবছর বা তিন বছর ওয়ার্ক পারমিট নিয়ে কাজ কর, থাকো আর মেয়াদ ফুরোলে ফিরে যাও!”
কিন্তু এখানে প্রশ্ন হল, পারমিট ফুরোলে তারা যাবেনটা কোথায়?

আসামের সিভিল সোসাইটি অ্যাক্টিভিস্ট ও অর্থনীতিবিদ জয়দীপ বিশ্বাস এই কারণেই বলছেন প্রস্তাবটা গ্রহণযোগ্য নয়।
অধ্যাপক বিশ্বাস বলছিলেন, “প্রস্তাবটা পুরনো, এক সময় প্রধানমন্ত্রী অটলবিহারী বাজপেয়ীও এই ওয়ার্ক পারমিট দেওয়ার কথা বলেছিলেন। এমনিতে মাইগ্র্যান্ট (অভিবাসী) ওয়ার্কারদের জন্য সারা বিশ্বেই ওয়ার্ক পারমিট স্বীকৃত একটি পন্থা – কিন্তু আসামের ব্যাপারটা একেবারেই স্বতন্ত্র!”

“এখানে সাতচল্লিশ বছর ধরেও যিনি এ রাজ্যে আছেন, যার নাম ভোটার তালিকাতেও আছে – আমি রাতারাতি তার নাগরিকত্বের দাবি খারিজ করে দিয়ে হাতে একটা ওয়ার্ক পারমিট ধরিয়ে দিলাম, এটা তো সম্পূর্ণ বেআইনি!

“ধরা যাক নাগরিক তালিকা থেকে পাঁচ লাখ মানুষ বাদ পড়লেন। এখন এই পাঁচ লাখ মানুষের নাগরিকত্ব কেড়ে নেওয়া হলে তারা কিন্তু রাষ্ট্রহীন নাগরিকেও পরিণত হবেন। বিশ্বের একটি অন্যতম বৃহৎ ও দায়িত্বশীল গণতন্ত্র হিসেবে ভারত কিছুতেই এতগুলো লোককে রাষ্ট্রহীন বানাতে পারে না … সেটা অন্যায়, অনৈতিক ও অবৈধ”, বলছিলেন জয়দীপ বিশ্বাস।

আসামে মুসলিমদের দল হিসেবে পরিচিত এআইইউডিএফের কার্যকরী সভাপতি ড: আদিত্য লাংথাসা অবশ্য বিষয়টাকে একটু ভিন্ন দৃষ্টিতে দেখছেন।

তিনি বিবিসিকে বলছিলেন, “ওয়ার্ক পারমিট তো একটা সমাধান হতেই পারে, কারণ আমেরিকা-ইউরোপের পশ্চিমা দেশগুলোও তো একই জিনিস করে। আর যারা বিদেশি তারা বিদেশি, তাদের নাগরিকত্ব দেওয়ার তো কোনও প্রশ্নই আসে না!”

ড: লাংথাসা আরও বলছেন, “এখানে তো বিদেশিদেরও এখন ধর্মের ভিত্তিতে ভাগ করা হচ্ছে। কিন্তু আমরা মনে করি, হিন্দু-খ্রিস্টান-মুসলিম সব ধর্মের বিদেশিরাই বিদেশি, তাদের নাগরিকত্ব পাওয়ার কোনও অধিকার নেই। আপনি বলুন তো আমেরিকা-ইউরোপ-অস্ট্রেলিয়া কোন দেশে এভাবে বিদেশিদের নাগরিকত্ব দেবে? হ্যাঁ, ওয়ার্ক পারমিট নিয়ে আপনি বড়জোর কাজ করতে পারবেন, সেটুকুই যথেষ্ট।”

কিন্তু এক্ষেত্রে এই ওয়ার্ক পারমিট তাদের না দেবে ভারতের, না দেবে বাংলাদেশের নাগরিক অধিকার। ফলে ওয়ার্ক পারমিটের প্রস্তাব গৃহীত হলে আসামের কয়েক লক্ষ তথাকথিত বিদেশি হয়তো কিছু সময়ের জন্য ভারতে কাজ করার সুযোগ পাবেন, কিন্তু একই সঙ্গে তাদের ওপর পাকাপাকিভাবে পড়ে যাবে অবৈধ অনুপ্রবেশকারীর ছাপ। সূত্রঃ বিবিসি

Print This Post Print This Post