এম.কে আনোয়ার’র অজান যত কথা

আপডেট: ২৫ অক্টোবর ২০১৭ ৫:০৬ অপরাহ্ন

অনলাইন ডেস্ক :
এম কে আনোয়ার। পুরো নাম মোহাম্মদ খোরশেদ আনোয়ার। বাংলাদেশের একজন বিশিষ্ট রাজনীতিবিদ এবং সাবেক উচ্চ-পদস্থ সরকারি আমলা। তিনি এম. কে. আনোয়ার’ নামে পরিচিত এবং পাকিস্তান ও বাংলাদেশ সরকারের বিভিন্ন উচ্চ-পদে দায়িত্ব পালন করেছেন। ১৯৩৩ সালের ১ জানুয়ারি কুমিল্লার হোমনার দেবীদ্বারে জন্মগ্রহণ করেন তিনি। ছোটকাল থেকেই তিনি ছিলেন খুবই মেধাবী। তার পিতার নাম মৃত আবিদ আলী।

১৯৫৬ সালে পাকিস্তান সিভিল সার্ভিসে যোগ দেয়ার মধ্য দিয়ে সরকারি চাকুরে হিসেবে পেশাজীবন শুরু হয় এম কে আনোয়ারের। ১৯৯০ সাল পর্যন্ত তার ৩৪ বছরের পেশাগত জীবনে তিনি ফরিদপুর ও ঢাকার ডেপুটি কমিশনার, জুটমিল কর্পোরেশনের সভাপতি, টেক্সটাইল মিল কর্পোরেশনের সভাপতি, বাংলাদেশ বিমানের সভাপতি এবং প্রশাসনে বিভিন্ন উচ্চপদে দায়িত্ব পালন করেন। প্রশাসনের সর্বোচ্চ পদ মন্ত্রিপরিষদ সচিব ছিলেন তিনি। ১৯৭২ থেকে ১৯৯০ পর্যন্ত তিনি প্রশাসনে বিভিন্ন উচ্চপদে পদে দায়িত্ব পালন করেছেন। সিএসপি কর্মকর্ত এম কে আনোয়ার ১৯৭১ সালে ঢাকা জেলার প্রশাসক ছিলেন।

৩৪ বছরের পেশাজীবনে যেমন সুনামের সঙ্গে দায়িত্ব পালন করেন, তেমনি রাজনীতিতে যোগ দিয়ে অল্পদিনেই হয়ে ওঠেন দলের গুরুত্বপূর্ণ নেতা। সজ্জন ও মেধাবী রাজনীতিবিদ হিসেবেও পরিচিত পান তিনি। পাশাপাশি রাজনৈতিক কর্মসূচিতে তাকে সরব দেখা গেছে মাঠে-রাজপথে।

১৯৯১ সালের নির্বাচনের আগে এম কে আনোয়ার বিএনপিতে যোগ দেন। ওই বছর অনুষ্ঠিত পঞ্চম সংসদ নির্বাচনে প্রথমবারের মতো সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন তিনি।

এরপর ২০০৮ সাল পর্যন্ত টানা পাঁচবার তিনি সাংসদ নির্বাচিত হন। পরে তিনি বিএনপি সরকারের বাণিজ্য, নৌ-পরিবহন এবং বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। সর্বশেষ ২০০১-২০০৬ মেয়াদে তিনি কৃষিমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন। তবে ২০১৬ সালে দলের ষষ্ঠ জাতীয় কাউন্সিলের পর গঠিত নতুন কমিটিতে কুমিল্লার এ নেতাকে রাখা হয় স্থায়ী কমিটির সদস্য হিসেবে।

তবে বিএনপির জ্যেষ্ঠ এই নেতাকে গত প্রায় দুই বছর ধরে রাজনীতিতে দেখা যায়নি। দশম সংসদ নির্বাচনের আগে সরকারবিরোধী আন্দোলনে সরাসরি মাঠে না থাকলেও নাশকতা, উস্কানিমূলক বক্তব্যের অভিযোগে বিভিন্ন স্থানে ২১টি মামলা হয় এম কে আনোয়ারের বিরুদ্ধে। একাধিকবার গ্রেপ্তার হয়ে জেলও খাটেন। প্রায় ছয় মাস জেল খেটে গত বছরের ১৯ ফেব্রুয়ারি মুক্তি পান তিনি। জামিনে মুক্তি পেয়ে উন্নত চিকিৎসার জন্য দিল্লি এবং সেখান থেকে হরিয়ানার মেদান্তা হাসপাতালে হৃদরোগ ও কিডনির চিকিৎসা নেন। চিকিৎসা নিয়ে দেশে আসার পর থেকে তার বেশির ভাগ সময় কাটছে এলিফেন্ট রোডের নিজের বাসায়। বঙ্গবন্ধু মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিসিন বিশেষজ্ঞ প্রফেসর এম আব্দুল্লাহর তত্ত্বাবধানে নিয়মিত চিকিৎসা নেন।

সোমবার (২৩ অক্টোবর) দিবাগত রাত ১টা ৪০ মিনিটে রাজধানীর এলিফেন্ট রোডের নিজ বাসায় তিনি ইন্তেকাল করেন (ইন্নালিল্লাহি…রাজেউন)। এই নেতা অনেক দিন ধরে বার্ধক্যজনিত নানা রোগে ভুগছিলেন বলে জানান বিএনপির মিডিয়া উইংয়ের কর্মকর্তা শায়রুল কবির খান। তাঁর বয়স হয়েছিল ৮৫ বছর।

দলের প্রবীণ এই নেতার মৃত্যুতে শোকপ্রকাশ করেছেন বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া ও মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানাতে তিনি এম কে আনোয়ারের বাসায় যাবেন।

Print This Post Print This Post